Logo

আন্দোলনে নিহত বরগুনার ১০ পরিবার অনিশ্চয়তায়!

profile picture
জনবাণী ডেস্ক
১ অক্টোবর, ২০২৪, ২৩:৩৫
73Shares
আন্দোলনে নিহত বরগুনার ১০ পরিবার অনিশ্চয়তায়!
ছবি: সংগৃহীত

সরকার জেনো এর হত্যার বিচার করে দেশবাসীকে দেখায়।

বিজ্ঞাপন

বাবার কাছে লেখা মেয়ের শেষ চিঠিটা পড়তে পারে নাই বাবা। বাবা আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি সে কথাটা আর বলতে পারলো না। বাবা আমার জন্য সুন্দর ডিজাইন করে ড্রেস এনো। ছোট মুখে বিষাদের কালো মেঘ জমা আছে। আর সেই কালো মেঘ থেকে ফোঁটা ফোটা অশ্রু ঝরছে আর অশ্রু ঝরা কন্ঠে কথা গুলো বলছিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত রিয়াজুল ইসলামের মেয়ে তুবা। 

ঢাকার সাভারের বাইপালে প্রীতি গ্রুপের পোশাক ডিজাইনের হিসেবে কাজ করতেন বরগুনা জেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের উরবুনিয়া গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম। ৫ আগস্ট এর ছাত্র জনতার বিজয় উল্লাসের মিছিলে নেমেছিলেন রিয়াজুল। তারপর থেকে আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরিবারের সদস্যরা হন্য হয়ে খুঁজে অবশেষে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাওয়া গেল মাথায় গুলিবিদ্ধ রিয়াজুলের মরদেহ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি এই রিয়াজুলকে হারিয়ে প্রতিবন্ধী শাশুড়ি আর মেয়েকে নিয়ে অনিশ্চয়তা দিন কাটাচ্ছেন মরিয়ম।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

নিহত রিয়াজুলের স্ত্রী মোসাঃ মরিয়ম বলেন, বিজয় উল্লাস যে শোকে পরিণত হবে বুজো নায় আমার স্বামী। স্বাধীনতার স্বাদ পেয়ে সবার সাথে রাস্তায় নেমে ছিলো,পরে তার দেহটা খুজে পায় মর্গে। মাথায় গুলি লেগেছিলো। আমার ছোট্র মেয়েটা বাবার জন্য চিঠি লিখে ছিলো, তার উওরটুকু দিতে পারে নায়। ছোট মেয়েটা নিয়ে জীবন চলায় কি যে যন্ত্রণা তা কাউকে বোজাতে পারবো না। সরকার জেনো এর হত্যার বিচার করে দেশবাসীকে দেখায়। 

৫ আগস্ট দেশে নানা কিছিু উল্টোপাল্টো হয়েছে তেমনি অনেক মায়ের বুক খালী হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে ১০ জনের বাড়ি বরগুনা জেলায়। এদের মধ্যে বরগুনা সদরে ৪, বেতাগী, বামনা ও তালতলী উপজেলার ২ জন করে। দিনমজুর, রিক্সা ও ভ্যান চালক, মোটর মেকানিক, প্রাইভেটকার চালক, রাজমিস্ত্রী ও গার্মেন্স শ্রমিকসহ নানা পেশায় জড়িত ছিলেন এরা। এদের মৃত্যুতে বন্ধ হয়ে গেছে পরিবারের আয়ের পথ। বর্তমানে নিহতদের পরিবারে একদিকে চলছে শোকের মাতম, অন্যদিকে বিরাজ করছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আতঙ্ক।

বিজ্ঞাপন

আতঙ্ক, অনিশ্চয়তায় আর অভাব অনটনে মানবেতর জীবনযাপন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকায় নিহত বরগুনার ১০ পরিবারে সদস্যরা। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি কে হারিয়ে দিশেহারা স্বজনরা।

