Logo

উদ্যোক্তা তৈরির নামে ভুয়া মরণব্যাধি হারবাল পন্য বিক্রি করছে জি এম আই টি

profile picture
জনবাণী ডেস্ক
৫ মার্চ, ২০২৫, ০১:১৭
69Shares
উদ্যোক্তা তৈরির নামে ভুয়া মরণব্যাধি হারবাল পন্য বিক্রি করছে জি এম আই টি
ছবি: সংগৃহীত

উদ্যোক্তা তৈরির নামে ভুয়া মরণব্যাধি হারবাল পন্য বিক্রি করছে জি এম আই টি

বিজ্ঞাপন

দেশের চাকরি প্রত্যাশী স্বল্প শিক্ষিত বেকার যুবক যুবতীদের টার্গেট করে ‘এলিট কর্পোরেশন’ নামক একটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের আড়ালে মানহীন হারবাল পণ্য বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। জানা যায়, চক্রটির মূলহোতা আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত কামরুল কায়েস চৌধুরী। তার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে পরিচালিত আইটি ফার্ম ‘জি এম আইটি’ নামক আরেকটি প্রতিষ্ঠানে উদ্যোক্তা তৈরি নামে বেকার, নাবালক ও চাকরি প্রত্যাশিদের ব্যবসার ফাঁদে ফেলে মাল্টিপারপাসের আদলে মানহীন হারবাল পণ্য নিয়মিত বিক্রি করানো হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে টিকটক সেলিব্রেটিদের দিয়ে আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন তৈরি করে ক্রেতাদের সরলতাকে কাজে লাগিয়ে আয়ুর্বেদিক ও হারবাল ওষুধের নামে ক্ষতিকর রাসায়নিক মিশ্রিত পণ্য ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে এই চক্রটি।

তথ্যমতে, চক্রের প্রতারণার প্রথম ধাপে হচ্ছে স্কুল-কলেজের বেকার শিক্ষার্থীদের উদ্যোক্তা তৈরির মোড়কে জি এম আইটি কোর্স তথা অনলাইন মার্কেটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিং। এসমস্ত কোর্সের নামে এলিট কর্পোরেশনের মানহীন পণ্য সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লাটফর্মে বিক্রি করানো হয়।

বিজ্ঞাপন

প্রতারণার দ্বিতীয় ধাপে সংশ্লিষ্ট সরকারি বিভিন্ন দপ্তর যেমন, বিএসটিআই, বাংলাদেশ সাইন্সল্যাব, ওষুধ প্রশাসন, সিএমপি, খাদ্য অধিদপ্তর সহ বিভিন্ন দপ্তরের জাল ও ভুয়া ছাড়পত্র তৈরি করে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করানো হয়। পরবর্তীতে ভোক্তার হাতে তুলে দেয়া হয় এলিট কর্পোরেশনে বিভিন্ন মানহীন পণ্যগুলো। তৃতীয় ধাপে রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও সেলিব্রেটিদের দিয়ে বিভিন্ন আকর্ষণীয় আয়োজন ও বিজ্ঞাপন তৈরি করা। চতুর্থ ধাপে তারা এ বিজ্ঞাপনগুলো উদ্যোক্তাদের দিয়ে, তাদের ইউটিউব, ফেসবুক, টিকটক আইডিতে ব্যাপকভাবে বিজ্ঞাপন আকারে মার্কেটিং করানো হয়। যাতে দেশের অসচেতন সাধারণ জনগণের মুঠোফোনে পৌঁছে যায়। পঞ্চম ধাপে ক্রেতাদের হাতে এসব ওষুধ বা পণ্য পৌঁছিয়ে দিতে বিভিন্ন ধরনের কুরিয়ার সার্ভিস যেমন পাঠাও, স্টিড ফাস্ট, সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করে তারা। এর ফলেই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় চক্রটি।

