বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক হতে যাচ্ছেন ইলন মাস্ক?

বিশ্বের ইতিহাসে এবার হয়তো এক নতুন অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে। টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইলন মাস্ক যদি শেয়ারহোল্ডারদের প্রস্তাবিত নতুন বেতন প্যাকেজে অনুমোদন পান, তাহলে তিনিই হবেন বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) টেক্সাসে টেসলার শেয়ারহোল্ডারদের ভোটেই নির্ধারিত হবে মাস্কের ভাগ্য। অনুমোদন পেলে তার টেসলায় থাকা ১৩ শতাংশ মালিকানা দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে, যা মোট মূল্য ছাড়িয়ে যেতে পারে এক ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার—যা ১৭০টিরও বেশি দেশের বার্ষিক জিডিপির চেয়ে বড়।
বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা সংগঠনগুলো একে বলছে ‘নৈতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য’। তাদের দাবি, এত বিপুল অর্থ যদি মানবিক সহায়তায় ব্যয় করা হতো, তাহলে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের চিত্র পাল্টে যেত।
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির হিসাবে, বছরে ৪০ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করলেই ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়া সম্ভব—অর্থাৎ মাস্কের সম্ভাব্য সম্পদের অর্ধেকই যথেষ্ট।
টেসলা বলছে, মাস্কের এই বেতন কাঠামো আসলে তার নেতৃত্বে অর্জিত সাফল্যের প্রতিফলন। গত এক দশকে টেসলার বাজারমূল্য ৮.৫ ট্রিলিয়ন ডলার এবং ইবিআইটিডিএ ৪০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ানোর লক্ষ্যেই এই প্যাকেজ প্রস্তাব করা হয়েছে। কোম্পানির বোর্ডের চেয়ারম্যান রবিন ডেনহল্ম বলেছেন, “ইলন ছাড়া টেসলা তার মূল্য হারাবে।”
তবে সমালোচকরা বলছেন, এটি করপোরেট দুনিয়ায় এক বিপজ্জনক নজির তৈরি করবে, যা ভবিষ্যতে বেতনের বৈষম্য আরও বাড়িয়ে দেবে।
বিজ্ঞাপন
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মাস্কের মোট সম্পদ প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনীর (তাকে বাদ দিয়ে) সম্মিলিত সম্পদ ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার।
অক্সফামের মতে, দিনে গড়ে ছয় বিলিয়ন ডলার করে বাড়ছে বিলিয়নিয়ারদের সম্পদ। অথচ বিশ্বব্যাংকের হিসেবে এখনো বিশ্বের ৯ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।
মার্কিন রাজনীতিক বার্নি স্যান্ডার্স দীর্ঘদিন ধরে ধনীদের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপের আহ্বান জানিয়ে আসছেন। তার মতে, কেউ ৯৯৯ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত রাখতে পারে, বাকিটা রাষ্ট্রের হওয়া উচিত। নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড, স্পেন ও আর্জেন্টিনার মতো দেশ ইতোমধ্যে ধনীদের ওপর সম্পদ কর চালু করেছে।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি মাস্ক বলেছেন, টেসলার ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে তার রোবট প্রকল্প ‘অপটিমাস’-এর ওপর। এই প্রযুক্তিই টেসলাকে বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে রূপ দিতে পারে বলে দাবি তার।
তবে নরওয়ের সার্বভৌম তহবিলসহ কয়েকটি বড় বিনিয়োগকারী এই বেতন প্যাকেজে ‘না’ ভোট দিয়েছে। অন্যদিকে টেসলা বলছে, এটি ধাপে ধাপে কার্যকর হবে—যাতে শেয়ারহোল্ডারদের নজরদারি বজায় থাকে।
বিজ্ঞাপন
ইলন মাস্ক ইতিহাস গড়তে চলেছেন—কেউ দেখছেন প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সাফল্য হিসেবে, আবার কেউ বলছেন পুঁজিবাদের চরম বৈষম্যের প্রতীক। এখন বিশ্ব তাকিয়ে টেক্সাসের ভোটকক্ষে—যেখানে সিদ্ধান্ত হবে, তিনি কি আসলেই হবেন বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়ন ডলারের মানুষ?