বিজ্ঞাপন

জীবিকার তাগিদে ঢাকায় দিনমজুরের কাজ করতেন বরগুনার সদর উপজেলার কালিরতবক গ্রামের মিজানুর রহমান। ছাত্র জনতার আন্দোলনে ২০ জুলাই কাজ সারাদিন শেষে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন মিজানুর। পরে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। একদিকে এনজিওর ঋণের বোঝা অন্যদিকে পরিবারের জীবিকার তাগিদে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন স্ত্রী-সন্তান এবং বৃদ্ধ বাবা।

নিহত মিজানুর রহমানের মা শাহিনুর বেগম বলেন,মোর পোলা কোনও দল করে না,মোর পোলা ভ্যান গাড়ী চালাইতো। পোলাডা ফোন দিয়া কইছিলো মা কাইল বাড়ি আমু চিন্তা কইরো না,মোরা ভালো আছি। পোলাডা বাড়ি ঠিক আইছে তবে লাশ হইয়া। হুনারহুনা হুনছি পুলিশের গুলিতে মরছে পোলাডা। মুই দুইডা নাতি নইয়্যা কই গিয়া দাড়ামু! সব শেষ হইয়া গেছে মোর। মুই মোর পোলার বিচার পাই।

বিজ্ঞাপন

শুধু তাই নয়, বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের নীলখোলা গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে টিটু হাওলাদার, একই ইউনিয়নের উত্তর করুনা গ্রামের মো: তৈয়ব আলীর ছেলে মো: লিটন পুলিশের গুলিতে মারা যান। 

বিজ্ঞাপন

নিহত লিটন বাবা মো.তৈয়ব বলেন, বাবার কাধেঁ ছেলের লাশ এর থেকে কি আর যন্ত্রণা থাকতে পারে। আমার সংসারের কুপি বাতি ছিলো টিটু। হঠাৎ কুপি বাতি নিভে গেছে আর আমার পুরো পরিবার অন্ধকারে পড়ে গেছে। সরকার আমাদের সহযোগিতা করলে আলোর মুখ দেখবো। মরার আগ পর্যন্ত ছেলের হত্যার বিচারটুকু চাই।

বিজ্ঞাপন

নিহত টিটু হাওলাদারের স্ত্রী আয়েশা বেগম বলেন, আমার এক আত্মীয় ফোন করে বলে তোমার স্বামীর গায়ে গুলি লেগেছে। সে ধানমন্ডির গ্রিন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মগজ বের হয়ে গেছে। শুনে মাথা আকাশ ভেঙে পড়লো।

বিজ্ঞাপন

তিনি আরো বলেন, মোর স্বামী তো কোনও দল করে না, সে তো  আন্দোলনও করে না, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। । তারপরেও বিনা অপরাধে তাকে জীবন দিতে হলো। ছেলেমেয়ে বাবা বাবা বলে পাগল। আমি অবুঝ সন্তানদের কী বুঝ দেব? খাওয়ার মতো ঘরে বাজার নেই। ঢাকায় যাওয়ার সময় আমাকে খালি হাতে রেখে গেছে। ওদের কীভাবে এখন বড় করব, আর বুঝে উঠতে পারছি না।

বরগুনার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, পরিবারের কর্মক্ষম মানুষটিকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারগুলো, থামছেনা শোকের মাতম। তবে নিহতদের পরিবারগুলোকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। তাদের পাশে আমরা সব সময় আছি এবং খোঁজ খবর নিচ্ছি। আমাদের সাধ্যমত সহযোগিতা করছি। তিনি আরও বলেন, নিহত মিজানুরের ঋণ মওকুফ করা হয়েছে। 

বিজ্ঞাপন

নিহত কেউই ছিলেন না রাজনৈতিক কর্মী বা আন্দোলনকর্মী। তবুও তারা দুর্ঘটনার শিকার। এসব হত্যাকাণ্ডের বিচার এবং তাদের জীবনের নিরাপত্তার দাবি স্বজনদের ও হত্যাকারীদের বিচার দাবি করেন পরিবারের সদস্যরা।

আরএক্স/

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD