দুবাই এয়ারশোর দুর্ঘটনায় বিপাকে ভারত, বড় বিপদ বিশ্ববাজারে

দুবাই এয়ারশোতে ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি যুদ্ধবিমান তেজস বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি দেশটির প্রতিরক্ষা রপ্তানি পরিকল্পনায় বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এয়ারশোর মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে এমন দুর্ঘটনা ভারতের বিমানশিল্পের ভাবমূর্তিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে—এমনটাই জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সংঘটিত এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পাইলট উইং কমান্ডার নমাংশ স্যল। দুর্ঘটনার সঠিক কারণ এখনো নিশ্চিত নয়।
মার্কিন বিশ্লেষক ডগলাস এ. বার্কি এ বিষয়ে বলেন, দুবাইয়ের মতো বিশাল প্রদর্শনীতে এমন দৃশ্য ভারতীয় প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য খুবই কঠিন। তবে নেতিবাচক আলোচনার পরও তেজস আবার ইতিবাচক গতি ফিরে পেতে পারে।
বিজ্ঞাপন
এর আগে প্যারিস এয়ারশোতেও রাশিয়ার সু-৩০ ও মিগ-২৯ বিধ্বস্ত হয়েছিল। তারপরও দেশগুলো সেসব যুদ্ধবিমান কিনেছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, তেজস প্রকল্পের অবস্থা এর চেয়ে জটিল, কারণ এটি ভারতের দীর্ঘমেয়াদি সামরিক কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
১৯৮০-এর দশকে পুরনো মিগ-২১ প্রতিস্থাপন লক্ষ্যে তেজস প্রকল্প শুরু হয়। হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (হাল) বর্তমানে এমকে-১৪ ভ্যারিয়েন্টের প্রায় ১৮০টি বিমান তৈরির চুক্তিতে আছে। কিন্তু জিই এরোস্পেসের ইঞ্জিন সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় উৎপাদন নির্ধারিত সময়সীমা মানতে পারছে না প্রতিষ্ঠানটি।
বিজ্ঞাপন
হালের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা জানান, দুবাইয়ে দুর্ঘটনার পর তেজসের রপ্তানি পরিকল্পনা “এ মুহূর্তে থমকে গেছে।” এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার কয়েকটি দেশকে রপ্তানির সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে বিবেচনা করছিল হাল। মালয়েশিয়ায় তো ইতোমধ্যেই একটি অফিসও চালু করেছে ভারত।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর বর্তমানে মাত্র ২৯ স্কোয়াড্রন কার্যক্রমে আছে, যেখানে অনুমোদিত পূর্ণ স্কোয়াড্রন সংখ্যা ৪২। মিগ-২৯, জাগুয়ার ও মিরাজ ২০০০-এর পুরনো সংস্করণগুলো দ্রুত অবসর নেওয়ায় ঘাটতি আরও বাড়ছে।
বিজ্ঞাপন
এক বিমান কর্মকর্তা জানান, এসব পুরনো যুদ্ধবিমানের বিকল্প হিসেবে তেজসকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও উৎপাদন সমস্যায় তা পূরণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিকল্প হিসেবে ভারত এখন ফরাসি রাফাল, মার্কিন এফ-৩৫ বা রাশিয়ার সু-৫৭ কেনার বিষয়ও বিবেচনা করছে।
বিশ্লেষক ওয়াল্টার লাডউইগ বলেন, আন্তর্জাতিক বিক্রি নয়, বরং ভবিষ্যৎ ভারতীয় যুদ্ধবিমান প্রকল্পের জন্য তেজস যে প্রযুক্তিগত ও শিল্পভিত্তি তৈরি করছে—সেটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
দুবাই এয়ারশোর দুর্ঘটনা ভারতের সামরিক বিমান নির্মাণ সক্ষমতাকে নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। তবে দেশটির প্রতিরক্ষা নীতি–বিশারদরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে তেজস প্রকল্প ভারতীয় যুদ্ধবিমান উন্নয়নকে থামাতে পারবে না, যদিও এটি রপ্তানি সম্ভাবনায় সাময়িক বড় ধাক্কা এনে দিয়েছে।








