Logo

আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মা ও ছেলে হাজতে

profile picture
জনবাণী ডেস্ক
২ জুলাই, ২০২৩, ২৩:৪৬
103Shares
আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মা ও ছেলে হাজতে
ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর বাসিন্দা অসহায় সিএনজি অটোরিকশা চালক মো. আলতাফ হোসেন ধার দেনা করে আদরের কন্যা রুমা আক্তার সোনিয়াকে নগরীর বাকলিয়ার ভাড়া বাসা থেকে চলতি বছরের

বিজ্ঞাপন

দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্কের পর দুই পরিবারের সম্মতিতে রুমা আক্তার সোনিয়া ও মো. রনির বিয়ের ৫ মাসের শুরুতেই যৌতুকের কোরবানির ছাগলের জন্য লাশ হতে হলো ৩ মাসের এই আন্তঃসত্ত্বাকে। 

নোয়াখালীর বাসিন্দা অসহায় সিএনজি অটোরিকশা চালক মো. আলতাফ হোসেন ধার দেনা করে আদরের কন্যা রুমা আক্তার সোনিয়াকে নগরীর বাকলিয়ার ভাড়া বাসা থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ তুলে দেন একই এলাকার গিয়াস উদ্দিনের ছেলে দাদন ব্যবসায়ী মো. রনির হাতে। তবে, এই বিয়ের আগে থেকেই ভুক্তভোগী পরিবারকে যৌতুকের জন্য নানা ভাবে হয়রানী করা হয় বলে অভিযোগ পরিবার ও এলাকাবাসীর। 

বিজ্ঞাপন

তবুও মেয়ের সুখ ও খুশীর কথা বিবেচনা করে ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা যৌতুকসহ বিয়ের সকল খরচ বাবদ আনুমানিক ৪ লক্ষ টাকা একাই বহন করেছেন বলে দাবী সিএনজি চালক মো আলতাফ হোসেনের। কিন্তু কোরবানির জন্য শশুরবাড়িতে সামান্য একটি ছাগল না দেওয়ায় বিয়ের মাত ৫ মাসের শুরুতে লাশ হতে হলো ৩ মাসের আন্তঃসত্ত্বা কন্যাকে। 

বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগী পরিবারের দাবী, ছাগল না দেওয়ায় মারধর করে হত্যা করা হয়েছে তাদের মেয়েকে। গত ২৮ জুন (বুধবার) বিকেলে নগরীর চান্দগাঁও থানাধীন রাহাত্তারপুল, চান্দার পুকুরপাড়ের মূছা কন্ট্রাক্টরের ভাড়াবাসার ৪ নং রুম থেকে আন্তঃসত্ত্বা রুমা আক্তার সোনিয়ার গলায় ওরনার ফাঁস লাগা অবস্থায় সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানাযায়। তবে, ঘটনার বিষয়ে কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন বলে কৌশলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সোনিয়াকে মৃত ঘোষনা করেন এবং ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠিয়ে দেয়। 

সেদিন দিবাগত রাতে নিহত সোনিয়ার মায়ের এজহারের ভিত্তিতে চান্দগাঁও থানায় একটি । আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা দায়ের করা হলে নিহত সোনিয়ার স্বামী মো. রনি ও শাশুড়ী পারুল বেগমকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেন থানা পুলিশ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, কোরবানির ছাগল নাপেয়ে রনি ও তার মা ঘটনার দিন সকাল থেকে রুমাকে মারধরসহ গালমন্দ করছিল। 

বিজ্ঞাপন

বিকেলের দিকে হটাৎ এই পরিবারের সকলে নিরব হয়ে গিয়ে নিজেদের মধ্যে কিছু একটা আলোচনা করছিল। এরপর রুমার খালাত ভাই মো. রাসেলকে অসুস্থতার কথা বলে ডেকে এনে লোকজন জড়ো করে হাসপাতালে পাঠানো হয় সোনিয়াকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা অভিযোগ করেন, সোনিয়ার গলায় যে কাপড়টি জড়ানো ছিল সেটি তার ননদ সীমা বেগমের। সেও এই ঘটনায় জড়িত বলে ধারনা তাদের। এদিকে ঘটনার সাথে জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে নিহত সোনিয়া আক্তার রুমার মা ফিরোজা বেগমের। 

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ঘটনার কিছুক্ষন আগেও আমার মেয়ে আমাকে কলদিয়ে তাকে অপমান ও মানষিক নির্যাতনের খবর জানান। 

তিনি আরো বলেন, তারা আমার মেয়েকে হত্যা করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে ঘটনা ভিন্নখাতে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমি ঘটনার সাথে জড়িত সকলের কঠোর শাস্তি চাই। 

বিজ্ঞাপন

এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন মানিক জনবাণীকে জানান, বিয়ের আগে থেকেই পাত্র পক্ষ মোটা অংকের যৌতুক দাবি করায় এই বিয়েতে মত ছিলনা এলাকার সচেতন কারোরই। কিন্তু কন্যার সুখের কথা বিবেচনায় পরিবারটি যৌতুক দিতে রাজি হওয়ায় আমরাও নিরুপায় ছিলাম।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো জানান, বিয়ের দিন হটাৎ ফার্নিচারের আবদার করে বসে মো. রাজু ও তার পরিবার। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয় দুপক্ষের মধ্যে। এসময়ও তিনিসহ এলাকার অনেকই বিয়েতে নারাজি দিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

এরপরও নানা সময় বিভিন্ন অজুহাতে রনি টাকা আদায় করতো বলে তারা জানতে পারেন এবং গ্রীষ্মের ফল আম কাঠালের জন্যও তাকে মানুষিক ভাবে অত্যাচার করেন। সম্প্রতি কোরবানির জন্য একটি ছাগল চেয়ে সোনিয়কে নানান ভাবে অত্যাচার করার কথাও তিনি শুনেছেন।হটাৎ কোরবানির আগের রাতে তিনি জানতে পারেন সোনিয়াকে ঘর থেকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। এতে আমরা সবাই হতবাক হয়ে গেছি। জয়নাল আবেদীন মানিক বলেন, এটি পরিকল্পিত হত্যা কান্ড। তারা যৌতুকের জন্য এই মেয়েকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমরা এলাকার সকলে ঘটনার সাথে জড়িত প্রত্যেক দোষীর কঠোর থেকে কঠোর শাস্তি চাই যাতে যৌতুক যেন কেউ আর চাইতে না পারে।

বিজ্ঞাপন

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খাইরুল ইসলাম জনবাণীকে জানান, ঘটনাস্থল থেকে ৯৯৯ জরুরী নাম্বারে ফোন করা হলে আমাদের টিম ঘটনাস্থলে যায়। ততক্ষণে রুমা আক্তার সোনিয়ার দেহকে তারা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা জানতে পারি সোনিয়া মারা গিয়েছে এবং তার দেহটি ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। প্রথমে ভুক্তভোগীর পরিবার মামলা না করে দেহ নিয়ে চলে যেতে চান। পরে নিহতের মা ফিরোজা বেগম বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করলে ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত শেষে সোনিয়ার স্বামী মো. রাজু ও শাশুড়ী পারুল বেগমকে আটকে করে আদালতে সোপর্দ করি। 

তিনি বলেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলে আমরা পূর্ণ তদন্ত শুরু করবো এবং ঘটনার সাথে জড়িত সকলকেই আইনের আওতায় আনবো।

বিজ্ঞাপন

ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ ঘটনার সাথে জড়িত ২ জন গ্রেফতার হওয়ায় অন্যান্য জড়িতরা তাদের উপর কয়েকদফা হামলার চেষ্টা চালিয়েছে। রুমা আক্তার সোনিয়া হত্যার সকল দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবী জানান তারা। যাতে যৌতুকের জন্য আর কোন মায়ের কোল অকালে খালি না হয়।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD