ডিপিডিসির তিন প্রকৌশলীর ভুলের বলি হলো বিদ্যুৎকর্মী

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সঞ্চালন লাইনে কাজ করার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন ডিপিডিসির বার্ষিক ঠিকাদারি শ্রমিক মো. নজরুল ইসলাম (৫৫)।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিমুলপাড়া বিহারী ক্যাম্প এলাকার সোনা মিয়া মার্কেটের সামনে এই ঘটনা ঘটে। ঘটনায় আহত হন রাজ্জাক (৪৭) ও করিম। রাজ্জাককে বার্ণ ইনস্টিটিউটে প্রাথমিক চিকিৎসার পর বাসায় পাঠানো হয়েছে। করিম জীবন রক্ষায় বিদ্যুতের খুঁিট থেকে লাফ দিয়ে কোনো মতে রক্ষা পান। এতে তিনি পায়ে বড় ধরনের আঘাত পেয়েছেন বলে সূত্র জানান।
স্থানীয় মফিজ উদ্দিন বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত অধিকারী, সহকারী প্রকৌশলী রাহুল ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান সোহাগের অবহেলায় এই বিদ্যুৎ কর্মীর মৃত্যু হয়। কারণ যে সব বিদ্যুৎ কর্মীরা আহত হয়েছেন তাদের সিকিউরিটি সেফটি ছিলো। আর যে কর্মীর মৃত্যু হয়েছে সে বিদ্যুতে পুড়ে মারা গেছে। তিনি আরো বলেন, কোনো ভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু রেখে এই কাজ করা ঠিক হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বিদ্যুৎ কর্মী বলেন, যদি শাটডাউন দিয়ে থাকে তাহলে সংযোগ চালু হওয়ার কথা নয়। যেহেতু শাটডাউনের স্থানটি অটো নয়। এর দায় এড়াতে কোনো ভাবে পারেন না উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রহমান সোহাগ কিংবা নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত স্যার। তাদের ভুলের কারণে বলি হলো বিদ্যুৎ কর্মীর।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শী শ্রমিকরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী শাটডাউন নেওয়ার কথা থাকলেও কাজ চলাকালেই হঠাৎ লাইন চালু হয়ে যায়। এটা ডাহা মিথ্যা কথা। লাইন চালু ছিলো এটাই সত্য। মুহূর্তেই বিদ্যুতের ঝলকে পুড়ে যায় নজরুলের দেহ। দীর্ঘ সময় বিদ্যুতের খুটিঁতে ঝুলে মৃত্যু হয়। কোনো বিদ্যুৎ কর্মকর্তা ঘটনা স্থালে আসেনি। এমকি নিহত পরিবারের প্রতি কেউ শান্তনা দেয়নি।
কর্মীদের অভিযোগ, নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত অধিকারী ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবদুর রহমান সোহাগ সাইট সুপারভিশনে ছিলেন না। কোনো সেফটি চেক ছাড়াই শ্রমিকদের লাইনে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ এম শফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দুর্ঘটনা ঘটেছে সকাল ১০টা ৩৩ মিনিটে, আর আমাকে জানানো হয়েছে চার ঘণ্টা পরে। এটা দায়িত্বহীনতার চরম উদাহরণ। তিনি আরও বলেন লাইন কেন চালু ছিল, শাটডাউন নিশ্চিত করা হয়েছিল কি না সব তদন্তেই বের হবে। তবে এটা স্পষ্ট যে অপারেশনাল সেফটিতে বড় ধরনের ব্যর্থতা ঘটেছে। তবে তদন্ত না করে বিস্তারিত বলা যাবে না। আমি ঘটনা স্থল তদন্ত করে জানাতে পারবো।
বিজ্ঞাপন
ডিপিডিসির একাধিক সূত্র জানায়, সিদ্ধিরগঞ্জ ডিভিশনে নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত অধিকারী ও সহকারী প্রকৌশলী রাহুলের নেতৃত্বে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অবাধ স্বেচ্ছাচারিতা দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। সূত্রের দাবি গ্রাহকের বিশেষ সুবিধা নিয়ে ‘আন্ডারদ্য টেবিল’ কাজ করা হয়। নিয়ম ভেঙে শাটডাউন ছাড়াই লাইন মেরামত করার অভিযোগ এই দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। এই ঘটনা ধামাচাপা দিয়ে মাঠে নেমেঠেন নির্বাহী প্রকৌশলীর নেতৃত্বে একটি গ্রুপ মাঠে নেমেছেন।
তদন্ত কমিটি গঠন কি শুধু লোভ দেখানো করা হয়েছে কিনা এমন অভিযোগ বিদ্যুৎকর্মীদের। ঘটনার পর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হলেও মাঠপর্যায়ে এই কমিটি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ এই কমিটির মধ্য অনেকই দুর্নীতির দায় অভিযুক্ত। ডিপিডিসির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসেবে খ্যাত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হানিফ উদ্দিন তদন্ত কমিটির প্রধান হয়ে কিভাবে সঠিক রিপোর্ট দিবেন। কারণ তিনি টাকা ছাড়া কিছু বুঝেন না। টাকা দিলে সব মাফ করে দেন। এ ছাড়াও তদন্ত কমিটির আরেক সদস্য তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শের আলী। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জে ডিভিশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। যে কর্মকর্তা এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, সে কিভাবে এই কমিটির দায়িত্ব পালন করবেন।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে ডিপিডিসির অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা এমডি নূর আহমদ-কে বারবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিজ্ঞাপন
দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, স্যার কয়েকদিন ধরেই সাংবাদিকদের ফোন ধরছেন না। তিনি ডিপিডিসিতে দায়িত্ব দেওয়ার পর এ ধরনের ঘটনা আরো কয়েকটি ঘটেছে। গত ৯ এপ্রিল বিকাল ৩.৩০ ঘটিকার সময় ১৫/১৫ পশ্চিম রামপুরা ঠিকানায় নতুন সার্ভিস তার সংযোগ প্রদানকালে এলটি লাইনে দুর্ঘটনাবশত লাইনম্যান কামরানের মৃত্যু হয়। সেই মৃত্যুর দায় থেকে খুব সহজেই মুক্তি পেয়ে গিয়েছিলেন তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন। কি জাদুতে ম্যানেজ হলে ডিপিডিসির এমডি।
নিহত নজরুল ইসলামের পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, যিনি ভুল করেছেন তিনি অফিসে বসে আছেন, আর আমাদের পরিবারের ভরসা মানুষটা আজ মৃত। এই মৃত্যুর দায় নেবে কে? আমাদের পরিবারের আয় করার কেউ নেই। কিভাবে চলবে এই পরিবার।
সিদ্ধিরগঞ্জে নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত অধিকারী বলেন, এই দায় আমার। কারণ আমার কর্মী বাহিনীর ভুলের দায় তো আমাকে নিতে হবে। তবে বিষয়টি তদন্ত হলে আসল ঘটনা বের হবে।








