Logo

ঝাউবন কেটে উজাড় উপকূল

profile picture
জনবাণী ডেস্ক
৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ০৩:০৭
42Shares
ঝাউবন কেটে উজাড় উপকূল
ছবি: সংগৃহীত

মেরিন ড্রাইভের সাথে লাগোয়া এ সড়কে সৈকতের পাড়ে দুর্বৃত্তরা দৃষ্টিনন্দন ঝাউবন

বিজ্ঞাপন

কক্সবাজারের টেকনাফে সাবরাং পর্যটন পার্কের ভেতরে সমুদ্রসৈকতের তীরে সাড়ে চার কিলোমিটার ইটের রাস্তা শেষ হয় শাহপরীর দ্বীপে। মেরিন ড্রাইভের সাথে লাগোয়া এ সড়কে সৈকতের পাড়ে দুর্বৃত্তরা দৃষ্টিনন্দন ঝাউবন কেটে উজাড় করছে উপকূল। ফলে সাগরের ঢেউয়ের আঘাতে ভাঙছে রাস্তা, ঝুঁকিতে রয়েছে বেজার হাজার একর জমি। 

অভিযোগ রয়েছে, নিয়ম উপেক্ষা করেই বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজার) সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজছে  বনবিভাগের সহযোগিতায় স্থানীয় কাঠ ব্যবসায়ীদের কাছে বনের গাছগুলো বিক্রি করছে দিনের পর দিন। 

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল (বেজার) সাবরাং ট্যুরিজম পার্কেও ভেতরে টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ সড়কে দেখা যায় ঝাউবন গাছ কাটার নির্মম চিত্র। ঝাউবনের ভেতরে গিয়ে জিরো পয়েন্ট, কাটা বনিয়া, কচুবনিয়াসহ চার-পাচঁ র্স্পটে হাজারের বেশি গাছ কেটে নিয়ে যাওয়ার প্রমাণ মিলেছে। সারিবদ্ধ গাছের মাঝে মাঝে ফাঁকা। পড়ে রয়েছে অসংখ্য কাটা গাছের গোড়া। কিছু কিছু গোড়া বালু দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। বাগানের অধিকাংশ গাছে রয়েছে করাত ও দা দিয়ে কাটার চিহ্ন। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঝাউবন থেকে উজাড় হওয়ার গাছগুলো স্থানীয় বেশ কয়েকটা স- মিলে সন্ধান পাওয়া গেছে। উজাড় হওয়া গাছগুলো স্তুপে পরে থাকতে দেখা গেছে। এছাড়া অনেকের বাড়ি ঘরেও রয়েছে। স- মিলগুলো হচ্ছে, টেকনাফের সাবরাংয়ের আছরবনিয়ার মেসার্স মোস্তাক স- মিল এন্ড ষ্টীল-১, সাবরাং বাজারের পশ্চিম পাশের মামুন স- মিল, সাবরাং রাস্তার মাথার মেসার্স এস. এন টিম্বার এন্ড স- মিল। এসব স- মিলের শ্রমিকরা কলে ঝাউবনের গাছগুলো কাটতে দেখা যায়। 

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

তার মধ্য মামুন স- মিলে সংরক্ষিত ঝাউ গাছের বিষয়ে সাবরাংয়ের কাঠ ব্যবসায়ী সাকের আহমেদ বলেন, "আমি বৈধ উপায়ে বেজার দায়িত্বরত কর্মকতা শাহীন সরওয়ারের কাছ থেকে গাছগুলো ক্রয় করেছি। তাই সৈকত থেকে গাছ কেটে নিয়ে এসেছি। তবে সাগরে ঢেউয়ের আঘাতে ভেঙ্গে যাওয়ায় গাছগুলো বিক্রি করে তারা। প্রতিটি গাছ দুই‘শ থেকে তিন‘শ টাকা দামে ক্রয় করি। কিছু টাকাও পরিশোধ করেছি। ক্রয় করা গাছের প্রমাণ স্বরুপ বেজার লগো ও স্বাক্ষরযুক্ত  নথিও রয়েছে এই ব্যক্তির কাছে। বেজার এই কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের প্রমাণও রয়েছে তাঁর ফোনে।

