Logo

ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে: প্রধান বিচারপতি

profile picture
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ১৮:১২
13Shares
ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে: প্রধান বিচারপতি
ছবি: সংগৃহীত

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, রাষ্ট্র যদি নাগরিকদের মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তবে ন্যায়ের জন্য সংগ্রাম অনিবার্য হয়ে পড়ে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আইন কেবল নিয়মের সমষ্টি নয়; এটি জাতির নৈতিক চেতনার প্রতিফলন। ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র টিকে থাকে, আর ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে।

শনিবার দুপুরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি এস. এম. এমদাদুল হক ও বিচারপতি এ. কে. এম. আসাদুজ্জামান।

বিজ্ঞাপন

প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের সবার মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, যুক্তিবোধ ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। অবিশ্বাস বা বিভাজন গত ১৫ মাসের নিরলস প্রচেষ্টায় অর্জিত বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতাকে দুর্বল করতে পারে। তাই বিচার বিভাগের টেকসই স্বাধীনতা নিশ্চিতে সকল অংশীজনকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ন্যায়বিচারের পুনর্জাগরণ এখন সময়ের দাবি। সংবিধানে স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায়বিচারের যে অঙ্গীকার আছে, তা যেন দেশের প্রতিটি নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়, সেটিই আমাদের কর্তব্য।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ দুটোই ছিল মর্যাদা, ন্যায় ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য সংগ্রাম। এই চেতনা আজও আমাদের পথপ্রদর্শক।

জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে প্রশাসনিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, নৈতিকভাবে সাহসী এবং সংবিধানিকভাবে শক্তিশালী কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

তিনি বিচার বিভাগ সংস্কারের জন্য একটি ‘রোডম্যাপ’ উপস্থাপন করেন, যার মূল পরিকল্পনা হলো একটি পৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা। এই সচিবালয় হবে বিচার প্রশাসনের কেন্দ্রীয় কাঠামো, যেখানে সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচারে প্রবেশাধিকার সহজ ও কার্যকর হবে।

বিজ্ঞাপন

অন্তর্বর্তী সরকারের অনুমোদিত ‘সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ ২০২৫’ সম্পর্কে তিনি বলেন, এই অধ্যাদেশ ১৫ মাসের কৌশলগত প্রচেষ্টা ও সমন্বয়ের ফল। এখন প্রয়োজন পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতা, যাতে এই কাঠামোগত পরিবর্তন স্থায়ী হয়।

দেশের আইনজীবী সমাজ, বিচারক, সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন ও বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোকে এই কাঠামোগত রূপান্তর সফল করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধান বিচারপতি।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, আইনের শিক্ষা কেবল পেশাগত প্রশিক্ষণ নয়, এটি ন্যায় প্রতিষ্ঠার সাধনা। প্রতিটি মামলার পেছনে আছে একটি জীবন, প্রতিটি রায়ের পেছনে আছে একটি ভাগ্য। বিচারক ও আইনজীবীদের তা মনে রাখতে হবে।

প্রযুক্তি-নির্ভর বিচারব্যবস্থার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা এখনো ঔপনিবেশিক কাঠামোর ছায়া বহন করছি। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা-নির্ভরতা ও ডিজিটাল সংযোগের যুগে আমাদের বিচারব্যবস্থাও সময়োপযোগী হতে হবে।

তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান স্বীকার করে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্য প্রাজ্ঞ আইনবিদ তৈরি করেছে। ভবিষ্যতেও এখান থেকে এমন আলোকিত আইনজ্ঞ বেরিয়ে আসবে, যারা জ্ঞান ও মানবিকতায় সমৃদ্ধ।

বিজ্ঞাপন

অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের ৩২ জন বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী, কর্মকর্তা, প্রাক্তন ও বর্তমান তিন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD