পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ ট্রাম্পের, পাত্তাই দিচ্ছে না রাশিয়া
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭:৪৬ পিএম, ২রা আগস্ট ২০২৫

তবে কি ইতিহাসে এটাই কি প্রথম কোনও ঘটনা হতে যাচ্ছে যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বাগবিতণ্ডা পারমাণবিক উত্তেজনার সূচনা করছে? রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভের এক পোস্টে ক্ষুব্ধ হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি পারমাণবিক অস্ত্রবাহী দু’টি সাবমেরিন রাশিয়ার আরও কাছাকাছি সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই পদক্ষেপে মস্কো কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে? আমরা কি আমেরিকা ও রাশিয়ার মাঝে পারমাণবিক অচলাবস্থার পথে এগোচ্ছি? এটা কি তবে ইন্টারনেট যুগের ১৯৬২ সালের কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পুনরাবৃত্তি?
রাশিয়ার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া দেখে তা মনে হচ্ছে না। রুশ সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রাম্পের ঘোষণাকে বেশ হালকাভাবে নিয়েছে। রাশিয়ার এক সামরিক ভাষ্যকার দেশটির সংবাদমাধ্যম মস্কোভস্কি কমসোমোলেটসকে বলেছেন, ‘‘ট্রাম্প তার ক্ষোভের ঝাঁজ মেটাচ্ছেন।’’
দেশটির সাবেক এক লেফটেন্যান্ট জেনারেল দৈনিক কোমারস্যান্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ট্রাম্পের সাবমেরিন সংক্রান্ত বক্তব্য একেবারে অর্থহীন বাগাড়ম্বর। এভাবেই তিনি আনন্দ পান। দেশটির আরেক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেছেন, ‘‘ট্রাম্প আসলে সাবমেরিন নিয়ে কোনও নির্দেশ দেননি বলে আমি নিশ্চিত।’’
আরও পড়ুন: চীনা অস্ত্রে সুকৌশলে যেভাবে ভারতীয় বিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান
কোমারস্যান্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালেও উত্তর কোরিয়াকে সতর্ক করার জন্য কোরীয় উপদ্বীপে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী দু’টি সাবমেরিন পাঠিয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু এর কিছুদিন পরই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন তিনি।
তাহলে কি অদ্ভুতভাবে, ট্রাম্পের এই সাম্প্রতিক সাবমেরিন মোতায়েনও যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার শীর্ষ বৈঠকের পূর্বাভাস? ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির রাশিয়া সম্পাদক স্টিভ রোসেনবার্গ বলেছেন, আমি অতদূর যাব না। তবে রুশ কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া বেশ চমকপ্রদ।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। ক্রেমলিনের পক্ষ থেকেও আসেনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও আসেনি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও প্রতিক্রিয়া আসেনি।
এমনকি রাশিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন আমেরিকার কাছাকাছি অবস্থান নিচ্ছে; এমন কোনও ঘোষণাও দেখা যায়নি। এর মানে হতে পারে, হয়তো মস্কো এখনও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং কী সিদ্ধান্ত নেবে সেই বিষয়ে ভাবছে। অথবা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপে মস্কো প্রতিক্রিয়া জানানোর কোনও প্রয়োজনই মনে করছে না।
আরও পড়ুন: রাশিয়ায় ইউক্রেনের ড্রোন হামলা, নিহত ৩
রুশ সংবাদমাধ্যমের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে, দ্বিতীয়টিই সত্য। গত কয়েকদিন ধরে মেদভেদেভের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক বাগবিতণ্ডায় অংশ নিয়েছেন ট্রাম্প।
