কর্মবিরতিতে স্বাস্থ্য সহকারীরা, টিকাসেবা বন্ধ

নিয়োগবিধি সংশোধন, বেতন বৈষম্য নিরসন ও টেকনিক্যাল পদমর্যাদা প্রদানসহ ৬ দফা দাবিতে কর্মবিরতিতে দেশের স্বাস্থ্য সহকারীরা।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (১ অক্টোবর) থেকে অনির্দিষ্টকালের এ কর্মবিরতি শুরু করেছেন তারা। 'বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন' এর ব্যানারে এই কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছে স্বাস্থ্য সসহকারীরা।
এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে স্মারকলিপি প্রদান করে তারা কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন।
স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতির ফলে সারা দেশে ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ ইপিআই টিকাদান কেন্দ্রে মধ্যে প্রতিদিন ১৫ হাজার কেন্দ্রে টিকাদান বন্ধ রয়েছে। এতে টিকা গ্রহণের সেবা থেকে বঞ্ছিত হচ্ছেন প্রায় দেড় লাখ মা ও শিশু।
বিজ্ঞাপন
এ ছাড়া কর্মবিরতির ফলে আসন্ন ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া টাইফয়েড টিকাদান কার্যক্রমও পরবে অনিশ্চয়তার মুখে। এতে টিকা থেকে বঞ্ছিত হতে পারে প্রায় ৫ কোটি শিশু-কিশোর।
স্বাস্থ্য সহকারীদের নেতারা বলছেন, আমরা সারাদেশের ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকগণ বার বার শুধু কর্তৃপক্ষের আশার বাণী শুনে যাচ্ছি। এ বার আর আশার বাণীতে বিশ্বাসী নয়, বাস্তবায়ন চাই। আমাদের ৬ দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ার পর্যন্ত একজন্য স্বাস্থ্য সহাকারীও কর্মস্থলে ফিরব না।
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশ হেলথ এসিস্ট্যান্ট এসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় দাবি আদায় পরিষদের সদস্য সচিব ফজলুল হক চৌধুরী জানান, ১৯৭৪ সালে থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে তার অধিনে প্রতি ৪ হাজার জনগোষ্ঠির জন্য একজন স্বাস্থ্য সহকারীর পদ সৃষ্টি করে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের শুভ সূচনা হয়। পরবর্তীতে প্রতি ৬ হাজার জনগোষ্ঠির জন্যে একজন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ দেয়া হয়। এ স্বাস্থ্য সহকারীদের একক ভাবে ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় দেশে থেকে গুটি বসন্ত নির্মূল,ম্যালিরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রিত হয়।
ডায়রিয়া,ধনুর্ষ্টংকার,অন্ধত্ব দূরিকরণসহ সংক্রামক-অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রন, শিশুমৃত্যু, মাতৃমৃত্যু হ্রাস, পোলিও নিমূর্ল তথা পোলিও মুক্ত বাংলাদেশ গঠনে বিশ্বব্যাপি সুনাম অর্জন করেন তারা। বসন্ত ও ম্যালিরিয়া রোগ নিয়ন্ত্রে তাদের এই সফলতায় ১৯৭৯ সালে ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ চালু করা হয় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী (ইপিআই)।
এ কর্মসূচীর আওতায় দেশের ১ লাখ ২০ হাজার আউটরিচ রুটিন টিকাদান কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সহকারীগন বর্তমানে ১০টি মারাত্বক সংক্রামিত রোগ ( শিশুদের যক্ষ্মা, পোলিও, ধনুষ্টংকার, হুপিংকাশি, ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফুয়েঞ্জার, নিউমোনিয়া ও হাম-রুবেলা)র টিকা এবং ১৫ থেকে ৪৯ বছর বয়সের কিশোরী ও মহিলাদের ৫ ডোজ টিটি টিকা-প্রদান করে আসছেন। এ টিকা দেওয়ার পূর্বে নির্ধারিত দিনের আগে বাড়ী বাড়ী গিয়ে বাধ্যতামূলক রেজিষ্ট্রেশন করছেন এ স্বাস্থ্য সহকারীরাই।
বিজ্ঞাপন
তাছাড়া জন্ম-মৃত্যু রেজিষ্ট্রেশন,নবজাতক শিশু রেজিষ্ট্রেশন,গর্ভবতী রেজিষ্ট্রেশন,যক্ষ্মা রোগী সনাক্তকরণ,কফ পরীক্ষার জন্য রোগী প্রেরণ, ডটস পদ্ধতিতে যক্ষ্মা রোগের ঔষধ খাওয়ানো এবং উঠান বৈঠক,মা সমাবেশের মাধ্যমে নারী প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা স্যানিটেশনসহ বিভিন্ন প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছেন।
কমিউনিটি ক্লিনিক চালুর গোড়ার দিকে সরকারি নির্দেশে স্থানে নির্বাচন,স্থানীয় জনগন থেকে বিনা মূলে জমিদানে উদ্বুদ্ধকরণ,নির্মাণ তদারকিসহ এ স্বাস্থ্য সহকারীরাই নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে।
২০১১ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকে সিএইচসিপি নিয়োগর পূর্বে স্বাস্থ্য সহকারীরা কমিউনিটি ক্লিনিক সেবা প্রদানসহ বর্তমানেও সপ্তাহে ৩দিন কমিউনিটি ক্লিনিকে সেবা প্রদান করে যাচ্ছেন।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও বছরের দুই বার জাতীয় ভিটামিন “এ” প্লাস ক্যাম্পেইনের মাধ্যেমে ৬ মাস থেকে ৫ বছর পর্যন্ত শিশুদেরকে ভিটামিন এ ট্যাবলেট খাওয়ানো মাধ্যমে ক্যাম্পেইন পালন করে থাকে। প্রাথমিক,মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় ক্ষুদে ডাক্তার টিম গঠন ও কৃমিনাশক ট্যাবলেট বিতরণ এবংএইচপিভি টিকা প্রদান করেন।
২০১৩ সালে ২৫ জানুয়ারী ৯ মাস থেকে ১৫ বছর কম বয়সের ৫ কোটি ২০ লাখ শিশুকে এক ডোজ হাম-রুবেলা টিকা সফল ভাবে প্রদান করে। আর এ সব টিকা প্রদানের জন্য দেশের ৬৪ জেলায় নিয়োজিত আছে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শক । এ জন্য তাদের মাসিক ভ্রমণ ভাতা বাবদ মাসে দেয়া হয় মাত্র ৬০০ টাকা। বেতন পান সর্বসাকল্যে ৯ হাজার ৭০০ টাকা।