‘ইমরান খানের জীবিত থাকার কোনো প্রমাণ নেই’

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ছেলে কাসিম খান তার বাবার জেলজীবন নিয়ে তীব্র অভিযোগ তুলেছেন।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, ইমরান খান টানা ৮৪৫ দিন ধরে কারাগারে বন্দি আছেন এবং গত ছয় সপ্তাহ ধরে একা একটি ‘ডেথ সেলে’ রাখা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কোনো পরিবার সদস্য তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারছেন না।
কাসিম দাবি করেন, ইমরান খানের বোনদেরও কারাগারে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
তিনি বলেন, তিনি ও তার ভাইদের সঙ্গে বাবার কোনো যোগাযোগ নেই এবং এখন পর্যন্ত তার জীবিত থাকারও কোনো নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন: হংকংয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২৮
তার অভিযোগ—এটি কোনো ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা’ নয়, বরং ইচ্ছাকৃতভাবে তার বাবার অবস্থা গোপন করার প্রচেষ্টা। তিনি সতর্ক করে বলেন, সরকার ও ‘হ্যান্ডলারদের’ এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
তিনি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন এবং বলেন, পাকিস্তানের ‘সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতা’কে যে অমানবিক বিচ্ছিন্নতায় রাখা হয়েছে, তা বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে অবিলম্বে তার জীবিত থাকার প্রমাণ প্রকাশের আহ্বান জানান।
বিজ্ঞাপন
ইমরান খানের বোন নুরিন নিয়াজি পাকিস্তানে ভয়াবহ সেন্সরশিপের অভিযোগ করেন।
এএনআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সাংবাদিক ও মিডিয়া মালিকদের গ্রেফতার, ভয়ভীতি ও চাপের মধ্য দিয়ে রাখা হচ্ছে।
তার ভাষায়, ‘পাকিস্তানে এমন সেন্সরশিপ চলছে যে অনেকে কারাগার থেকে ছাড়া পেলেও কোনো কথা বলার সাহস পান না।’
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও অভিযোগ করেন যে পরিচিত সাংবাদিকদের দেশ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে এবং তাদের পাসপোর্ট ও সম্পদ আটকে দেওয়া হয়েছে।
নুরিনের দাবি—‘হিটলারের সময়ের মতো পরিস্থিতি এখন পাকিস্তানে।’
তিনি বলেন, শাহবাজ শরিফের সরকার ‘অজনপ্রিয়’ এবং নির্বাচন হয়েছে ‘কারচুপির মাধ্যমে’। তার মতে, পশ্চিমা দেশগুলোও এসব জানে, তবু তারা কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
বিজ্ঞাপন
এদিকে পিটিআই নেতৃত্বও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। খাইবার পাখতুনখোয়ার মুখ্যমন্ত্রী সোহাইল আফ্রিদি টানা আটবার ইমরান খানের সঙ্গে দেখা করতে ব্যর্থ হন। ২৭ নভেম্বর তিনি আদিয়ালা জেলের সামনে ধর্ণায় যোগ দিলেও পুলিশ তাকে ও পিটিআই কর্মীদের জেলের ফটকে যেতে দেয়নি।
আফ্রিদির অভিযোগ—আদালতের আদেশ মানা হচ্ছে না এবং ‘২.৫ কোটি মানুষের’ প্রতিনিধি হিসেবে তারও সাক্ষাৎ অধিকার রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, খানের বোন, আইনজীবী ও চিকিৎসকদেরও ভেতরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।
এছাড়া পিটিআই নেতারা জুলফি বুখারি ও মেহর বানো কুরেশি সরকারের কাছে ইমরান খানের স্বাস্থ্যের বিষয়ে স্পষ্ট ও স্বচ্ছ তথ্য প্রকাশের দাবি করেছেন। তারা পরিবারকে অবিলম্বে সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়ারও আহ্বান জানান।
তবে আদিয়ালা জেল কর্তৃপক্ষ সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো খবর ‘ভিত্তিহীন’। কর্তৃপক্ষ জানায়, ইমরান খান ‘পুরোপুরি সুস্থ’ আছেন এবং তাকে কোথাও সরানো হয়নি। কোনো জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজনও পড়েনি।
বিজ্ঞাপন
এদিকে অনলাইনে গুজব ছড়িয়ে পড়ে—কিছু বিদেশি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট দাবি করে যে ইমরান খান নাকি কারাগারে মারা গেছেন। তবে এসব দাবি কোনো নির্ভরযোগ্য সংস্থা নিশ্চিত করেনি।
গুজব আরও জোর পায় যখন ইমরান খানের তিন বোন—নুরিন নিয়াজি, আলীমা খান ও ড. উজমা খান—অভিযোগ করেন, তারা শান্তিপূর্ণভাবে কারাগারের বাইরে অবস্থান করছিলেন, কিন্তু পুলিশ ‘পরিকল্পিত’ হামলা চালায়।
তারা বলেন, স্ট্রিটলাইট নিভিয়ে তাদের টেনে-হিঁচড়ে সরিয়ে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
নুরিন দাবি করেন, তাকে চুল ধরে টেনে ফেলা হয় এবং তিনি আহত হন। তারা জানান, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে তারা ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারছেন না।
আদিয়ালা জেল পাঞ্জাব সরকারের অধীনে, যার নেতৃত্বে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মরিয়ম নওয়াজ। তিনি বলেন, খানের সাক্ষাৎ বিষয়ে তার ‘কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই’।
অন্যদিকে ইমরান খান আগে দাবি করেছিলেন, জেলের সব কার্যক্রম একজন সেনা কর্নেল নিয়ন্ত্রণ করেন।








