পায়রা বন্দর আজ নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


পায়রা বন্দর আজ নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতার ফলে দেশের তৃতীয় সমুদ্র বন্দর পায়রা বন্দর আজ নতুন সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের গভীরতা ৬.৩ মিটারে উন্নীত করেছি, যার ফলে নিয়মিতভাবে বাণিজ্যিক জাহাজ এই বন্দরে গমনাগমন করতে পারছে। ইতোমধ্যে এই বন্দরে ১৬৯টি সমুদ্রগামী জাহাজ আগমন করেছে, যার মাধ্যমে প্রায় ৩৫৪ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। 

নৌপ্রতিমন্ত্রী খালিদ চৌধুরী এমপি বুধবার ১৯ (জানুয়ারি) ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পায়রা বন্দরের জন্য  দু’টি টাগবোট নির্মাণের লক্ষ্যে  বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের সাথে চুক্তিপত্র স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করেন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমডোর আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী এবং খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর এম শামসুল আজিজ।

খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড ১৮ মাসে টাগবোট দু’টি নির্মাণ করবে। ৭০ টন বোলার্ড পুল বিশিষ্ট দু’টি টাগবোট নির্মাণে ব্যয় হবে ১৩৫ কোটি টাকা। টাগবোট দু’টির দৈর্ঘ্য ৩৭.৭০ মিটার, প্রস্থ ১১ মিটার, ড্রাফট ৫.০০ মিটার এবং  টনেজ ২৮০ টন। টাগবোট দু’টির প্রতিটিই এককভাবে একটি বাণিজ্যিক জাহাজকে ভিড়াতে সক্ষম হবে।

এছাড়া সার্চ এন্ড রেসকিউ, বাণিজ্যিক জাহাজকে অগ্নিনির্বাপণে সহায়তা করা, দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজকে টেনে নিরাপদে নিয়ে আসা, উত্তাল সমুদ্রে পাইলট ট্রান্সফারে সহায়তা করাসহ নানাবিধ অত্যাবশ্যকীয় কাজে টাগবোটগুলি ব্যবহত হবে। এতে পায়রা বন্দরের ধারাবাহিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
 
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ড্রেজিং-এর ফলে চ্যানেলটির গভীরতা ১০.৫ মিটারে উন্নীত করে বন্দরটিতে ৪০,০০০ টনের জাহাজ ভিড়ানোর সক্ষমতা তৈরী হবে। এর ফলে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এই বন্দর হতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সকল স্থানে দ্রুততম সময়ে বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল ও ভুটানেও বাণিজ্যিক পণ্য পরিবহন করা সম্ভব হবে। ফলে আমদানী-রপ্তানী পণ্যের পরিবহন ব্যয় কমে আসবে, শিল্পকারখানার কাঁচামালের দাম কমবে, দেশের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে আরো  প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে এবং ফলশ্রুতিতে বৈদেশিক বাণিজ্যে ব্যাপক জোয়ার আসবে এবং দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক গতিসঞ্চার হবে।

পাশাপাশি এই বন্দরকে ঘিরে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপকভাবে শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক অবকাঠামো ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে ওঠা, স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং নগরায়ন হওয়ায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বহু মানুষের কর্মসংস্থান হবে এবং তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। সেই কাঙ্খিত আগামীর দিকে এগিয়ে যাওয়ার পথে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে আজ এই বন্দরের জন্য দু’টি অত্যাবশ্যকীয় জলযান টাগবোট নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর হলো। তিনি বলেন, একটি বন্দর তার আগমনকারী জাহাজগুলিকে যেসব অত্যাবশ্যকীয় ও অপরিহার্য সার্ভিস দিয়ে থাকে তার মধ্যে টাগ সার্ভিস অন্যতম। আলোচ্য টাগবোট দুটি পায়রা বন্দরের বহরে সংযুক্ত হলে বন্দর কর্তৃপক্ষ বন্দরে গমনাগমনকারী জাহাজগুলিকে এই অত্যাবশ্যকীয় ও অপরিহার্য সার্ভিসটি অনেক বেশী সহজ, দ্রুততার সাথে প্রদান করতে সক্ষম হবে, যার ফলে বন্দর ব্যবহারকারীরা উপকৃত হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে, ২০৪১ সালের মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার ভিশন অনুযায়ী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে আমরা সক্ষম হব-ইনশাআল্লাহ।

বন্দরে একটি কন্টেইনার টার্মিনাল, একটি বাল্ক টার্মিনাল, একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল, একটি প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, বিদ্যুৎ প্লান্ট, মডার্ন সিটি, বিমান বন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলাসহ ১৯টি কম্পোনেন্টের কাজ চলমান রয়েছে। আগামী ২০২৩ সনে বন্দরকে বিশ্বমানের একটি আধুনিক বন্দর এবং ২০৩৫ সালের মধ্যে অর্থনীতির সহায়ক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। 

এসএ/