তাজরীন ট্র্যাজেডির ১৩ বছর আজ, ক্ষত এখনও অম্লান

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে অগ্নিকাণ্ডের ভয়ালতম দৃষ্টান্ত—তাজরীন ফ্যাশনস ট্র্যাজেডি। সাভারের আশুলিয়ায় ওই আগুনে কেটে গেছে ১৩ বছর, কিন্তু দগ্ধ শ্রমিকদের জীবনে আজও ফিরে আসেনি স্বাভাবিকতা। পরিবার হারানো, অঙ্গহানি, কর্মক্ষমতা হারানো—সব মিলিয়ে শত শত মানুষ আজও রয়ে গেছে অসমাপ্ত পুনর্বাসনের অপেক্ষায়।
বিজ্ঞাপন
২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুর এলাকার নয়তলা তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেড ভবনের নিচতলার গুদামঘর থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে পুরো ভবনে। মুহূর্তের মধ্যেই ভবনটি রূপ নেয় ভয়াবহ আগুনের ফাঁদে। বের হওয়ার প্রধান দরজা ছিল তালাবদ্ধ, ফলে অনেক শ্রমিক আগুনে পুড়ে মারা যান। যাঁরা প্রাণ নিয়ে বাঁচতে ওপরে থেকে লাফ দেন, তাঁদের বেশিরভাগেরই হাত-পা, কোমর, বুকে গুরুতর ভেঙে যাওয়ার মতো আঘাত লাগে।
সরকারি হিসাবে এ ঘটনায় প্রাণ হারান ১১৪ জন, আর আহত হন দুই শতাধিক কর্মী। শ্রমিক সংগঠনগুলোর ভাষ্য—এক হাজারের বেশি শ্রমিক বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ১৭২ জন চিরতরে পঙ্গুত্ববরণ করেন।
বিজ্ঞাপন
ট্র্যাজেডির ১৩তম বার্ষিকীতে নিহতদের পরিবার, আহত শ্রমিক এবং শ্রমিক সংগঠনগুলো কয়েকটি দাবির পুনরাবৃত্তি করেছে- ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ভেঙে দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকদের জন্য আবাসন নির্মাণ, শ্রমিকদের জন্য বিশেষায়িত হাসপাতাল, নিহতদের পরিবারের জন্য আজীবন আয়ের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ, আহতদের জন্য উন্নত চিকিৎসা ও কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে বিচার নিশ্চিতকরণ।
দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা অনেকে এখনও দুঃসহ জীবন কাটাচ্ছেন। কেউ কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন, কেউবা স্থায়ী ব্যথা ও মানসিক ট্রমার মধ্যে জীবনযাপন করছেন। তাদের অনেকেই অভিযোগ করেন—স্বপ্নের মতো দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
বিজ্ঞাপন
পোশাক শিল্পে নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাজরীন অগ্নিকাণ্ড বড় শিক্ষা হয়েও, কর্মীদের মতে—সময় গড়ালেও তাদের জীবনের ক্ষত আর কষ্টের গল্প রয়ে গেছে আগের মতোই অমোচনীয়।








