দেশে তিনজনের মধ্যে দুইজন নারী স্বামীর সহিংসতার শিকার: জরিপ

বাংলাদেশে প্রতি চারজন বিবাহিত নারীর মধ্যে তিনজন জীবনে অন্তত একবার স্বামীর সহিংস আচরণের শিকার হয়েছেন। সহিংসতার ধরনগুলোর মধ্যে রয়েছে শারীরিক, যৌন, মানসিক ও অর্থনৈতিক নির্যাতন, পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণও।
বিজ্ঞাপন
তবে আশার বিষয়, সামগ্রিকভাবে সহিংসতার হার ২০১৫ সালের তুলনায় প্রায় ১৭ শতাংশ কমেছে।
এই তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ও জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) পরিচালিত ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪’-এ। সোমবার (১৩ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেন বিবিএসের উপপরিচালক মিনাক্ষী বিশ্বাস।
বিজ্ঞাপন
জরিপ অনুযায়ী, দেশের ৭৬ শতাংশ নারী জীবনে অন্তত একবার স্বামীর হাতে সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ৪৯ শতাংশ গত এক বছরে এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। তবে উদ্বেগজনক তথ্য হলো- সহিংসতার শিকার ৬২ শতাংশ নারী কখনোই তা প্রকাশ করেননি।
এছাড়া, ১৫ শতাংশ নারী ১৫ বছর বয়সের পর স্বামী ছাড়া অন্য কারও হাতে শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন এবং ২ শতাংশের বেশি নারী যৌন সহিংসতা ভোগ করেছেন। যদিও ২০১৫ সালে স্বামীর সহিংস আচরণের হার ছিল ৬৬ শতাংশ, ২০২৪ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯ শতাংশে।
জরিপে আরও দেখা গেছে, কম বয়সী নারী, যৌতুক প্রথার শিকার, স্বামীর মাদকাসক্তি বা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত পুরুষের স্ত্রী এবং শহরের বস্তিবাসী নারীরা সহিংসতার ঝুঁকিতে বেশি। অন্যদিকে, শিক্ষিত স্বামী সহিংসতার প্রবণতা কমিয়ে আনে।
বিজ্ঞাপন
সহিংসতার ধরন অনুযায়ী দেখা যায়, অর্ধেকেরও বেশি নারী (৫৪%) জীবনে একাধিকবার শারীরিক বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছেন। গর্ভাবস্থায় ৭ শতাংশ নারী শারীরিক এবং ৫ শতাংশ যৌন সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন।
জরিপ বলছে, শাশুড়ি ও পুরুষ আত্মীয়রা নারীর ওপর শারীরিক সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি জড়িত। আর পুরুষ আত্মীয়, বন্ধু ও পরিচিতজনের মাধ্যমে যৌন সহিংসতা ঘটার হার তুলনামূলক বেশি।
এছাড়া, ৮ দশমিক ৩ শতাংশ নারী ডিজিটাল মাধ্যমে সহিংসতার শিকার, যার মধ্যে যৌন ব্ল্যাকমেইল, ছবি ব্যবহার করে হুমকি ও অনলাইন হয়রানি উল্লেখযোগ্য।
বিজ্ঞাপন
সহিংসতার পর চিকিৎসা বা আইনি সহায়তা নেওয়ার হারও কম। মাত্র ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ নারী চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন, এবং স্বামীর সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন। অন্যদিকে, স্বামী নয় এমন ব্যক্তির সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে ৩ দশমিক ৮ শতাংশ আইনি সহায়তা চেয়েছেন।
এছাড়া, প্রায় ৫১ শতাংশ নারী জানেন না কোথায় অভিযোগ জানাতে হয়, এবং মাত্র ১২ দশমিক ৩ শতাংশ নারী জাতীয় সহায়তা হেল্পলাইন ১০৯ সম্পর্কে জানেন।
বিজ্ঞাপন
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য কাইয়ুম আরা বেগম, পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শবনম মোস্তারি এবং ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং।