একসঙ্গে মাধ্যমিক পাশ করলেন বাবা-ছেলে
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২
বাবা-ছেলে একসঙ্গে মাধ্যমিক পাশ করলেন ভারতের কর্ণাটকের মহম্মদ রহমতুল্লাহ। বাবাকে নিয়ে দাদার স্বপ্ন পূরণ করলো নাতি মহম্মদ ফারিন।
মহম্মদ রহমতুল্লাহ'র গল্পটা এমন, বাবা চেয়েছিলেন অভাবের সংসারেও ছেলেটা অন্তত মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ুক। সংসারের দুর্দশা দেখে ছেলে মনে করেছিল, এখন সংসারে টাকা পয়সা দিয়ে সাহায্য করা দরকার। পড়াশুনো পরেও করা যাবে। তাই পড়াশশোনা আর করা হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত সন্তানের সাহায্যে বাবার সেই স্বপ্ন পূরণ করলেন ওই ব্যাক্তি। এতদিনে অবশ্য বছর ২৫ কেটে গিয়েছে। গল্পটাও বদলে গিয়েছে। বাবাকে নিয়ে দাদার যে স্বপ্ন ছিলো তা পূরণ করেছে নাতি। বাবাকে পড়ানো এবং পাশ করানোর ভার কাঁধে তুলে নেয় সে। বুধবার দাদা-বাবা-ছেলে একসঙ্গে তিন প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণ হলো ভারতের কর্ণাটক মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এবছরের পরীক্ষার ফলাফলে।
মহিশূরের বাসিন্দা মহম্মদ রহমতুল্লাহ ৩৩৩ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করেছেন। এর আগে তিনবার পরীক্ষায় বসে পাশ করতে না পারা রহমতুল্লাহ এবারের রেজাল্ট উৎসর্গ করেছেন বাবাকে। আর কৃতিত্ব দিয়েছেন ছেলে মহম্মদ ফারিনকে। এদিন একই পরীক্ষায় ৯৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে ফারিন। নিজের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি বাবাকেও পড়িয়েছে অঙ্ক, ইংরেজি, ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান। শিখিয়েছে কীভাবে উত্তর লিখতে হয়।
বুধবার (২৫ মে) দু’-দু’টি সুখবর পাওয়ার পর বছর বিয়াল্লিশের রহমতুল্লাহর চোখের জল বাঁধ মানেনি। বাবা-ছেলের কাহিনী শুনে আনন্দাশ্রু বাঁধ মানেনি প্রতিবেশী, পরিজন, পরিচিত অপরিচিত অনেকেরই। মহীশূরের রহমতুল্লাহ চারবারের চেষ্টায় দশ ক্লাস পাশ করলেন। করোনাকালে সরকার ঘোষণা করেছিল, গ্রেস মার্ক দেওয়া হবে। তাতেও গতবছর ৩১৬ নম্বরে আটকে যান। তার আগে একবার মাত্র ৭৮ পেয়েছিলেন। আর ২০০৪ এ প্রথমবারের চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পরই আশাই ছেড়ে দিয়েছেন।
রহমতুল্লাহ জানিয়েছেন, ‘তাকে তাড়া করে বেড়াত বাবার কথাগুলি। যদি অন্তত ক্লাস টেন পাশ করি। শেষের দুবার পরীক্ষায় বসেন ছেলের প্রেরণায়। ২০২১-এ ফেল করার পর ছেলেই বাবাকে পড়ানোর ভার নেয়। উৎসাহ দেয়, পরীক্ষায় বসতেই হবে। ছেলের উৎসাহ, প্রেরণার কাছে হার মানেন মহীশূর শহরে কাপড়ের দোকানের কর্মচারী এই ব্যক্তি। কাজ শেষে বাড়ি ফিরে বইখাতা নিয়ে ছেলের সঙ্গে বসতেন নিয়ম করে।’
বুধবার ফল বেরনোর পর দেখা গেল, বাবা ছেলে দুজনেই সসম্মানে উত্তীর্ণ।
এসএ/