Logo

বন্ধের পথে পুলিশ ভেরিফিকেশন, আঙুলের ছাপেই হবে পাসপোর্ট যাচাই

profile picture
নিজস্ব প্রতিবেদক
২৪ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:০৪
27Shares
বন্ধের পথে পুলিশ ভেরিফিকেশন, আঙুলের ছাপেই হবে পাসপোর্ট যাচাই
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আসছে। প্রচলিত পুলিশি যাচাই পদ্ধতি ‘কার্যত’ বন্ধ করে পাসপোর্ট যাচাইয়ের মূল ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করা হবে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) বায়োমেট্রিক তথ্য— আঙুলের ছাপ ও মুখের ছবি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে পাসপোর্ট আবেদনের সময় এনআইডির নাম, জন্মতারিখ, পিতা-মাতার নামসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ডিজিটালি যাচাই করা হয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেমোগ্রাফিক তথ্য পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য নয়— প্রয়োজন বায়োমেট্রিক মিল।

নতুন প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে— পাসপোর্ট আবেদনকারীর আঙুলের ছাপ সরাসরি এনআইডির সংরক্ষিত আঙুলের ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে, ফেস ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে এনআইডির ছবির সঙ্গে মিল যাচাই হবে এবং কোনো অমিল ধরা পড়লে আবেদনটি ‘রেড ফ্ল্যাগ’ হিসেবে আলাদা করে ম্যানুয়াল তদন্তে পাঠানো হবে।

বিজ্ঞাপন

ই-পাসপোর্ট অফিসে এনরোলমেন্টের সময় এখন থেকেই মনিটরে আবেদনকারীর এনআইডির ছবি দেখানোর ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে। কর্মকর্তারা এটিকে প্রথম স্তরের ভিজ্যুয়াল যাচাই হিসেবে ব্যবহার করছেন।

দীর্ঘদিন ধরে পুলিশ আবেদনকারীর ঠিকানা, পেশা, পরিচয় ও পারিবারিক তথ্য যাচাই করে আসছিল। এ ব্যবস্থা বাদ পড়ায় এখন এনআইডির বায়োমেট্রিক ডেটাই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, পুলিশি ভেরিফিকেশন বাদ পড়ায় পরিচয় নিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রযুক্তিনির্ভর যাচাই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

বিজ্ঞাপন

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, মেশিনভিত্তিক বায়োমেট্রিক যাচাই ছাড়া আধুনিক পাসপোর্ট ব্যবস্থায় পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব নয়।

প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন— জাল পরিচয়ে পাসপোর্ট নেওয়ার ঝুঁকি কমবে, এক ব্যক্তি ভিন্ন নামে একাধিক পাসপোর্ট নিতে পারবেন না এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মানদণ্ডে বাংলাদেশের পাসপোর্ট আরও গ্রহণযোগ্য হবে।

সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে পাসপোর্ট ভেরিফিকেশনকে কেন্দ্র করে কিছু অসাধু চক্র আর্থিক অনিয়মের সুযোগ পেত। বায়োমেট্রিক মিল চালু হলে এসব বাণিজ্যও বন্ধ হবে।

বিজ্ঞাপন

নাগরিকদের সংবেদনশীল বায়োমেট্রিক তথ্য নিরাপদ রাখতে শক্তিশালী আইন ও প্রযুক্তির প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন অধিকার সংগঠন। তারা বলছে— ডেটা শেয়ারিং হবে সীমিত এবং এনক্রিপটেড পদ্ধতিতে এবং তথ্য সংরক্ষণ বা অপব্যবহার রোধে কড়াকড়ি নিশ্চিত করতে হবে।

সরকারি দপ্তরগুলোর দাবি— ডেটা শেয়ারিং হবে শুধুই তাৎক্ষণিক ভেরিফিকেশনের উদ্দেশ্যে, কোনো তথ্য জমা বা ট্র্যাকিং করা হবে না।

বিজ্ঞাপন

শিশুদের আঙুলের ছাপ নেওয়া প্রযুক্তিগতভাবে কার্যকর না হওয়ায় তাদের ক্ষেত্রে ডিজিটাল জন্মসনদের ইউনিক নম্বর থাকবে পরিচয় শনাক্তের মূল ভিত্তি। এটি অনলাইনে যাচাইযোগ্য হওয়ায়— ভুয়া জন্মসনদে পাসপোর্ট নেওয়ার সুযোগ থাকবে না এবং শিশুদের পাসপোর্ট বেহাত হওয়ার ঝুঁকিও কমবে।

এ পদ্ধতি চালু হলে যে সুবিধা পাওয়া যাবে, সেগুলো হলো— জাল পাসপোর্ট বন্ধ হবে, সরকারি ব্যয় কমবে, অপরাধী শনাক্তকরণ সহজ হবে, ভোগান্তি কমবে এবং আন্তর্জাতিক ভ্রমণে বাংলাদেশের অবস্থান শক্ত হবে।

এই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারির পরিপত্রে জানানো হয়— নতুন পাসপোর্টে এনআইডির অনলাইন তথ্যই পরিচয় যাচাইয়ের ভিত্তি— পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রয়োজন নেই, বিদেশে থাকা প্রবাসী ও অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন তথ্যের ভিত্তিতে পাসপোর্ট ইস্যু হবে এবং পাসপোর্ট রিনিউতে মূল তথ্য পরিবর্তন হলে এনআইডিকে ভিত্তি ধরে নতুন পাসপোর্ট দেওয়া হবে।

বিজ্ঞাপন

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে— পাসপোর্ট ও এনআইডি বিভাগ প্রযুক্তিগত সমন্বয় কাজ শুরু করেছে, কয়েকটি অফিসে পাইলট প্রকল্প চালুর প্রস্তাব রয়েছে এবং সবকিছু চূড়ান্ত হলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ধাপে ধাপে চালু হতে পারে এই বায়োমেট্রিক মিল-ভিত্তিক যাচাই ব্যবস্থা।

এক কর্মকর্তা বলেন, নিরাপদ, দ্রুত ও স্বচ্ছ পাসপোর্ট প্রক্রিয়া এখন দেশের প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে বায়োমেট্রিক যাচাই আর বিকল্প নয়— এটি অপরিহার্য।

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD