গুমের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডসহ কঠোর শাস্তির বিধান, অধ্যাদেশ জারি

গুম প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের অংশ হিসেবে সরকার ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার অধ্যাদেশ’ জারি করেছে, যেখানে গুমের কারণে কারও মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্টদের মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। একই সাথে রাখা হয়েছে কোটি টাকার বেশি অর্থদণ্ডের সুযোগ। আর গুমের প্রমাণ নষ্ট করা কিংবা গোপন আটককেন্দ্র পরিচালনার মতো কার্যক্রমে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (১ ডিসেম্বর) আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এ অধ্যাদেশের গেজেট প্রকাশ করে।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ‘গুম প্রতিরোধ ও প্রতিকার ট্রাইব্যুনাল’ গঠন করা হবে। এই আইনের আওতাধীন অপরাধগুলো হবে জামিন-অযোগ্য এবং আপস-অযোগ্য। তবে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করার আগ পর্যন্ত তার অবস্থান ‘রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার স্বার্থে’ গোপন রাখার সুযোগ রাখা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য বা সরকারি কর্মচারী কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করার পর তা অস্বীকার করলে, বা ব্যক্তির অবস্থান ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন রাখলে, সেটি গুম হিসেবে গণ্য হবে। এমন অপরাধে দায়ী ব্যক্তির সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন বা ন্যূনতম ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
গুমের ফলে যদি কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে, অথবা পাঁচ বছর পরও তাকে জীবিত বা মৃত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া না যায়, সে ক্ষেত্রে জড়িতদের মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
অধ্যাদেশে আরও বলা হয়েছে—গুমের উদ্দেশ্যে যদি কেউ গোপন আটককেন্দ্র নির্মাণ, ব্যবহার বা গুমের প্রমাণ নষ্ট করেন, তাহলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া যাবে।
বিজ্ঞাপন
এ ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা কমান্ডার অধস্তনদের নির্দেশনা, অনুমতি বা প্ররোচনার মাধ্যমে যদি গুমের মতো অপরাধে সহায়তা করেন কিংবা অবহেলার কারণে এমন অপরাধ সংঘটিত হয়, তাহলে তারাও একই শাস্তির মুখোমুখি হবেন। এমনকি অধস্তনদের নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলেও দায়প্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মূল অপরাধের দায়ে বিচার করা যাবে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত পলাতক থাকলেও তার অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য পরিচালনা করা যাবে। পাশাপাশি গুমের শিকার ব্যক্তির পরিবার যেন স্বাভাবিক জীবন চালাতে পারে—সেজন্য তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির যৌক্তিক অংশ ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবে ট্রাইব্যুনাল।
বিজ্ঞাপন
গুম প্রতিরোধে প্রথমবারের মতো এত কঠোর দণ্ডবিধান এ অধ্যাদেশে অন্তর্ভুক্ত করা হলো, যা দেশের মানবাধিকার সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।








