গণপূর্তে টেন্ডার জালিয়াতির মাস্টার প্রকৌশলী ময়নুল

ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩ দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ বাণিজ্যের ‘হটস্পট’ হিসেবে আলোচিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি ১০ লাখ টাকার ঘুষ লেনদেনের ভিডিও প্রকাশ পাওয়ার পর, প্রধান প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করে চেয়ার আকড়ে রেখেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ময়নুল ইসলাম। তিনি স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে পরিচিত হলেও কালো টাকার জোরে ক্ষমতার শিকড়ে।
বিজ্ঞাপন
এমন অভিযোগ দুর্নীতি দমন কমিশনে জমা পড়েছে। অভিযোগ সূত্র জানায়, এবার টেন্ডার জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে এই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে। প্রকৌশলী ময়নুল ঠিকাদারদের ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র দিয়ে সরকারি প্রকল্পে কাজ দেওয়ার সুপারিশ করেছিলেন, যার মাধ্যমে তিনি ১০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়, “দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের থানার প্রশাসনিক কাম ব্যারাক ভবন নির্মাণ” প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ ও উত্তর কেরাণীগঞ্জ থানার নতুন ভবন নির্মাণের টেন্ডারে ময়নুল কমিশন নিয়ে কাজ দেওয়ার জন্য ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র পাঠিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, “দেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের থানার প্রশাসনিক কাম ব্যারাক ভবন নির্মাণ” প্রকল্পের আওতায় দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ঢাকা গণপূর্ত বিভাগ-৩ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: ময়নুল ইসলাম ১১৬৩৯৩৪ নম্বর দরপত্র আহ্বান করেন। এই দরপত্রে ৮ জন ঠিকাদার দরপত্র দাখিল করেছিলেন। প্রাথমিক মূল্যায়নের পর ৫ জন ঠিকাদারকে রেস্পন্সিভ দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়, এবং এমকেটি এবং বিসি (জেভি) নামক জয়েন্ট ভেঞ্চারকে বিজয়ী ঘোষণা করে ময়নুল তার সুপারিশ প্রধান প্রকৌশলী বরাবর পাঠান। তবে, প্রধান প্রকৌশলী মো: খালেকুজ্জামান চৌধুরী নথি পর্যালোচনা করে জয়েন্ট ভেঞ্চারের কাগজপত্রে ত্রুটি দেখতে পান এবং তা ফেরত পাঠান। এর পর, ২৬.৩৬.০০০০.২৪২.১৪.৪৪৩.২০২৫/১১৪৩ স্মারকে ১৪/১২/২০২৫ তারিখে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উন্নয়ন ঢাকা টিইসি এর সুপারিশ গ্রহণ না করে নথি ফেরত দেন এবং পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দেন।
বিজ্ঞাপন
একই ঘটনা ঘটেছে উত্তর কেরাণীগঞ্জ থানার নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও। এই প্রকল্পের জন্য ১১৬৩৯৫১ নম্বর দরপত্র আহ্বান করেন ময়নুল, যেখানে ৯ জন ঠিকাদার অংশগ্রহণ করেছিলেন। প্রাথমিক মূল্যায়নে ৮ জন ঠিকাদার রেস্পন্সিভ দরদাতা হিসেবে নির্বাচিত হন, এরপর আকামিন-কিউসি (জেভি)কে বিজয়ী ঘোষণা করে ময়নুল তার সুপারিশ প্রধান প্রকৌশলী বরাবর পাঠান। আবারও, প্রধান প্রকৌশলী কাগজপত্রে ত্রুটি দেখে তা ফেরত পাঠান।
পরবর্তীতে ২৬.৩৬.০০০০.২৪২.১৪.৪৪৩.২০২৫/১১৪২ স্মারকে ১৪/১২/২০২৫ তারিখে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী উন্নয়ন ঢাকা টিইসি এর সুপারিশ গ্রহণ না করে নথি ফেরত দেন এবং পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দেন। এ দুটি দরপত্রের মোট কাজের মূল্য যথাক্রমে ১০ কোটি পনের লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং ১০ কোটি তের লাখ একত্রিশ হাজার চারশত পঞ্চাশ দশমিক পাঁচ শূন্য চার টাকা। অভিযোগ রয়েছে, নির্বাহী প্রকৌশলী ময়নুল ইসলাম ঠিকাদার এমকেটি এবং বিসি (জেভি) এবং আকামিন-কিউসি (জেভি) এর কাছ থেকে মোটা অংকের কমিশন নিয়ে, প্রাথমিক বাছাইয়ের পরও ত্রুটিপূর্ণ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও প্রধান প্রকৌশলীর কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছেন। সাধারণত, নির্বাহী প্রকৌশলীরা সকল কাগজপত্র সঠিকভাবে যাচাই করে সুপারিশ করেন, এবং তার সুপারিশের উপরই প্রধান প্রকৌশলী অনুমোদন প্রদান করেন। কিন্তু, ময়নুল ইসলাম তার এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে অবৈধভাবে কমিশনের বিনিময়ে কাজ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
একাধিক গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশলী জানাচ্ছেন, ময়নুল ইসলাম এতটাই শক্তিশালী যে, তার বিরুদ্ধে কথা বললে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জীবনযাত্রা অসহনীয় হয়ে ওঠে। তাদের দাবি, প্রধান প্রকৌশলী যে থাকুক। তাকে ম্যানেজ করে ময়নুল। তিনি ক্ষমতার জোরে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি করে যাচ্ছেন এবং এসব সংবাদ প্রকাশিত হলে, সংশ্লিষ্ট সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দেন।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী মো: খালেকুজ্জামান চৌধুরী বলেন, “এটি ছুটির দিন, তাই আমি এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলতে পারবো না। তবে, যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, লিখে দিয়ে আমাকে জানাতে পারেন। আমি খোঁজ নিয়ে বিস্তারিত জানাবো।” ময়নুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি প্রশ্ন লিখে পাঠাতে বলেন।
এ বিষয় ময়নুল ইসলামকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে উত্তর মেলেনি।








