আনোয়ারায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাইড্রোলিক ড্যামে সুফল মেলেনি


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


আনোয়ারায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাইড্রোলিক ড্যামে সুফল মেলেনি

আনোয়ারা প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় ৫নং বরুমচড়া ইউনিয়নের ভরাশঙ্খ খালে প্রায় ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে দেশেরসর্বপ্রথম হাইড্রোলিক এলিভেটর ড্যাম। আনোয়ারার কৃষি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার কথা থাকলেও উপজেলার বিভিন্নজায়গায় বেড়িবাঁধ আর স্লুইচগেইট ভাঙনের ফলে এলিভেটর ড্যামের উল্লেখযোগ্য সুফল মেলেনি বলে জানিয়েছেন উপজেলাকৃষি কর্মকর্তাসহ স্থানীয় কৃষকরা। 

উপজেলার কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ড্যামটি নির্মাণের ফলে আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া, বারখাইন, হাইলধর, বটতলী, চাতুরী ও সদর ইউনিয়নের প্রায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারণসহ প্রায় ১৩ হাজার ৫০০ টন বাড়তিফসল উৎপাদন হওয়ার কথা। যার বাজারমূল্য প্রায় ২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা, যা আনোয়ারায় বোরো মৌসুমে ফসল উৎপাদনেবড় ভূমিকা রাখবে। তা ছাড়া শুকনো মৌসুমে (জানুয়ারি-মে) জোয়ারের সঙ্গে আগত লবণাক্ত পানির প্রভাব থেকে প্রায় ১০কিলোমিটার এলাকার ফসল ও গাছপালা রক্ষা করা সম্ভব হবে এবং আনোয়ারা উপজেলায় কৃষি উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

এদিকে গত ৩ বছরের কৃষি অধিদফতরের ফসল উৎপাদনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৯ সালে আউশ ধান রোপণকরা হয়েছিল ১ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। ওই মৌসুমে আউশের ফলন হয় ৩ হাজার ৫৬৫ টন। পরবর্তী বছর ২০২০ সালেআউশ রোপণ করা হয়েছিল ৩ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয় ৯ হাজার ৬৩২ টন। একই বছরের ১১ অক্টোবরএলিভেটর ড্যাম চালু হওয়ার পর ২০২১ সালে ৩ হাজার ৬৫ হেক্টর জমিতে আউশ রোপণ করে ফলন হয় ৬ হাজার ৮১৫ টন, যাএলিভেটর ড্যাম নির্মাণ করার আগের সময়ের চেয়ে কম।

২০১৯ সালে আমন রোপণ করা হয়েছিল ৬ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। সে মৌসুমে আমন ফসল উৎপাদন হয় ১৯ হাজার ১৯৪টন। পরবর্তী বছর ২০২০ সালে আমন রোপণ করা হয়েছিল ৭ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে এবং ফসল উৎপাদন হয় ২১ হাজার৩৮৭ টন। একই বছরের ১১ অক্টোবর এলিভেটর ড্যাম চালু হওয়ার পর ২০২১ সালে ৭ হাজার ৪৮৫ হেক্টর জমিতে আমন রোপণকরা হয় যা, বিগত বছরের তুলনায় তেমন একটা বেশি না।

অন্যদিকে বোরো মৌসুমে এলিভেটর ড্যাম চালু করার আগে ২০১৯ সালে ৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হলেওএলিভেটর ড্যাম চালু হওয়া পর তা কমে ৫ হাজার ৫০০ হেক্টরে নেমে এসেছে। আর উৎপাদন নেমে এসেছে ২৪ হাজার ৩৮১ থেকে২২ হাজার ১০৬ টনে।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রমজান আলী জনবাণীকে বলেন, মাত্র কয়েক মাস হলো আমি এই উপজেলায় যুক্ত হয়েছি। এখানকারএলিভেটর ড্যাম এবং এর কার্যকারিতা সম্পর্কে তেমন ধারণা হয়ে ওঠেনি। সরেজমিন গিয়ে বিগত দিনের কাজ পর্যালোচনা করেকৃষি নিয়ে নতুন পরিকল্পনার চক আঁকা হবে। সব মিলিয়ে উপজেলার কৃষির ভালো দিকগুলো কাজে লাগিয়ে কৃষিতে বড় ভূমিকারাখবে বলে জানান তিনি।

এলিভেটর ড্যামের উপসহকারী প্রকৌশলী আজমানুর জনবাণীকে বলেন, যে ভরাশঙ্খ খালে ড্যামটি নির্মাণ করা হয়েছে, সেই খালটির উৎসহচ্ছে মুরলী খাল। এর একদিক দিয়ে আসত মিঠা পানি আর বিপরীত দিক দিয়ে বঙ্গোপসাগর ও সাঙ্গু থেকে লবণাক্ত পানি। তাইড্যামটি নির্মাণের লক্ষ্য ছিল লবণাক্ত পানি আটকে দেওয়া ও মিঠা পানি সংরক্ষণ করা। উপজেলার উত্তর পাশে নয়া রাস্তারমাথায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ দেওয়া হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার ভয়ে পাউবো পানি ছাড়েনি, যার কারণেমিঠা পানি ভরাশঙ্খ খালে পৌঁছতে পারেনি। তাই চাষাবাদে সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এবার ইউএনও একটা কমিটি করেছেন, যার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সময় সময় স্লুইচগেইট খুলে পানি আসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। এভাবে মিঠা পানি পাওয়া গেলেচাষাবাদ বৃদ্ধি হবে।

এসএ/