অভিযোগের বিষয়ে সাবরাং পার্কের (বেজার) সাঁটলিপিকার ও কাম কম্পিউটারে দায়িত্বরত কর্মকর্তা শাহীন সরওয়ার সোহাগ বলেন, ‘সাগরের কূলে উপচে পড়া ঢেউয়ে পড়ে যাওয়া ঝাউ গাছগুলো বিক্রির উদ্দেশ্যে স্থানীয় ওই কাঠ ব্যবসায়ীর সাথে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু এই গাছগুলো বিক্রি করা হয়নি। বিক্রির প্রমাণ স্বরুপ বেজার লগো ও সাক্ষরিত নথিপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি ভুয়া বলে অস্বীকার করেন। বেচাবিক্রির এইসব নথিগুলো অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল করে তৈরি করেছেন বলে জানান তিনি।’

বিজ্ঞাপন

তবে সাবরাং পার্কের (বেজার) সহকারি পরিচালক তন্ময় হাসান বলেন, ‘বেজার লগো দেয়া গাছ বিক্রির যে নথি দেখানো হয়েছে, সেখানে স্বাক্ষর রয়েছে সেটি আমার না। এটি ভূয়া কাগজ মনে হচ্ছে। ইতি মধ্য এ বিষয়ে কতৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। যদি ঝাউবন বিক্রিতে আমাদের কোন সদস্য জড়িত থাকে, উর্ধ্বতন কতৃপক্ষ  তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্তা গ্রহন করবেন।’ 

বিজ্ঞাপন

উপকূল বন বিভাগের সূত্রমতে, মেরিন ড্রাইভের লাগোয়া সাবরাং ট্যুরিজম পার্কের ভেতরে টেকনাফ-শাহপরীর দ্বীপ পর্যন্ত সমুদ্রসৈকতের পাড়ে ৫ হেক্টর বালুচরে ৪০ হাজার ঝাউগাছ লাগানো হয়। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে উপকূলীয় জনগণের সম্পদ রক্ষায় উপকূল বন বিভাগ এসব গাছ লাগিয়েছিল।

তবে স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহীন জানান, ‘বেজার অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় ঝাউবনের গাছগুলো নির্বিচারে কাটা হচ্ছে। ভোর আর সন্ধ্যা হলে এখানে গাছ কাটার প্রতিযোগিতা শুরু হয়। মূলত ঝাউবন কাটার কারনে ব্যাপক হারে ভাঙছে এই সড়কটি। আমাদের এলাকা প্রবল ঘুর্ণিঝড় এলাকা। প্রতি বছরই বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয়। তার মধ্য উপকূল রক্ষার দেয়াল এসব ঝাউবন উজাড় করা হলে আমরা সবাই ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্য পরবো।’   

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

গাছ কাটার বিষয়টি শুনেছি- উল্লেখ করে উপকূলের বনের পাহারাদার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বেজার অধীনে হওয়ায় ঝাউবন আমরা পাহারা দিয় না। এছাড়া বাকি যেসব উপকূলে ঝাউবন রক্ষায় আমরা রাত-দিন না ঘুমিয়ে পাহারা দিচ্ছি। সেখানে গাছ কাটার বিষয়ে যে অভিযোগ, আনা হয়েছে সেটা সম্পূূর্ণ মিথ্যা। তবে স্থানীয় লোকজন ঝাউগাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে- বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেছি।

জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আদনান চৌধুরী  বলেন, ‘ঝাউবন আমাদের উপকূল রক্ষা করে। যদি অবৈধভাবে কোন কর্মকর্তা ঝাউবন গাছ বিক্রির সাথে জড়িত থাকে, বেজা কতৃপক্ষের সাথে বলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

এসডি/

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD