ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানের নবজাগরণের পথিকৃৎ: হযরত কেবলা শাহ আহসানুল্লাহ (রহ.)

ব্রিটিশ ভারতে মুসলমানরা রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্রে শিক্ষা, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকভাবে পশ্চাৎপদ হয়ে পড়ে। ফলে সমাজ ও রাষ্ট্রে বাঙালি মুসলমানরা হয়ে পড়ে গৌণ। এর পেছনে শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অনিহা তৈরি করতে খোদ মুসলমানরাই ফতোয়াবাজি করে। ঠিক সেই সময় মশুরীখোলা দরবার শরীফের হযরত কেবলা শাহ মুহাম্মদ আহসানুল্লাহ (রহ.) তাঁর মুরিদ ও খলিফা শামছুল উলামা আবু নাছের ওয়াহেদ (রহ.)কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখতে উদ্বুদ্ধ করেন। শুধু তাই নয়, সেই যুগে আর্থিক সহযোগিতাও করেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি সামাজিকভাবে ব্রিটিশ ভারতের মুসলমানদের সংগঠিত করতে বহুভাষাবিদ ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ (রহ.)র সঙ্গে আনজুমানে ইশাআতে ইসলাম প্রতিষ্ঠায় যুগপৎ ভূমিকা পালন করেন। ১৯২০ সাল হতে ১৯২৬ সাল পর্যন্ত এই সংগঠনের ব্যাপক কর্মযজ্ঞ ছিল।
এছাড়াও তিনি ১৮৭১ সালে মাদরাসা, ১৯১০ সালে মসজিদ প্রতিষ্ঠাসহ নিজের সমস্ত সম্পত্তি ১৯১২ সালে ইসলামের কল্যাণে ওয়াকফ লিল্লাহ করে যান। তিনি ছিলেন আপনাদমস্তক জনহিতৈষী। ব্রিটিশ ভারতে হযরত কেবলা (রহ.) ছিলেন সর্বজনগ্রহণযোগ্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।
মশুরীখোলা দরবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত কেবলা শাহ মুহাম্মদ আহসানুল্লাহ (রহ.)র ওফাত শতবার্ষিকী উপলক্ষে দরবার শরীফের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী ইসালে সাওয়াব মাহফিলে সভাপতির বক্তব্যে বর্তমান গদ্দিনেশীন পীর সাহেব হাফেজ মাওলানা মুফতি শাহ মুহাম্মদ সাইফুজ্জামান (মা.জি.আ.) এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, হযরত কেবলা নিজে রাজনীতি না করলেও তিনি ছিলেন রাজনীতি সচেতন মানুষ। ভারতবর্ষের আজাদী এবং মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র আবাসভূমি প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে উদ্বুদ্ধ করেন।
হযরত কেবলা (রহ.)র প্রতিষ্ঠিত মশুরীখোলা দরবার দুই শতাব্দীকাল ধরে এই বঙ্গের মুসলমানদের কল্যাণে নিরবচ্ছিন্নভাবে নানাবিধ কর্মযজ্ঞের মাধ্যমে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। আর পিছনে ছিলেন হযরত কেবলার দুই সাহেবজাদা ও সুযোগ্য নাতি আল্লামা শাহ মুহাম্মদ আহছানুজ্জামান (রহ.)র ৫৩ বছরের নিরলস শ্রম।
দুই দিনব্যাপী মশুরীখোলা দরবার শরীফের উদ্যোগে আয়োজিত ইসালে সাওয়াব মাহফিল উপলক্ষে ওয়াজ মাহফিল, কুরআন খতমসহ নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়। দারুল উলুম আহসানিয়া কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ আল্লামা আবদুল কুদ্দুস ও শিক্ষক মাওলানা নিয়ামুল ইসলামের সঞ্চালনায় মাহফিলের প্রথম দিন জিকির-আযকার পরিচালনা করেন হাফেজ মাওলানা সৈয়দ বদরুদ্দোজা জুনায়েদ।
বিজ্ঞাপন
পবিত্র কুরআন-হাদিসের আলোকে আলোচনা করেন হযরত কেবলার খলিফাদের দরবারের প্রতিনিধিগণ— ভারতের বিহারের পাটনার খানকায়ে এমাদিয়া কালান্দারিয়ার সাজ্জাদানশীন আল্লামা সৈয়দ মিছবাহুল হক এমাদী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. শাহ কাওসার মোস্তফা আবুলউলায়ী, দারুল উলুম আহসানিয়া কামিল মাদরাসার সভাপতি ড. সৈয়দ শাহ এমরান, হযরত কেবলা শাহ আহসানুল্লাহ (রহ.) কমপ্লেক্সের সভাপতি শাহ মোহসেনুজ্জামান, মশুরীখোলা শাহ সাহেববাড়ি জামে মসজিদের খতিব মাওলানা সৈয়দ মাঈনুদ্দিন হেলাল, মশুরীখোলা আনজুমানে আহসানিয়ার তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মাওলানা তাওহিদুল ইসলাম।
দ্বিতীয় দিবসে আলোচনা করেন দারুল উলুম আহসানিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি আবু জাফর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কাদেরিয়া তৈয়্যেবিয়া কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখুল হাদিস আল্লামা মুফতি আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক, বেতাগী আস্তানা শরীফের পীর সাহেব আল্লামা গোলামুর রহমান আশরাফ শাহ, দারুল উলুম আহসানিয়া কামিল মাদরাসার সহ-অধ্যাপক মাওলানা আবুল বাশার, মুদাররিস মাওলানা মাকসুদুল হাসান আল আবেদী, ঘরগাঁও দরবার শরীফের শাহজাদা মাওলানা আহসান আব্দুল্লাহ। জিকির মাহফিল পরিচালনা করেন নিজ পানুয়া দরবার শরীফের পীর সাহেব সৈয়দ বদরুল কামাল।
প্রতি বছরের মতো এবারও লতিফিয়া হাফিজিয়া মাদরাসার হাফেজ ছাত্রদের পাগড়ি প্রদান করা হয়। মাহফিলে আগত কয়েক হাজার মুসল্লির জন্য দরবারের পক্ষ থেকে তাবারুকের ব্যবস্থা করা হয়। হযরত কেবলার সুযোগ্য নাতি আল্লামা শাহ মুহাম্মদ আহছানুজ্জামান (রহ.)র ছোট সাহেবজাদা ও মশুরীখোলা দরবার শরীফের বর্তমান গদ্দিনেশীন পীর সাহেব হাফেজ মাওলানা মুফতি সাইফুজ্জামান (মা.জি.আ.)র দেশ ও জাতির কল্যাণে মুনাজাত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দুই দিনের ইসালে সাওয়াব মাহফিলের পরিসমাপ্তি হয়।
বিজ্ঞাপন
লেখক: হাফেজ মাওলানা মুফতি শাহ সাইফুজ্জামান (মা.জি.আ.)