রাশিয়াকে ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে ৫০ দিনের সময়সীমা কমিয়ে দুই সপ্তাহেরও কমে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নামিয়ে আনার পর মেদভেদেভ এক পোস্টে বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত আল্টিমেটামের খেলা খেলছেন... ট্রাম্প। প্রত্যেক বারের নতুন আল্টিমেটাম একটি হুমকি এবং যুদ্ধের দিকে এক ধাপ অগ্রসর হওয়ার সামিল।
এর জবাবে ট্রাম্প লেখেন, ‘‘মেদভেদেভকে বলেন তিনি একজন ব্যর্থ সাবেক প্রেসিডেন্ট। তিনি এখনও ক্ষমতায় আছেন বলে মনে করেন। তাকে সাবধানে কথা বলতে বলেন। তিনি অত্যন্ত বিপজ্জনক এলাকায় প্রবেশ করছেন।’’
এর পরের পোস্টে সোভিয়েত ইউনিয়নের তৈরি স্বয়ংক্রিয় পারমাণবিক আক্রমণ ব্যবস্থা ‘ডেড হ্যান্ড’র কথা উল্লেখ করেন মেদভেদেভ। হোয়াইট হাউসের প্রধান যে এই হুমকিকে ভালোভাবে নেননি, সেটা পরিষ্কার।
২০০৮ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন মেদভেদেভকে তুলনামূলক উদারপন্থী নেতা হিসেবে মনে করা হতো। তার বিখ্যাত এক উক্তি ছিল, স্বাধীনতা না থাকার চেয়ে থাকা ভালো।
পরবর্তীতে তিনি আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠেন। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘পশ্চিমা-বিরোধী ও যুদ্ধংদেহী’ পোস্টের জন্য পরিচিতি পেয়েছেন। তবে বেশিরভাগ সময়ই এসব পোস্ট তেমন নজর কাড়েনি। কারণ তাকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র হিসেবে দেখা হতো না।
এবার তিনি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের নজরে এসেছেন। শুধু নজরেই নন, যেন ট্রাম্পের চামড়ার নিচে গিয়েই বিঁধেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কোনও পোস্ট অপছন্দ করাটা ভিন্ন কথা। আমরা সবাই কোনও না কোনও সময় তা করেছি।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের শুল্ক কমায় ভারতের পোশাক বাজারের শেয়ারে দরপতন
কিন্তু মেদভেদেভের পোস্ট ট্রাম্প এতটাই অপছন্দ করেছেন যে, জবাবে পারমাণবিক অস্ত্রবাহী সাবমেরিন পর্যন্ত মোতায়েন করতে হয়েছে।
ট্রাম্প এমন করলেন কেন?
সংবাদমাধ্যম নিউজম্যাক্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘মেদভেদেভ পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে কিছু বাজে কথা বলেছেন। যখন আপনি পারমাণবিক শব্দটা ব্যবহার করেন, তখন আমার চোখ জ্বলে ওঠে। আমি বলছি, আমাদের সাবধান হতে হবে। কারণ এটি চূড়ান্ত হুমকি।’’
দীর্ঘদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পারমাণবিক হুমকি দিয়ে আসছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মেদভেদেভ। এটা নতুন কিছু নয়। তবে এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার, মেদভেদেভের সাম্প্রতিক পোস্টগুলো ট্রাম্প খুবই ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছেন এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
এখানে কি কোনও কৌশল কাজ করছে? ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার বিষয়টি বড় এক বৈশিষ্ট্য। ব্যবসা কিংবা রাজনীতি—সবখানেই তিনি অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রতিপক্ষকে হতবাক করে দেন। আর তিনি সেটি করেন, কখনও আলোচনার আগে, কখনও আলোচনার মাঝেই।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করা নিয়েও ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন কৌশল নিয়ে থাকতে পারেন। এমনকি হঠাৎ করে এই সাবমেরিন মোতায়েনের সিদ্ধান্তও সেই কৌশলেরই অংশ হতে পারে। সূত্র: বিসিবির রাশিয়া-বিষয়ক সম্পাদক স্টিভ রোসেনবার্গের লেখা নিবন্ধ।
এমএল/