কলকাতায় পিকে হালদারের বিপুল সম্পত্তি, বাড়িই আছে ২০টি


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


কলকাতায় পিকে হালদারের বিপুল সম্পত্তি, বাড়িই আছে ২০টি

ভারতে পিকে হালদারের নামে-বেনামে থাকা বেশ কয়েকটি কোম্পানির খোঁজ মিলেছে। শুক্রবার (১৩ মে) পিকে হালদারের সম্পদের খোজে পশ্চিমবঙ্গে দিনভর অভিযান চালিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট- ইডি। 

অভিযানে পিকে হালদারের ব্যক্তিগত আইনজীবি সুকুমার রায়ের বাড়ি তল্লাশি করে জব্দ করা হয় গুরুত্বপূর্ণ নথি ও উদ্ধার করা হয় নগদ অর্থও। কলকাতার তদন্তকারি সংস্থা বলছে, তদন্ত শেষেই, জব্দ করা অর্থের উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলা যাবে। 

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের বৈধ সম্পদের খোজে শুক্রবার দিনভার পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় ভারতের তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট- ইডি।

পশ্চিমবঙ্গের কমপক্ষে ৯টি স্থানে একযোগে অভিযান চলে। এ সময় আরও অভিযান চলে পি কে হালদারের সহযোগী সুকুমার মৃধা, প্রীতিশ কুমার হালদার, প্রাণেশ কুমার হালদার এবং তাদের সহযোগীদের বাড়িতে। সুকুমার মৃধার বাড়ি থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ন নথি জব্দ করা হয়।

এছাড়া কয়েকটি অভিজাত বাড়িসহ বিপুল সম্পত্তির খোঁজ পেয়েছেন। বাড়িগুলো থেকে জমির দলিলসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক নথি উদ্ধার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পিকে হালদারের ২০ থেকে ২২টি বাড়ি আছে বলে প্রাথমিক তথ্য পাওয়া গেছে।

যাদের বাসায় অভিযান পরিচালনা করা হয় তারা সবাই বাংলাদেশি নাগরিক। তাদের নামে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে সম্পত্তির খোঁজও মিলেছে। এদের মধ্যে সুকুমার মৃধা ছিলেন পলাতক পিকে হালদারের ব্যক্তিগত আয়কর আইনজীবী ও ক্যাশিয়ার। 

তার মাধ্যমেই পিকে হালদার ভারত সহ বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করে। দুদকের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে সুকুমার মৃধা এখন কারাগারে আছেন। 

কলকাতা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অশোকনগর পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে সুকুমার মৃধার বিশাল বিলাসী বাড়ির সন্ধান পেয়েছে ভারতের ইডি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, মৃধাকে তাঁরা মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে চিনতেন। 

পিকে হালদার ও সুকুমার মৃধা অশোকনগরে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী। ইডি ধারণা করছে, এই দু'জনের দীর্ঘদিনের যোগসাজশে এনআরবির বিপুল অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে।

সুকুমার মৃধা বাংলাদেশে বসবাস করলেও পশ্চিমবঙ্গের তার যাতায়াত ছিলো মাছের ব্যবসায়ী হিসেবে। সেই সূত্র ধরেই ভারতে গিয়ে তিনি ভুয়া পরিচয়ে কিছু কোম্পানি খুলে পিকে হালদারের টাকা পাচার করেন ও বিপুল সম্পত্তি কেনেন।

জানা গেছে, পরিচয় গোপন করে শিব শংকর হালদার নামে ভারতে নাগরিকত্বও নিয়েছেন পিকে হালদার। সেই পরিচয়ে সেখানে রেশন কার্ডও সংগ্রহ করেছেন এবং বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন। সুকুমারের মাধ্যমে পাচার করা টাকা ও সম্পদের মালিকও শিব শঙ্কর ওরফে পিকে হালদার বলেই ধারনা করা হচ্ছে। 

ভারতী পল্লি এলাকার পাশে নবজীবন পল্লিতে বিলাসবহুল বাগানবাড়ি পাওয়া গেছে পিকে হালদারের আত্মীয় প্রণব কুমার হালদারের। ঠিক তার পাশেই আরেক বিলাসবহুল বাগানবাড়ি সুকুমার মৃধার। এলাকাবাসী সুকুমার মৃধার বিলাসী জীবন দেখে সব সময়ই সন্দেহ করতো।

এই এলাকাতেই একাধিক সম্পত্তি ক্রয় করেছে হালদার-মৃধা জুটি। এর মধ্যে শুক্রবার শুধু অশোকনগরেই তিন বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। যার একটিতে এতদিন একাই থাকতেন সুকুমার মৃধার জামাতা সঞ্জীব হালদার।

পিকে হালদারের আরেক সহযোগী স্বপন মিত্রের বাড়িতেও অভিযান চলেছে। অশোকনগরের একই এলাকার বাসিন্দা স্বপন মিত্র অর্থ পাচারের কাজে অন্যতম অভিযুক্ত। তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একাধিক নথি পাওয়া গেছে। এরপর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে আটক করে ইডি।

অশোকনগরের গণ্ডি ছাড়িয়ে কলকাতার বাইপাস সংলগ্ন এলাকা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার অভিজাত এলাকায় পিকে হালদার চক্রের একাধিক বাড়ি ও অফিস রয়েছে। সেখানেও তল্লাশি চালিয়েছে ভারতের অর্থ-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনী এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি)।

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে হাজার কোটি টাকা অর্থ আত্মসাৎ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এরইমধ্যে ৩৪টি মামলা করেছে দুদক। 

তবে এখনো পলাতক আছেন আলোচিত পিকে হালদার। তাকে ধরতে এরিমধ্যে ইন্টারপোলের সহায়তাও চেয়েছে দুদক।

এসএ/