হাসপাতালের নীরব আলো আঁধারিতে খালেদা জিয়া

বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে যার নাম উচ্চারণ মানেই দৃঢ়তা, সাহস আর অবিচল নেতৃত্বের ছবি ভেসে ওঠে সেই বেগম খালেদা জিয়া আজ নিঃশব্দে লড়ে চলেছেন জীবনের সবচেয়ে কঠিন যুদ্ধে।
বিজ্ঞাপন
রাজপথের ধুলো, আন্দোলনের উত্তাপ, ক্ষমতার কঠিন দায়িত্ব সবকিছুকে পেরিয়ে যাঁর পথচলা ছিল অনমনীয়, সেই নেত্রী এখন শয্যাশায়ী, অসহায়ভাবে সময় কাটছে হাসপাতালের কাচঘেরা ঘরে। বাইরে আকাশে নেমে আসে সন্ধ্যার আলো-আঁধারি। আর ভেতরে, হাসপাতালের সাদা করিডোরে তৈরি হয় ভারী নীরবতা।
প্রতিদিন দলীয় নেতারা, শুভাকাঙ্ক্ষীরা, সাধারণ মানুষ তাঁর খোঁজে আসেন। কেউ কথা বলেন না, শুধু চোখে চোখে ভাসে আতঙ্ক, প্রার্থনা আর গভীর মমতা। চিকিৎসকদের ভাষায় তাঁর অবস্থা এখনও জটিল। লিভারের ভয়াবহ সমস্যা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, সব মিলিয়ে এই ৭৯ বছর বয়সী নারী যুদ্ধ করছেন নীরব, কিন্তু কঠিন এক লড়াই।
বিএনপির এক প্রবীণ নেতা ধীরে বলে ওঠেন, চেয়ারপার্সন শুধু আমাদের নেতা নন, তিনি আমাদের মানসিক শক্তি, আমাদের ইতিহাস। তাঁকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখা, বুকের ভেতরটা ফাঁকা করে দেয়। হাসপাতালের বাইরে কিছু কর্মী দাঁড়িয়ে। কারও হাতে তসবিহ, কারও হাতে দোয়ার বই। এক তরুণী চোখ মুছতে মুছতে বলেন, আমি রাজনীতি বুঝি না, কিন্তু মা খালেদাকে ছোটবেলা থেকে দেখেছি। তিনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত মনটা শান্ত থাকে না। দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন আসছে তাঁর জন্য দোয়া, শুভকামনা আর উদ্বেগের বার্তা। কেউ তাকে দেখেন সংগ্রামী মা হিসেবে, কেউ রাজনৈতিক প্রেরণার উৎস হিসেবে, আবার কেউ দেখেন দেশ ইতিহাসের এক অমূল্য অধ্যায় হিসেবে। আজ রাজনীতি, মতভেদ, ক্ষমতার হিসাব সবকিছু ছাপিয়ে খালেদা জিয়াকে ঘিরে জন্ম নিয়েছে এক মানবিক অনুভূতি, একজন মানুষ, যিনি জীবনের অনেক ঝড়ঝাপটা সামলেছেন, তিনি যেন আরেকবার ফিরে আসেন আলোয়, মানুষের মাঝে, জীবনের স্পন্দনে। হাসপাতালের জানালায় ফোঁটা ফোঁটা আলো পড়ে। সেসব আলোর মতোই ঝুলে থাকে আশা, যে নারী বারবার ফিরেছেন লড়াইয়ে, তিনি এবারও ফিরে আসবেন নতুন উজ্জ্বলতায়।
বিজ্ঞাপন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা নিয়ে আমরা সবাই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তাঁর চিকিৎসা যাতে সর্বোচ্চ মানে হয়, সে জন্য পরিবার ও দল সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা দেশবাসীর কাছে নেত্রীর দ্রুত আরোগ্যের জন্য দোয়া কামনা করছি।”
বিএনপির স্থায়ীয় কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেন, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের ইতিহাসে বেগম জিয়ার মতো অবিচল নেতৃত্ব খুব কমই আছে। তার অসুস্থতা আমাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে। আশা করি তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবেন।
বিএনপির স্থায়ীয় কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তাঁর জন্য প্রয়োজনীয় উন্নত চিকিৎসার বিষয়টি মানবিকতার জায়গা থেকে বিবেচনা করা উচিত। তিনি দেশের মানুষের প্রিয় নেত্রী, আমাদের বিশ্বাস, তিনি আবারও সুস্থ হয়ে উঠবেন।
বিজ্ঞাপন
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, চেয়ারপার্সনের এই অসুস্থতা আমাদের হৃদয়ে ব্যথা সৃষ্টি করেছে। তিনি সারাজীবন দেশের মানুষের অধিকার রক্ষার আন্দোলনে ছিলেন। আমরা দিনরাত দোয়া করছি—আল্লাহ তাঁকে দ্রুত আরোগ্য দান করুন।
বিএনপির স্থায়ীয় কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, দেশের মানুষের ভালোবাসাই বেগম জিয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি। তাঁর অসুস্থতায় সাধারণ মানুষের যে দুঃখ দেখছি, তা আমাদের অভিভূত করেছে। তিনি যেন দ্রুত সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন, এটাই আমাদের প্রার্থনা।
বিএনপির স্থায়ীয় কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, বেগম জিয়া শুধু একজন রাজনৈতিক নেত্রী নন, তিনি দেশের কোটি নারীর অনুপ্রেরণা। তাঁর শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত চিন্তার কারণ। আমরা তাঁর চিকিৎসায় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।
বিজ্ঞাপন
বিএনপির স্থায়ীয় কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন চেয়ারপার্সনের অসুস্থতা দলের ভেতরে গভীর শূন্যতা তৈরি করেছে। আমরা প্রত্যাশা করি তিনি শিগগিরই সুস্থ হয়ে ফিরে আসবেন এবং তাঁর নেতৃত্বে আমরা পুনরায় সংগঠিত হতে পারব।








