আট মাসেই স্বাক্ষরজ্ঞান থেকে নবম শ্রেণীর পরীক্ষার্থী পৌর প্যানেল মেয়র সাবিয়া


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


আট মাসেই স্বাক্ষরজ্ঞান থেকে নবম শ্রেণীর পরীক্ষার্থী পৌর প্যানেল মেয়র সাবিয়া

সৈয়দপুর প্রতিনিধি: অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন হলফনামা দিয়ে নির্বাচন করে পৌর প্যানেল মেয়র নির্বাচিত হওয়ার মাত্র আট মাসের মাথায়ই অস্টম শ্রেণী পাশ করাসহ নবমের সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছেন একজন জনপ্রতিনিধি। অবাক করা এই বিরল ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে। কোন কারিশমায় এমনটা সম্ভব হয়েছে তা নিয়ে কৌতুহল ছড়িয়ে পড়েছে এলাকাজুড়ে। প্রশ্ন উঠেছে হলফনামায় দেয়া তথ্য না পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, কোনটা সঠিক?

বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড ঢাকা এর অধীনে ভোকেশনাল ট্রেডের শিক্ষার্থীদের নবম শ্রেনীর সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ওই পরীক্ষায় সৈয়দপুর শহরের গোলাহাটস্থ রাজ্জাকিয়া গফুরিয়া দারুস সুন্নাত দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে উপজেলার ৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১৬৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করছেন। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো সৈয়দপুর আসমতিয়া দাখিল (ভোক) মাদরাসা, ছমির উদ্দিন আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, বাঙ্গালীপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও আইসঢাল খিয়ারপাড়া আলিম (ভোক) মাদরাসা। 

১৯ ডিসেম্বর রোববার সকাল ১১ টায় সরেজমিনে ওই কেন্দ্রে গেলে দেখা যায় সৈয়দপুর আসমতিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সাথে পরীক্ষা দিচ্ছেন সৈয়দপুর পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর এবং প্যানেল মেয়র-৩ সাবিয়া সুলতানা ওরফে সবিয়া বেগম। তাঁর রোল নম্বর ১০২৬৯৫, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৭৭০১০৮০৯৭৬। তিনি কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন। 

এসময় পরীক্ষা কেন্দ্রের সচিব পুলিন চন্দ্র দাস জানান, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নিয়মানুযায়ী সরকারী প্রতিষ্ঠানসমুহে যে কোন ট্রেডে নবম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য বয়স সর্বোচ্চ ১৭ বছর। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভোকেশনাল বিভাগে বয়সসীমা নেই। 

যেকেন বয়সের শিক্ষার্থী ভর্তি হয়ে পড়ালেখা করতে পারবেন। তবে উভয় ক্ষেত্রেই অবশ্যই অষ্টম শ্রেণী পাশ হতে হবে। ২০০৯ সালের পূর্বে অষ্টম শ্রেণী পাশের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রত্যয়নপত্র বা নম্বরপত্র এবং উক্ত সালের পরে পাশ হলে জেএসসি বা জেডিসি সার্টিফিকেট থাকতে হবে। 

অথচ বিগত ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সৈয়দপুর পৌরসভা নির্বাচনে নোটারী পাবলিক কর্তৃক প্রদত্ত হলফনামায় প্যানেল মেয়র-৩ সাবিয়া সুলতানা নিজেকে একজন স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এটাই তার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা।

তিনি যদি ওইসময় অষ্টম শ্রেণী পাশ করে থাকেন তাহলে তা কেন গোপন করেছেন? আর যদি সত্যিই তখন পর্যন্ত অষ্টম শ্রেণী পাশ না করেন তাহলে কিভাবে মাত্র আট মাসেই তিনি অষ্টম শ্রেণী পাশ করলেন এবং নবম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে মোবাইলে সাবিয়া সুলতানা বলেন, এব্যাপারে আমি কিছুই বলবোনা। সাক্ষাতে কথা হবে বলে কল কেটে দেন। এরপর সাক্ষাতের জন্য বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি মোবাইল রিসিভ করেননি। তাই তার অবস্থান না জানানোর কারনে এবং বাসায় ও পৌরসভায় গিয়েও তাঁকে না পাওয়ায় তার আর কোন মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। 

সৈয়দপুর আসমতিয়া দাখিল (ভোক) মাদরাসার সুপারিন্টেনডেন্ট কাজী শাহ আনোয়ারুল হক মোবাইলে জানান, বর্তমানে প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর মাদরাসা খুললে অফিসে আসেন সাবিয়া সুলতানার অষ্টম শ্রেণী পাশ সনদ দেখবেন। তিনি শিশুকালেই অষ্টম শ্রেণী পাশ করেছেন এবং তা দিয়েই নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়েছেন। 

কোন মাদরাসা বা স্কুল থেকে এবং কত সালে অষ্টম শ্রেণী পাশ করেছেন জানতে চাইলে কাজী বলেন, সব কিছু কি মুখস্থ বলা সম্ভব। তাছাড়া শিক্ষার্থীই তো এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে। পরীক্ষার্থী বলছেন না জানালে, কাজী পাল্টা বলেন সেটা তার ব্যাপার। আর হলফনামায় অষ্টম শ্রেণী পাস উল্লেখ করেননি কেন, তা তিনিই ভালো জানেন। তবে আমার সাথে সময়মত দেখা করবেন। 

সৈয়দপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রেহেনা ইয়াসমিন জানান, এই বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবোনা। পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব অথবা ইউএনও এর কাছে জেনে নিতে পারেন। 

এদিকে সাবিয়া সুলতানার সাথে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী রোজিনা বেগম বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা গোপন করে তিনি রাষ্ট্র তথা জনগণের সাথে প্রতারণা করেছেন। মিথ্যে হলফনামা দিয়ে বেআইনিভাবে ভোট করেছেন। এমন মানুষের কাছে এলাকাবাসী কিভাবে সঠিক সেবা পাবেন? 

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে অবশ্যই নির্বাচন অফিস ও মাদরাসা কর্তৃপক্ষ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে তাকে এমন অপরাধে সহযোগীতা করেছেন। তাই তিনি বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে উর্ধ্বতন দায়িত্বশীলদের পদক্ষেপ দাবী করেছেন।