পালিয়ে থাকা নেতাদের উসকানিতে বিপাকে মাঠের আ.লীগ নেতাকর্মীরা

দীর্ঘদিনের ভুল সিদ্ধান্ত ও নেতৃত্বের অদূরদর্শিতার কারণে ধ্বংসস্তূপে থাকা আওয়ামী লীগ আরও গভীর সংকটে নিমজ্জিত হচ্ছে। বিশেষ করে ১৩ নভেম্বর ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিদেশে অবস্থানরত শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে দলের একটি অংশ চোরাগোপ্তা হামলা ও আগুন সন্ত্রাসের পথে ঝুঁকে পড়ায় দলটির ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
অতীতের ভুলের দায় স্বীকার করে রাজনৈতিক পুনর্বাসনের পথে হাঁটার বদলে এসব হটকারী পদক্ষেপে ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়ে পড়ছেন ত্যাগী নেতাকর্মীরা—এমনটাই জানালেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ কঠিন সময় পার করছে। সেদিন নিরাপত্তাহীনতার কারণে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। পরে পরিবারের সদস্য এবং অনেক প্রভাবশালী নেতা বিভিন্ন পথ ধরে বিদেশে আশ্রয় নেন। দেড় দশকের বেশি সময়ের দমন-পীড়ন, দুর্নীতি ও সহিংসতার কারণে আওয়ামী লীগ দেশজুড়ে ‘ফ্যাসিস্ট দল’ হিসেবে জনরোষে পড়ে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।
বিজ্ঞাপন
এই পরিস্থিতিতে দেশে থাকা হাজার হাজার নেতাকর্মী হয় আত্মগোপনে, নয় কারাগারে। এর মাঝেও বিদেশে পালিয়ে থাকা নেতৃত্বের উসকানিতে অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে ঝটিকা মিছিল ও সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। এতে গ্রেপ্তার, হামলা ও মামলা বেড়েই চলেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, নেত্রীর বিরুদ্ধে রায় হলে রাজনৈতিক প্রতিবাদ করা যেতে পারে, তবে হুমকি-ধমকি বা সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এতে তাদের রাজনৈতিকভাবে ফিরে আসার সম্ভাবনা আরও ক্ষীণ হবে।
তার মতে, অতীতের ভুল অস্বীকার করলে আওয়ামী লীগের জন্য তা হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।
বিজ্ঞাপন
দলের কয়েকজন নেতার বক্তব্য, পতনের পর ১৫ মাস পেরোলেও শীর্ষ নেতৃত্ব এখনো কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিতে পারেনি। বরং যে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, তা অনুসরণ করলে দল শক্তিশালী হওয়ার বদলে আরও বিপদের মুখে পড়বে বলে মনে করছেন তারা।
তাদের মতে, নির্বাচনের বাইরে থাকা মানেই রাজনীতিতে আরও পিছিয়ে পড়া। আবার বিদেশে থাকা নেতাদের নির্দেশে সহিংসতায় জড়ালে মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা আরও ঝুঁকিতে পড়বেন।
অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দলের শীর্ষ নেতাদের কঠোর দণ্ড হতে পারে—এমন আশঙ্কায় দেশব্যাপী দলীয় কর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে।
বিজ্ঞাপন
ক্ষমতা হারানোর পরও বিভিন্ন বক্তব্যে নেতাকর্মীদের আবেগে উসকে দিয়েছে শেখ হাসিনা—এমন অভিযোগও উঠেছে। কখনো ‘পালটা আঘাত করতে হবে’, কখনো ‘নির্দেশের অপেক্ষায় না থেকে মাঠে নামার’ আহ্বান—এসব বক্তব্যের জেরে বহু নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার হয়েছেন, হামলার শিকার হয়েছেন।
১৩ নভেম্বরের ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিতেও বিদেশে থাকা নেতৃত্ব ভিডিও বার্তায় কর্মীদের মাঠে নামার নির্দেশ দেন, যার ফলে সহিংসতা, আগুন ও বিস্ফোরণের মতো ঘটনা ঘটে এবং দায় গিয়ে পড়ে দলটির ওপর।
আরও পড়ুন: বিএনপি মানেই উন্নয়ন: আমান উল্লাহ আমান
বিজ্ঞাপন
দেশজুড়ে বিক্ষোভ, প্রতিরোধ ও শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত রাখায় সাধারণ মানুষের বিরক্তিও বাড়ছে। আগামী সপ্তাহে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়কে কেন্দ্র করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করায় দলটির ওপর চাপ আরও বাড়বে বলে বিশ্লেষকদের মত।
দলটির বহু সিনিয়র ত্যাগী নেতা মনে করছেন, সহিংস কর্মসূচি ও বিদেশি ভিডিও নির্দেশে রাজনীতি চালালে তারা আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন। বরং অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে স্বাভাবিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় ফেরাটাই দলের জন্য উত্তম পথ হতে পারে।
উত্তরাঞ্চলের এক প্রবীণ নেতা বলেন, সারা জীবন দলকে ভালোবেসে কাজ করেছি, কখনো ক্ষমতার অপব্যবহার করিনি। অথচ এখনো গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হচ্ছে। যে ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে তাতে সামনে পথ আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যারা বোঝার কথা, তারা এখনো বুঝতে চাইছেন না।
বিজ্ঞাপন
দলের ভেতরে এখন মূল আলোচ্য বিষয়—উদ্ধার পথ কোনটি? ক্ষমতায় ফেরা নাকি বেঁচে থাকার পথ খোঁজা? ত্যাগী নেতাদের মতে, সহিংস নির্দেশ মানলে দলের অবশিষ্ট অস্তিত্বও ঝুঁকিতে পড়তে পারে।








