আমি শিবের ভক্ত, বিষ গিলে ফেলবো : নরেন্দ্র মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের তীব্র সমালোচনার জবাবে বলেছেন, তিনি ভগবান শিবের ভক্ত এবং কটূক্তির বিষ নিজেই গিলে নেবেন। মোদি বলেন, জনগণই তার ‘প্রভু’ এবং ‘রিমোট কন্ট্রোল’, তাই তাদের সামনে নিজের কষ্টের কথা প্রকাশ করা তার জন্য অপরিহার্য।
উত্তর-পূর্ব ভারতের তিন রাজ্য—মণিপুর, আসাম ও বিহারে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আসামের দারাংয়ে এক সমাবেশে অংশ নিয়ে মোদি কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। সমাবেশে তিনি বলেন, “আমি জানি, কংগ্রেসের পুরো ইকোসিস্টেম আমাকে নিশানা করবে এবং বলবে, মোদি আবারও কাঁদছে। জনগণই আমার ভগবান। যদি আমি তাদের সামনে আমার কষ্টের কথা না বলি, তবে কোথায় বলব? তারা আমার প্রভু, আমার দেবতা এবং আমার রিমোট কন্ট্রোল। আমার অন্য কোনও রিমোট কন্ট্রোল নেই।”
মোদি এই মন্তব্য করেছেন বিহারের আসন্ন নির্বাচনী প্রচারণার সময় কংগ্রেস ও আরজেডির যৌথ মঞ্চ থেকে তার বিরুদ্ধে কটূক্তি হওয়ার পর। কংগ্রেস বারবার দাবি করেছে, ওই সময় তাদের কোনও নেতা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন না। এরপর মোদির প্রয়াত মা হীরাবেনকে নিয়ে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কংগ্রেসের তৈরি করা একটি ভিডিও ঘিরে দেশজুড়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে।
দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, মোদির ‘রিমোট কন্ট্রোল’ প্রসঙ্গ রাজনৈতিক ইতিহাসে তাৎপর্যপূর্ণ। এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে নিয়ন্ত্রণের অভিযোগে সাবেক ইউপিএ চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধীর সমালোচনা করেছিলেন মোদি। সেই সময়ও তিনি ‘রিমোট কন্ট্রোল’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।
মোদি অভিযোগ করেছেন, কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গেকেও গান্ধী পরিবার ‘রিমোট কন্ট্রোল’-এর মতো পরিচালনা করছে, যদিও কংগ্রেস বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তিনি বলেন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তাকে কংগ্রেস সভাপতি খাড়গের একটি মন্তব্য দেখিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকার আসামের কিংবদন্তি গায়ক ভূপেন হাজারিকাকে ভারতরত্ন দেওয়ার পর ওই মন্তব্য করা হয়েছিল।
মোদি বলেন, “যেদিন ভারত সরকার দেশের এই মহান সন্তান এবং আসামের গর্ব ভূপেন হাজারিকাকে ভারতরত্নে ভূষিত করল, কংগ্রেস সভাপতি বলেছিলেন, মোদি গায়ক এবং নৃত্যশিল্পীদের পুরস্কার দিচ্ছেন।” ২০১৯ সালে এই মন্তব্য করে বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন খাড়গে। পরে তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ড. হাজারিকা দেশের অন্যতম প্রতিভাবান শিল্পী ছিলেন। সঙ্গীত, কবিতা, সাহিত্য এবং সিনেমা—সবক্ষেত্রেই তার অসাধারণ প্রতিভা ছিল।
প্রধানমন্ত্রী মোদি আরও বলেন, ১৯৬২ সালের ভারত-চীন যুদ্ধের পর দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু জানিয়েছিলেন, উত্তর-পূর্বের মানুষের ক্ষত এখনও সারেনি। বর্তমান কংগ্রেস প্রজন্ম সেই ক্ষতের ওপর লবণ ছিটিয়ে দিচ্ছে। তিনি তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “দশকের পর দশক ধরে আসাম শাসন করেছে কংগ্রেস। ক্ষমতায় থাকার পরও কংগ্রেস বিগত ৬০-৬৫ বছরে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর মাত্র তিনটি সেতু নির্মাণ করেছে। অথচ, আমাদের সুযোগ দেয়ার মাত্র এক দশকে আমরা ছয়টি নতুন সেতু তৈরি করেছি। স্বাভাবিকভাবেই জনগণ আমাদের প্রচেষ্টার স্বীকৃতি দেবে এবং আশীর্বাদ করবে।”
মোদি সমাবেশে আরও উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন এবং নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি দেশবাসীর কাছে নিজের কষ্ট ও প্রতিকূল পরিস্থিতি প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে দেশের উন্নয়নে তার সরকারের কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন।
সূত্র: এনডিটিভি
বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
