Logo

ডেসকোর সিওএসএস টেন্ডারে কালো টাকা

profile picture
বশির হোসেন খান
৩ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৩:০২
11Shares
ডেসকোর সিওএসএস টেন্ডারে কালো টাকা
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি ডেসকোর সাম্প্রতিক সিওএসএস টেন্ডার মূল্যায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে টেন্ডার মূল্যায়ন কমিটি-২ (টিইসি-২) অসম ও অস্বচ্ছ মানদণ্ড প্রয়োগ করে মনোয়ারা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস ‘অগ্রহণযোগ্য’ ঘোষণা করেছে। প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও নথি থাকা সত্ত্বেও যে পদ্ধতিতে তাদের বাতিল করা হয়েছে, তা পুরো প্রক্রিয়ার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ক্রয় পর্যালোচনা কমিটির (পিআরসি) একাধিক সুপারিশ টিইসি-২ প্রতিবেদন থেকে বাদ পড়েছে। এমনকি মনোয়ারা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস এর কাছে কোনো ব্যাখ্যা বা স্পষ্টীকরণও চাওয়া হয়নি যা সরকারি ক্রয়বিধির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। একই ধরনের ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও কমিটির পছন্দের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ রয়েছে, ৪৩ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ২৫টি প্রতিষ্ঠান চার-পাঁচ গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। ফলে বড় অংশের কাজ সীমিত গোষ্ঠীর মধ্যে বণ্টিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, এই “সিন্ডিকেটবৃত্তে” না থাকায় মনোয়ারা কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসকে টার্গেট করে বাদ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে ডেসকোর প্রধান প্রকৌশলী মনজুরুল হকের নাম। অভিযোগ রয়েছে, তিনি মূল্যায়ন কমিটির স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করে সিদ্ধান্তে প্রভাব খাটিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ টেকনিক্যাল মূল্যায়নের স্বাধীনতা নষ্ট করে তিনি অস্বাভাবিক প্রভাব বিস্তার করেছেন, এবং কোন প্রতিষ্ঠানকে গ্রহণযোগ্য (রেসপনসিভ) ধরা হবে সেই সিদ্ধান্তও মূলত তাঁর ইঙ্গিতেই নির্ধারিত হয়েছে। যদি এ অভিযোগ সত্য হয়, তবে এটি শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ নয়; বরং সরকারি ক্রয়ব্যবস্থায় প্রভাবশালী গোষ্ঠীর দখলদারিত্বের উদ্বেগজনক উদাহরণ। রাষ্ট্রীয় টেন্ডার প্রক্রিয়ার মৌলিক নীতি হলো যোগ্যতা, প্রতিযোগিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা। কিন্তু এ ঘটনায় যে চিত্র ফুটে উঠেছে তা দেখায়, সিদ্ধান্ত নির্ভর করছে প্রকৃত প্রযুক্তিগত যোগ্যতার ওপর নয়; বরং কে কাকে কতটা “সন্তুষ্ট” করতে পারে তার ওপর। এটি শুধু একটি টেন্ডারের অনিয়ম নয়; বরং প্রাতিষ্ঠানিক ন্যায্যতা ও জবাবদিহির ওপর সরাসরি আঘাত। গতকাল মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনে এমন অভিযোগ করে কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে মালিকরা।

বিজ্ঞাপন

এ ব্যাপারে জ্বালানি খাত বিশ্লেষক ড. সাইফুল আলম বলেন, ডেসকোর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যদি সমান মানদণ্ড সবার ক্ষেত্রে প্রয়োগ না হয়, তবে এটি পুরো খাতের সেবার মান, ব্যয় ও জনগণের আস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সিন্ডিকেটের অভিযোগ বা ব্যক্তিগত প্রভাবের সন্দেহ উঠলে দ্রুত স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি ক্রয়নীতি এক বিশেষজ্ঞ বলেন, অগ্রহণযোগ্য ঘোষণার কারণ লিখিত, স্পষ্ট ও যাচাইযোগ্য হতে হয়। ভিন্ন মানদণ্ড প্রয়োগের অভিযোগ উঠলে তদন্ত ছাড়া ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বিষয়ক এক গবেষক বলেন, একাধিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা একই হলে প্রতিযোগিতা বাধাগ্রস্ত হয়। এটি বাজার নিয়ন্ত্রণের ইঙ্গিত দেয়, যা অবশ্যই তদন্তযোগ্য।

বিজ্ঞাপন

অনেক কর্মকর্তা মনে করেন ডেসকোর অভ্যন্তরীণ পর্যালোচনা ও বিদ্যুৎ বিভাগের তদারকির পাশাপাশি প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) স্বাধীন তদন্ত প্রয়োজন। এক কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগ সত্য হোক বা মিথ্যা স্বাধীন তদন্তই একমাত্র সমাধান।

জেবি/আরএক্স
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD