মামলার জালে থমকে গেছে কাস্টমসের পণ্য ধ্বংস কার্যক্রম
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
বারবার নিলামে তুলেও বিক্রি করতে না পারা ১৮৮ কনটেইনার পণ্য ধ্বংস কার্যক্রম থমকে গেছে। আমদানিকারকদের মামলা ও রমজান মাসে কার্যক্রম পরিচালনায় কাস্টমস কর্মকর্তাদের আপত্তির কারণে শুরু করা যায়নি পণ্য ধ্বংস কার্যক্রম।
যদিও গত ৪ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ, মাছ, আপেল, মাল্টা, মাছের খাবার, শস্য বীজ, লিকুইড ড্রিংকস, ম্যান্ডারিনসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য ধ্বংসের কথা ছিল। পণ্যগুলো পচে বন্দরের ভেতরের পরিবেশ নষ্ট হবার কারণে দশদিনের মধ্যে সম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রাও ঠিক করেছিল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
১৮৮ কনটেইনার অবিক্রিত পণ্য ধ্বংস হবে ৪ এপ্রিল, চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্যগুলো আমদানি করেছিলেন ব্যবসায়ীরা। বার বার নোটিশ পাঠানোর পরেও আমদানিকারকের কাছ থেকে কোন সাড়া পায়নি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে নিলামে তোলার পরেও পণ্যগুলোর বিষয়ে কোন কূল কিনারা করা সম্ভব হয়নি। এভাবে অবিক্রিত অবস্থায় পড়ে ছিল ১৮৮ কনটেইনার পণ্য। কনটেইনারের ভেতরে পচে গেছে অধিকাংশ পণ্য। পেঁয়াজ, মাছ, আপেল, মাল্টার মত পণ্যগুলো পচে বন্দরের অভ্যন্তরে পরিবেশ নষ্ট করছিল। তাই নগরের হালিশহরের বেটার্মিনাল এলাকায় বেড়িবাঁধের পাশে মাটির নিচে পণ্যগুলো চাপা দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। তবে রমজান মাসে পণ্য ধ্বংসে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ঘোর আপত্তি এবং ধ্বংসযোগ্য পণ্যের উপর আমদানিকারকের মামলা থাকায় পণ্যগুলো আর ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি। ফলে পণ্যগুলো বন্দরের ইয়ার্ডেই পড়ে আছে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার (নিলাম শাখা) আলী রেজা হায়দার বলেন, আমরা প্রথমদিকে ২৮ মার্চ পণ্যগুলো ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। পরে আমরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৪ মার্চ পণ্য ধ্বংসের সময় নির্ধারণ করি। তবে রোজায় পণ্য ধ্বংস কার্যক্রম পরিচালনায় আমাদের অভিযোগ ছিল। পাশাপাশি আমরা যেসব পণ্যগুলো ধ্বংসের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম সেগুলোর ব্যাপারে আমদানিকারকের মামলা আছে। পণ্য ধ্বংসের উদ্যোগ নেয়ার সময় প্রথম তালিকায় থাকা প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে আমরা মামলা সংক্রান্ত কোন তথ্য পাইনি। তবে পরে জানতে পারি পণ্যগুলোর ব্যাপারে মামলা আছে এবং তা আদালতে বিচারের প্রক্রিয়াধীন। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কোন পণ্য ধ্বংস করতে পারিনা। তাই আমরা পণ্যগুলো ধ্বংস করতে পারিনি। আমরা আগামীকাল পণ্য ধ্বংস কমিটির সদস্যরা মিলে এ ব্যাপারে একটা মিটিং করবো। তবে ঈদের পর পরই আমরা পণ্যগুলো ধ্বংসের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিব।
এর আগে গত বছরের মার্চ মাসে ২৯৮ কনটেইনারে থাকা ৬ হাজার মেট্রিকটন পণ্য ধ্বংস করেছিল কাস্টমস। সে সঙ্গে গতবছরের ডিসেম্বরে সুনামগঞ্জের লাফার্জ হোলসিম কারখানায় নিয়ে জিওসাইকেল পদ্ধতিতে প্রায় ৯ হাজার কেজি রাসায়নিক পণ্য ধ্বংস করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে নতুন করে ধ্বংসযোগ্য রাসায়নিক পণ্য বন্দরে নেই বলে জানিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, আমদানি পণ্য ৩০ দিনের মধ্যে খালাস না করলে আমদানিকারককে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য খালাসের ব্যবস্থা না করলে ওই পণ্য বিক্রির জন্য নিলামে তোলা হয়। বার বার নিলামে তুলে বিক্রি না হলে অথবা পচে বিক্রয় অযোগ্য হয়ে পড়লে তা ধ্বংসের সিদ্ধান্ত নেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এসএ/