সিন্ডিকেটের মুনাফার খেলায় ভোক্তাদের পুড়ছে পকেট

বাংলাদেশে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানো যেন কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর পুরোনো অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি, উৎসব বা আমদানিতে বিলম্ব যেকোনো অজুহাতেই তারা একত্রিত হয়ে সিন্ডিকেট গঠন করে বাজারকে অস্থির করে তোলেন। এবার সেই খেলায় যোগ হয়েছে কাঁচামরিচ।
বিজ্ঞাপন
দেশের বিভিন্ন জেলায় উৎপাদিত কাঁচামরিচ ১২০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে কিনে ঢাকায় এনে ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছেন ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়। অতিবৃষ্টির বাহানায় তারা দাম বাড়িয়ে নিজেদের পকেট ভারী করছেন, আর লোকসানের ভার পড়ছে কৃষকদের কাঁধে।
বগুড়া, গাইবান্ধা ও রংপুর কাঁচামরিচ উৎপাদনের প্রধান অঞ্চল। সেখানে পাইকারি বাজারে মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে, কিন্তু রাজধানীতে এসে সেই দাম দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিশ্ববাজারে তেলের দাম নিয়ে বড় সুখবর
বিজ্ঞাপন
ব্যবসায়ীরা বলছেন, “ভারত থেকে আমদানি বন্ধ” ও “সরবরাহ কম” এই কারণেই দাম বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা বলছেন, এসব কেবল অজুহাত; আসল কারণ সিন্ডিকেটের মুনাফার খেলা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শ্যামবাজার ও সূত্রাপুরে ঘুরে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ আগে ৩২০ টাকায় ওঠা কাঁচামরিচ এখন বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকায়। তারপরও ক্রেতারা এটিকে “অস্বাভাবিক দাম” বলে মনে করছেন।
শ্যামবাজারে কেনাকাটা করতে আসা সোহাগ মিয়া বলেন, “বৃষ্টি হোক বা উৎসব, ব্যবসায়ীরা সব সময়ই সুযোগ খোঁজেন দাম বাড়ানোর। আজও ২৫০ টাকায় মরিচ কিনেছি, যেখানে কয়েকদিন আগেও ছিল ১৫০ টাকা।”
বিজ্ঞাপন
গাইবান্ধা ও বগুড়ার প্রান্তিক কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, তারা যে মরিচ ১৬০ টাকায় বিক্রি করছেন, সেটি ব্যবসায়ীরা এনে ৩০০ টাকায় বিক্রি করছেন।
কৃষকদের ভাষায়, “কষ্ট করি আমরা, লাভ নেয় বেপারিরা।” অনেক স্থানে বৃষ্টিতে মরিচগাছ নষ্ট হয়ে গেছে, ফলে কৃষকরা এখন হাইব্রিড জাতের মরিচ লাগাতে শুরু করেছেন।
বিজ্ঞাপন
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন জানায়, বাজারে কাঁচামরিচের দাম নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান চলছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর নির্ধারিত করেছে কাঁচামরিচের সর্বোচ্চ দাম ১২০ টাকা কেজি। কিন্তু বাস্তবে সেই দরে কোনো বাজারেই পণ্য বিক্রি হচ্ছে না।
ক্যাবের সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, “দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। বাজার তদারকি বাড়ালে সিন্ডিকেটের এই দৌরাত্ম্য কমানো সম্ভব।”
বিশ্লেষকদের মতে, প্রতি বছর একই অজুহাতে কাঁচামরিচসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। অথচ প্রকৃত উৎপাদন বা সরবরাহের ঘাটতি ততটা নয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক ও সাধারণ ভোক্তা। আর মুনাফা যাচ্ছে সিন্ডিকেটের হাতে।