সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের পথে সরকার

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য থাকলেও, ভোটের সময় নিয়ে মতপার্থক্য কাটেনি। কেউ জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট চান, আবার কেউ চান একই দিনে আয়োজন।
বিজ্ঞাপন
তবে আর্থিক ও প্রশাসনিক দিক বিবেচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
সরকারের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পরই এ বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। নির্বাচন কমিশন থেকেও ইতোমধ্যে অনানুষ্ঠানিকভাবে একই দিনে দুই ভোট আয়োজনের বিষয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
বিজ্ঞাপন
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, গণভোট একটি জাতীয় ইস্যু, যা আয়োজন করতে সময়, অর্থ ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম প্রয়োজন। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের আগে আরেকটি বড় আয়োজন করলে নির্বাচনী রোডম্যাপে জটিলতা তৈরি হতে পারে। তাই সরকারের ধারণা, একই দিনে দুটি ভোট আয়োজন করলে সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে এবং অস্থিরতাও কমবে।
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, গণভোটে মূল প্রশ্ন থাকবে “জুলাই সনদ গ্রহণ করবেন কি না?” যার উত্তর জনগণ “হ্যাঁ” বা “না”-এর মাধ্যমে দেবে। তবে বিএনপিসহ কয়েকটি দল জাতীয় নির্বাচনের দিনই গণভোট আয়োজনের পক্ষে, বিপরীতে জামায়াত ও এনসিপি নির্বাচনের আগেই ভোট নেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।
কমিশনের বৈঠকে দলগুলোর অবস্থান অপরিবর্তিত থাকায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শনিবার জামায়াত ও এনসিপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও সদস্য বদিউল আলম মজুমদারসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বসেন। সেখানেই জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।
বিজ্ঞাপন
সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এক সূত্র জানায়, “জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ইতিমধ্যেই একমত হয়েছে। তাই রোম সফর শেষে শুক্রবার সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সনদ স্বাক্ষরের পর গণভোটের দিনও ঘোষণা করা হবে।”
নির্বাচন কমিশনও একই দিনে ভোট আয়োজনের পক্ষে। কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। ১২ কোটির বেশি ভোটার, ৪০ হাজারের বেশি ভোটকেন্দ্র ও ১০ লাখেরও বেশি কর্মী নিয়ে এই আয়োজন পরিচালিত হবে। আলাদা দিনে গণভোট করলে ব্যয় কয়েকগুণ বাড়বে, যা কমিশনের মতে যুক্তিযুক্ত নয়।
বিজ্ঞাপন
ইসি কমিশনার আবদুর রহমানেল মাছউদ বলেন, “গণভোটের সিদ্ধান্ত সরকারের বিষয়। তবে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে ভোট হলে ব্যয় অনেক কমবে, এবং ফেব্রুয়ারিতে দুটি নির্বাচন একসঙ্গে আয়োজন করা সম্ভব।”
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “দলগুলো সময় নিয়ে একমত না হওয়ায় সরকারের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকার বাস্তবতা বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে, এবং বৃহত্তর স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোও তা মেনে নেবে বলে আশা করছি।”
বিজ্ঞাপন
অন্য সদস্য ড. আবদুল আলীম বলেন, “বিশ্বের অনেক দেশেই জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ভোটাররাও একাধিক ব্যালটে ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা রাখে, তাই একই দিনে ভোট হলে তেমন জটিলতা হবে না।”
উল্লেখ্য, ১৯৭৯ সালে জেনারেল জিয়াউর রহমান পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সংবিধানে গণভোটের বিধান যুক্ত করেন। এরপর এখন পর্যন্ত দেশে তিনটি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে।