Logo

অফিস সহকারীর ঢাকায় বিলাসবহুল ৮ তলা বাড়ি

profile picture
মো. রুবেল হোসেন
১০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১৬:৫৭
33Shares
অফিস সহকারীর ঢাকায় বিলাসবহুল ৮ তলা বাড়ি
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলামের আয় বহিভুত অঢেল সম্পদের খোজ মিলেছে। রাজউকের এই কর্মচারি মহাখালী আঞ্চলিক অফিস জোন-৪ কর্মরত রয়েছেন। বেতন পান সর্বসাকল্যে ৪০ হাজার টাকা।

বিজ্ঞাপন

দৈনিক জনবাণী'র অনুসন্ধানে জানা যায়, মো. সাইফুল ইসলাম রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখানে ৩.৩১ কাঠা জমির উপরে গড়ে তুলেছেন ৮ তলা বিলাসবহুল অট্টালিকা। যার ১২৪৭৭ নং দলিলের এই জমির সিএস দাগ নং-৩৪৫, আরএস দাগ নং-৯৮২। এছাড়াও একই এলাকায় ২০১১ সালে ১৩৭২৯ নং দলিল মুলে সিএস দাগ নং-১৯৯, এসএ দাগ নং-১৪, আরএস দাগ নং-২ ঢাকা মহানগর জরিপ-১৪ এর ফায়দাবাদ মৌজা এবং সিএস দাগ নং-৮৫, এসএ দাগ নং-১৭১, আরএস দাগ নং-২৩২ ঢাকা মহানগর জরিপের ১৮২৩ খতিয়ান ভুক্ত। এ ছাড়াও চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ক্রয় করেছেন ১২ প্লটের অধিক জমি যার দলিল ও প্রমানক দৈনিক জনবাণী'র হাতে সংরক্ষিত রয়েছে।

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী সদস্য ও রাজউকের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইন্জিনিয়ারি মোশাররফ হোসেনের সুপারিশে রাজউকে চাকরি পান। এরপর থেকে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একজন অফিস সহকারী হয়ে গড়েছেন অঢেল অবৈধ সম্পদ। এর আগে তার বিরুদ্ধে ২০১৫ সালে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ জমা পড়লেও দলীয় প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যান তিনি। চাকরির পাশাপাশি রাজউকের প্লট বিক্রি, নকশা পাস করিয়ে দেওয়ার অবৈধ বাণিজ্যে জড়িত হন মো. সাইফুল ইসলাম। আর এসব কাজ করেই তিনি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি প্রতি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার বিমানে চরে চট্টগ্রাম যান বলে সত্যতা মিলেছে। লাখ টাকার আইফোন ব্যবহার করেন এই কোটিপতি অফিস সহকারী।

৫ই আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর মো. সাইফুল ইসলামের ব্যাংক একাউন্টে থাকা প্রায় ৫০ কোটি টাকা তিনি তার পিতার একাউন্টে স্থিত করেছেন। এছাড়াও অফিস সহকারী মো. সাইফুল ইসলামের মালিকানায় থাকা কোটি টাকা মূল্যের টয়োটা হায়েস গাড়ি ৫ আগস্টের পর তিনি বিক্রি করেছেন। তার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের মিরসরাই থানায় হত্যা মামলা চলমান থালকেও সব কিছুই অজানা রাজউকের এমনকি তিনি ঠিকমতো অফিসও করেন না। রাজউকের অফিস সহকারী হয়ে কিভাবে গড়েছেন অঢেল সম্পদ এ প্রশ্নের মেলেনি সদুত্তর। এমনকি তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে তিনি তার বাসায় আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাদের পূর্ণবাসণ করেছেন। তবে রাজউকের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলামের দাবি তিনি অবৈধ পথে সম্পদ অর্জন করেননি। তিনি রাজউকের বিভিন্ন প্লট বিক্রির কমিশনের অর্থ দিয়ে এই অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

