হাসিনার আর্শিবাদপুষ্ট ডা. শুভ’র মুখে বিএনপি’র বুলি

দীর্ঘদিনের আওয়ামী লীগপন্থী নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আর্শিবাদপুষ্ট ডা. মাহমুদুল হাসান শুভ, যিনি একসময় দলীয় প্রভাব, সংগঠনিক পদ ও এডহক নিয়োগকে ঘিরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন হঠাৎই ২৪ গণঅভ্যুত্থান সমর্থিত বৃহৎ রাজনৈতিক শক্তির ছত্রছায়ায় চলে যাওয়ায় জেলা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় রাজনীতিতে প্রশ্ন উঠছে গতকাল পর্যন্ত যিনি ছিলেন আওয়ামী পরিবারের মুখ, তিনিই কি আজ গণঅভ্যুত্থানের পতাকাবাহী নতুন রাজনীতির সামনে?” এই আকস্মিক অবস্থান পরিবর্তন শুধু রাজনৈতিক টেবিলেই নয়, সাধারণ মানুষের মাঝেও সৃষ্টি করেছে তীব্র আলোড়ন, অনেকে বলছেন ২৪ গণঅভ্যুত্থান এখন কি সিরাজগঞ্জের আওয়ামী নেতাদের বুকেও আগুন ধরিয়েছে?
গত মঙ্গলবার জনৈক রাশেদ নামের এক ব্যাক্তি দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগ সূত্র বলছে, ডা. মাহমুদুল হাসান শুভ যিনি সিরাজগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক, বেলকুচি উপজেলা যুবলীগের সদস্য এবং জেলা ছাত্রলীগের সাবেক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী পরিবারভুক্ত একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে পরিচিত। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে পুতুলের স্বামীর বোন জামাই সিরাজগঞ্জ-২ আসনের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বিশ্বাস্ত হাতিয়ার। সেই সময়ে এমপি মিল্লাত মুন্নার সুপারিশে ডা. শুভর চাকরি হয়।
বেলকুচি উপজেলার সমেশপুর গ্রামের বাসিন্দা ডা. শুভ স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিটির পরিচিত মুখ। তাঁর বাবা মো. শহিদুর রেজা বেলকুচি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এডহক ভিত্তিতে চিকিৎসক নিয়োগকে কেন্দ্র করে ডা. মাহমুদুল হাসান শুভর নাম আলোচনায় আসে। স্থানীয় সূত্রের দাবি রাজনৈতিক প্রভাবের জোরে তিনি এডহকে ‘মেডিকেল অফিসার’ হিসেবে নিয়োগ পান। একই বছর তিনি সিরাজগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদও লাভ করেন। এরপর থেকে তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান আরও শক্তিশালী হতে থাকে। ২০২৩ সালে সারাদেশে এডহক চিকিৎসকদের চাকরি স্থায়ী করা হলেও, কেন্দ্রীয় কারাগারে চাকরিরত অবস্থায় এক পর্যায়ে দুর্নীতির অভিযোগে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। যা তখন স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়।
বিজ্ঞাপন
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কারাগারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ডা. শুভ কারো ব্যাক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন না। এখানে যে সব হাজতি কিংবা কয়েদি আসেন সবাইকে পর্যাক্রমে তিনি চিৎকিসা করতে বাধ্য। তিনি যদি এখনো কোনো রাজনৈতিক প্রধানের চিকিৎসা করে তার ব্যাক্তিগত চিকিৎসক বলেন, এটা এক রকমের প্রতারনা। এখন নিজেকেই রক্ষা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে ডা. শুভ।
স্থানীয় অভিযোগ সূত্র বলছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় পরিবর্তন আসে। আর ঠিক সেই সময়েই ডা. মাহমুদুল হাসান শুভকে ২৪ গণঅভ্যুত্থান সমর্থনকারী একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ হতে দেখা যায়। যা সিরাজগঞ্জে নতুন করে জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এই নতুন রাজনৈতিক ছায়ার প্রভাবে তিনি বেলকুচির একটি কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতির পদও অর্জন করেছেন। আওয়ামী লীগপন্থী একজন সক্রিয় নেতা হঠাৎ বিরোধী সমর্থিত প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় হয়ে ওঠায় স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে। ২৪ গণঅভ্যুত্থান কি এখন সিরাজগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতাদের বুকেও স্থান করে নিয়েছে?
এ ব্যাপারে ডা. মাহমুদুল হাসান শুভ বলেন, আপনি আমার বিরুদ্ধে লেখেন কোনো সমস্যা নাই। সংবাদ ঠেকাতে তার পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি তদবির করেছেন। তারা বলছেন, শুভর বিরুদ্ধে লিখলে পরিনাম ভালো হবে না। করুন পরিনতি হবে। জেলে পচে মরতে হবে। শুভ আমাদের বলেছে, আপনাকে মামলায় লটকাবে। বাঁচতে চাইলে সংবাদ বন্ধ করুন।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা সবচেয়ে জরুরি। আইন বা নিয়ম যতই থাকুক, যদি ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ওপর কার্যকর জবাবদিহির ব্যবস্থা না থাকলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না।
এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ রাজু আহমেদ শাহ বলেন, প্রভাবশালী ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করলে প্রশাসন ও রাজনৈতিক প্রক্রিয়া উভয়ই চাপের মুখে পড়ে। আর্থিক স্বার্থ যেখানেই অগ্রাধিকার পায়, সেখানেই জনগণের সেবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।








