গবেষণা প্রতিবেদন
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে খরচ বেড়েছে শিক্ষার্থীদের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:২৮ অপরাহ্ন, ৩১শে মার্চ ২০২৪
দেশে প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়া শিক্ষার্থীদের পেছনে পরিবারের খরচ বেড়েছে। খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণ সন্তানকে টিউশনি বা কোচিং সেন্টারে পাঠানো, গাইড বই কিনে দেওয়া, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফি দেওয়া, শিক্ষার বিভিন্ন উপকরণ যেমন, বই, খাতা, কলম ইত্যাদি কিনে দেওয়া, বিদ্যালয়ের এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিজ, যাতায়াত বাড়া এবং অন্যান্য। গবেষণা বলছে, এর মধ্যে গ্রামের শিক্ষার্থীদের পেছনে কম খরচ হলেও শহুরে শিক্ষার্থীদের পেছনে বেশি খরচ হচ্ছে। ফলে প্রাথমিক পর্যায়ে ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিক পর্যায়ে ৫১ শতাংশ বেড়েছে শিক্ষা ব্যয়।
শনিবার (৩০ মার্চ) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণস্বাক্ষরতা অভিযানের ‘বাংলাদেশে বিদ্যালয় শিক্ষা: মহামারি উত্তর টেকসই পুনরুত্থান’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক ও গবেষক দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন। এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন ও জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, গবেষণা দলের প্রধান ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক মনজুর আহমদ বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৬ দিনের ছুটি শুরু
গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, সারা দেশের আটটি বিভাগের ১৬টি জেলার মধ্যে থেকে ২৬টি উপজেলা ও পাঁচটি সিটি করপোরেশন এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে গবেষণাটি করা হয়েছে। গবেষণার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা মিলিয়ে মোট সাত হাজার ২২৫ জন কাছ থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, সামগ্রিকভাবে ২০২১ সালে সর্বস্তরে প্রায় ৪৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থীর (কওমি মাদ্রাসা ব্যতীত) মধ্যে ৪২ শতাংশ সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, ৩৮ শতাংশ সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং ২০ শতাংশ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও শিশুদের শিক্ষার জন্য পারিবারিক ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের খরচের চিত্রটি বের করা হয়েছে পঞ্চম শ্রেণি এবং নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার খরচের ভিত্তিতে।
অনুষ্ঠানে মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২০২২ সালে (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর জন্য বার্ষিক পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা। তবে শহরাঞ্চলে এই খরচ বেশি। মফস্বল এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষার্থীপিছু বার্ষিক পারিবারিক ব্যয় ছিল ১০ হাজার ৬৩৭ টাকা; যা শহরাঞ্চলে ছিল ১৮ হাজার ১৩২ টাকা। কিন্তু পরের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসেই প্রাথমিকে এই খরচ ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৬৪৭ টাকা।
অনুষ্ঠানে ড. মনজুর আহমদ বলেন, প্রাথমিকে ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিক ৫১ শতাংশ খরচ বেড়েছে। খরচ বেশি হচ্ছে কোচিং, টিউশনি ও গাইড বইয়ে।
আরও পড়ুন: শনিবারও স্কুল খোলা রাখার ইঙ্গিত দিলেন শিক্ষামন্ত্রী
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালে মাধ্যমিক স্তরের একজন শিক্ষার্থীর জন্য পরিবারের ব্যয় ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। মফস্বল এলাকায় এ খরচ ২২ হাজার ৯০৯ টাকা এবং শহরাঞ্চলে ৩৫ হাজার ৬৬২ টাকা। কিন্তু গত বছরের প্রথম ছয় মাসে এই খরচ ৫১ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৭১২ টাকা।
গবেষণার তথ্য বলছে, কোচিং সেন্টারে বা প্রাইভেট টিউটরের সাহায্য নিয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে তিন-চতুর্থাংশের বেশি শিক্ষার্থী। পাশাপাশি গাইড বই বা সহায়ক বইয়ের উপর প্রাথমিকের ৯২ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী নির্ভরশীল ছিল।
কোচিং এবং গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে গবেষণায় উঠে এসেছে যে এসব ক্লাসে যথাযথ পাঠদান দেওয়া হয়নি।
জেবি/এজে