কোটিপতি অফিস সহকারীর সম্পদের হিসাব: ২০০৯ সালের ১৬ জুলাই কবলা দলিলে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার পশ্চিম ইছাখালী মৌজার জেএল নং-৬৬, আরএস ১৬৩৩ নং দাগে ৮৭ শতাংশ জমি ২ লাখ ৫৩ হাজার টাকায় ক্রয় করেছেন। ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল কবলা দলিলে পশ্চিম ইছাখালী মৌজার জেএল নং-৬৬, আরএস খতিয়ান ৩৫৩ ও আরএস খতিয়ান ৯৭৬০/৯৭৬১ দাগ নম্বরে ২৩.৭৩ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন যার মূল্য ৭ লাখ ২৩ হাজার টাকা। ২০২৪ সালের ১৬ এপ্রিল পশ্চিম ইছাখালী মৌজার জেএল নং-৬৬, ১৬৩৩ আরএস খতিয়ানে ২৪.৯৪ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন যার মূল্য ৭ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ২০০৯ সালের ২০ আগস্ট উত্তর ইছাখালী মৌজার জেএল-৪১, ৯.৫৮ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন যার মূল্য ৬৩ হাজার টাকা। ২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর উত্তর ইছাখালী মৌজার জেএল-৪১, ২.৫০ শতাংশ জমি ক্রয় করেছেন যার মূল্য ১৮ হাজার টাকা। ২০১১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারী পশ্চিম ইছাখালী মৌজার জেএল-৬৬, ১২৩৮৬ বিএস ও ২৩৩৩ পিএস খতিয়ান নম্বরে জমির পরিমাণ ৬৫.১৮ শতাংশ যার মূল্য ১ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। ২০১১ সালের ৪ মে উত্তর ইছাখালী মৌজার জেএল-৪১, ৯৩২১ আরএস খতিয়ান নম্বরে জমির পরিমাণ ১১ শতাংশ যার মূল্য ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। ২০১১ সালের ২৬ জুলাই পূর্ব মিঠানালা মৌজার জেএল-৫১, ১৫৯৬/১৫৯৭/১৫৯৮/১৫৯৯ আরএস খতিয়ান নম্বরে জমির পরিমাণ ৩১ শতাংশ যার মূল্য ৬ লাখ ১০ হাজার টাকা। ২০০৯ সালের ১২ মার্চ পশ্চিম ইছাখালী মৌজার জেএল-৬৬, কবলা দলিল-৬৬৩ নম্বরে ১৩৫২৫/১৩৫২৬/১৩৫২৭/১২৪০১ বিএস খতিয়ান নম্বরে জমির পরিমাণ ৩৪.২৭ শতাংশ যার মূল্য ১ লাখ টাকা। ২০১৯ সালের ৩ মার্চ উত্তর ইছাখালী মৌজার জেএল-৪১, ৯৩৪২/৯৩৪০/৯৩৯৩/৯৩৮৯/৯৩৩৬/৯৩৩৫ আরএস খতিয়ান নম্বরে জমির পরিমাণ ৪.০৯ শতাংশ যার মূল্য ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। ২০১১ সালের ৪ মে উত্তর ইছাখালী মৌজার জেএল-৪১, ৩৪৩০ আরএস খতিয়ান নম্বরে জমির পরিমাণ ৩ শতাংশ যার মূল্য ৩৪ হাজার টাকা। ২০১১ সালের ৪ মে উত্তর ইছাখালী মৌজার জেএল-৪১, ৩৪৩০/৯৩২১ আরএস খতিয়ান নম্বরে জমির পরিমাণ ১১ শতাংশ যার মূল্য ১ লাখ ২৪ হাজার টাকা। ২০১১ সালের ২৬ জুলাই পূর্ব মিঠানালা মৌজার জেএল-৫১, ১৫৯৬ আরএস খতিয়ান নম্বরে জমির পরিমাণ ৩১ শতাংশ যার মূল্য ৬ লাখ ১০ হাজার টাকা।২০২৪ সালের ২ জুন পশ্চিম ইছাখালী মৌজার জেএল-৬৬, কবলা দলিল নম্বর-১৩৮৯ এর ১৬৩৩/৯৯০২ আরএস ও ১০০/৩৬৪ বিএস খতিয়ান নম্বরে জমির পরিমাণ ২৭.৩০ শতাংশ যার মূল্য ৮ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

এ প্রসঙ্গে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম জনবাণীকে বলেন, অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এখন রাজউকের অবস্থান জিরো টলারেন্স। অপরাধী যে-ই হোক তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবো।

জেবি/আরএক্স
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD