হাসিনার আশির্বাদে মতিনের দাপট

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আশির্বাদপুষ্ট বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন। ড্রেজার বিভাগের দায়িত্ব পেয়ে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন।
বিজ্ঞাপন
এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে চাকরির শুরু থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তিনি সে সময় থেকেই অনিয়ম করলেও শেখ পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতো সাহস পেতো না। এমন অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।
তারা বলছেন, হাসিনা পালালেও দাপট কমেনি এই প্রকৌশলীর। তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও সংবাদ নিয়ন্ত্রণের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। সংস্থার ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে চলা সিন্ডিকেট বাণিজ্যের অন্যতম হোতা হিসেবে তার নাম উঠে এসেছে। প্রভাবশালী রাজনীতিকের ছত্রছায়ায় সিন্ডিকেট রাজত্ব এই কর্মকর্তার হাতে। এ বিষয় দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে।
অভিযোগ সূত্র বলছে, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিন আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মির্জা আজমের প্রভাবে গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট বিআইডব্লিউটিএ-তে তদবির, বদলি ও টেন্ডার বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এই সিন্ডিকেট পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন কর্মচারী ইউনিয়নের প্রভাবশালী দুই নেতা। তারা হলেন, আবুল হোসেন ও সরোয়ার হোসেন। প্রকৌশলী আব্দুল মতিন এই সিন্ডিকেটের অন্যতম চালিকাশক্তি। তার দপ্তর থেকেই চলেছে নানা তদবির ও বদলির সুপারিশ, যার পেছনে রয়েছে মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেন।
বিজ্ঞাপন
এদিকে বিআইডব্লিউটিএ অফিসারস অ্যাসোসিয়েশনের সাম্প্রতিক নির্বাচনে মতিন শুরুতে নৌকা প্রতীকের পক্ষ নিলেও পরবর্তীতে নিজেকে বৈষম্যের শিকার দাবি করে অবস্থান পাল্টান। নির্বাচনোত্তর এই অবস্থান বদল নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। জানা গেছে, মতিনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করতে গিয়ে এক গণমাধ্যমকর্মী তার দপ্তরে গেলে প্রথমে মুখোমুখি বাকবিতণ্ডা হয়। পরে মতিন আশঙ্কা করেন, তার দুর্নীতির তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে। তখন তিনি ওই সাংবাদিককে নানা ভাবে ভয়ভিতি দেখান। এমকি ওই সংবাদকর্মীকে হত্যার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অবসরের দ্বারপ্রান্তে থাকা প্রকৌশলী মতিন নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে গিয়ে এখন সংস্থার অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও তথ্য ফাঁস করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিক সংবাদকর্মীর কাছে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র সরবরাহের ঘটনাও সামনে এসেছে। বিআইডব্লিউটিএ-এর ভেতরে বর্তমানে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন,“প্রকৌশলী মতিন শুধু নিজে দুর্নীতিতে জড়িত নন, বরং তার কর্মকাণ্ডে পুরো প্রতিষ্ঠানের সুনাম আজ প্রশ্নবিদ্ধ।”
এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফার পক্ষে জনবানীকে লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির লিখিত কোন অভিযোগ কর্তৃপক্ষে নথিভুক্ত হলে যথাযথ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে দুদকের নিকট অভিযুক্ত কোন বিচারাধীন বিষয় প্রমাণিত হলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আইন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। চেয়ারম্যান মহোদয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে সরাসরি পরিচিতিই নন। কদাচিৎ কর্মস্থলে কোথাও হয়তবা একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ হতে পারে তবে তা অন্য পাঁচজন সাধারণ কর্মকর্তা কর্মচারীর সাথে সমজাতীয় সম্পর্কের শামিল।
তিনি আরো বলেন, কোন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ব্যতীত কোন নির্বাহী প্রকৌশলীকে প্রটোকল অনুযায়ী চেয়ারম্যানের সাথে সখ্যতা থাকার কোন সুযোগ নেই। চেয়ারম্যান যে কোন কর্মকর্তার যে কোন আর্থিক বা অনার্থিক দুর্নীতি বা স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে গাফিলতি মোটেই প্রশ্রয় দেন না। সুতরাং সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সাথে চেয়ারম্যানের সম্পৃক্ততা বা তাকে প্রশ্রয় দেওয়ার বিষয়টি মোটেই সত্য নয়।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয় নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিনের মুঠো ফোন কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুর্দেবার্তা পাঠিয়ে উত্তর মেলিনি।
এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যদি সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন সিন্ডিকেট দুর্নীতির অভিযোগ সত্যি হয়, তাহলে তা রাষ্ট্রীয় স্বার্থের পরিপন্থী। অপরাধ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।