শিক্ষকদের পেটানো সভ্য রাষ্ট্রের আচরণ হতে পারে না: হাসনাত

আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, রাস্তায় শিক্ষকদের যেভাবে পেটানো হয়েছে, তা কোনোভাবেই সভ্য রাষ্ট্রের চরিত্র হতে পারে না। এটি একটি নিকৃষ্ট ও লজ্জাজনক কাজ। সরকারকে অবিলম্বে এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।
বিজ্ঞাপন
রবিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে আহত শিক্ষকদের দেখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “আমাদের দেশের শিক্ষকরা মাসে ১২ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে চাকরি শুরু করেন। আমার চেনা একজন শিক্ষক আছেন, যিনি ৩২ বছর ধরে শিক্ষকতা করছেন, অথচ তার বর্তমান বেতন মাত্র ২২ হাজার টাকা। এখন এক কেজি ইলিশ মাছের দাম ২ হাজার ৮০০ টাকা। মানে, তিন দশকের চাকরির পরও এক কেজি মাছ কিনতে তার মাসিক বেতনের ১৫ শতাংশ খরচ করতে হয়। অথচ সেই বেতনের ২০ শতাংশ দিয়েও ঘরভাড়া মেটে না।”
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকরা সমাজের আদর্শ মানুষ। তাদের সবসময় পরিপাটি থাকতে হয়, সম্মান নিয়ে চলতে হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তারা মাসের শেষ দিকে হীনমন্যতা নিয়ে দিন পার করেন। শিক্ষা খাতকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা না করা আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা।”
হাসনাত বলেন, “বিদেশে শিক্ষা খাতকে জাতীয় উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সবার খাওয়া-দাওয়া, বিলাসিতা শেষে যা বেঁচে যায়, সেটাই শিক্ষকদের ভাগ্যে জোটে। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত বেতন না দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা আশা করা আসলে রাষ্ট্রীয় প্রহসন।”
তিনি আরও যোগ করেন, “যদি শিক্ষকদের প্রথম শ্রেণির নাগরিক হিসেবে বিবেচনা না করি, তাহলে তারা কীভাবে প্রথম শ্রেণির নাগরিক তৈরি করবেন? আমরা ভেবেছিলাম অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পুরোনো ধারা ভেঙে শিক্ষাবান্ধব নীতি নেবে। কিন্তু দেখা গেল, তারা হয়েছে প্রমোশন-বান্ধব সরকার। প্রধান কাজ এখন পোস্টিং দেওয়া।”
বিজ্ঞাপন
স্বাস্থ্য উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে হাসনাত বলেন, “দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যেভাবে ভেঙে পড়েছে, তাতে অন্তত স্বাস্থ্য উপদেষ্টার উচিত ছিল দেশের হাসপাতালেই চিকিৎসা নেওয়া। কিন্তু তিনি সিঙ্গাপুরে গিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন, এটি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা ও নির্লজ্জতার পরিচয়।”
শেষে তিনি বলেন, “যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের সূর্য ডোবার আগেই মুক্তি দিতে হবে। শিক্ষকদের ওপর হামলা ছিল বর্বরোচিত ও গণবিরোধী কাজ। সরকার যদি সত্যিই জনগণের প্রতিনিধি হতে চায়, তবে এই ঘটনার দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হবে।”