বিজ্ঞাপন

সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরের ৯নং ওয়ার্ড পশ্চিম কুয়াইশ চৌধুরী বাড়িতে এলিট কর্পোরেশনের হারবাল পণ্য তৈরির একটি কারখানা ছিল যেখানে বিভিন্ন হারবাল প্রোডাক্ট তৈরি করা হতো। গত ২০২৩ সালের জুন মাসে সংশ্লিষ্ট ভ্রাম্যমাণ আদালত একটি অভিযান পরিচালনা করে কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু সেই কারখানাটি বন্ধ হলেও বায়েজিদ, পতেঙ্গাসহ বিভিন্ন জায়গায় এখনো চক্রটির গোপন কারখানাতে দেদারসে হারবাল পণ্যগুলো তৈরি হচ্ছে। ২০২৩ সালে আগস্ট মাসের ৩ তারিখ বিপুল পরিমাণ ভেজাল হারবাল ওষুধ ও নকল প্রসাধনী সামগ্রী বিক্রির দায়ে চট্টগ্রাম মহানগর ডিবি (উত্তর ও দক্ষিণ) এসব অনুমোদনহীন পণ্য উদ্ধার সহ গ্রেফতার করে ৭ জনকে। নগরের সিএন্ডবি কলোনীর বিপরীত পাশের অফিস থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা ছিলেন মো. আইয়ুব হেলালী, আদর চৌধুরী ওরফে হিমু, মো. শরীফ হাসান, মো. সরোয়ার হোসেন, মো. ইমরানুল হক, আব্দুর রহমান এবং আব্দুল্লাহ আল ফয়সাল ইমন।

পরবর্তীতে আবারো ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক পত্রিকায় ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়ে উঠে গোয়েন্দা সংস্থা ডিবির। ডিবির সুপরিকল্পিত ফাঁদে ভুয়া আয়ুর্বেদিক ও হারবাল ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি এলিট কর্পোরেশনের আরেকটি কারখানায় অভিযান করে বিপুল পরিমাণ নকল যৌন ওষুধ জব্দ করা হয়।

বিজ্ঞাপন

চক্রটির ফাঁদে পড়া নাম প্রকাশ অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, তৎকালীন আওয়ামী সরকার থাকাকালীন চট্টগ্রামের আওয়ামী ক্যাডার বাহিনী দিয়ে তার ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছি। ঢাল হিসেবে ষোলকবহর ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোরশেদ আলমকে জিএমআইটির উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়। এরপর পাঁচলাইশ থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকে উপদেষ্টা হিসেবে রাখা হয়েছিলো। আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর জিএমআইটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল কায়েস এখনো তার অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। 

এ বিষয়ে জিএমআইটির চেয়ারম্যান কামরুল কায়েস চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। 

বিজ্ঞাপন

এদিকে, ২০২৪ সালে অভিযানের পর তার পণ্যগুলোর মোড়ক পরিবর্তন, পণ্যের নাম পরিবর্তন করলেও ভেতরে ক্ষতিকর পণ্য রয়েই গেছে। ২০১৪ বাংলাদেশ বিজ্ঞাপন নীতিমালা আইন অনুযায়ী, চতুর্থ অধ্যায় ৪.৩.৪ অনুচ্ছেদে বর্ণনা আছে যে শারীরিক ও মানসিক অক্ষমতা বা দৈহিক আকার ও বর্ণকে কেন্দ্র করে কোন বিজ্ঞাপন প্রচার করা যাবে না। ৪.৪.৪ অনুচ্ছেদ আরও বর্ণনা করা আছে যে কোন খাদ্য বা পানীয় এর বিজ্ঞাপনে স্বাস্থ্যগত প্রভাব সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে এবং সুপার ইম্পোজ করে স্পষ্টাক্ষরে দেখাতে হবে। নীতিমালা আইন ও অনুসন্ধানে গোপন সূত্র পাওয়ার তথ্যের সাথে এলিট কর্পোরেশনে কার্যক্রমের কোন মিল পাওয়া যায়নি। ভোক্তার বিশ্বস্ততা অর্জন করতে প্রতারণার অনেকগুলো ধাপ পার করেছেন যেমন, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপির) কোন ছাড়পত্র দেয়ার নিয়ম না থাকলেও তিনি নিজের তৈরি করে সেটি মেসেঞ্জারের মাধ্যমে ভোক্তাদের কাছে প্রদর্শন করছে। শুধু তাই নয় নিজেই তৈরি করেছেন বিভিন্ন জাল টেস্ট রিপোর্ট, বিএসটিআই ছাড়পত্র ও বাংলাদেশ সাইন্সল্যাব এর ছাড়পত্র। চট্টগ্রাম (বিএসটিআই) সহকারী পরিচালক নিখিল রায় বলেন, আমাদের ২৯৯টি পণ্যের তালিকায় এই পণ্য বা ওষুধ একটিও নেই। বিএসটিআই এর ছাড়পত্র পাওয়া এত সহজ বিষয় নয়। যে কেউ এসে চাইলেই সেটা আমরা দিয়ে দিতে পারিনা। তাদের বিজ্ঞাপনে বিএসটিআইশের সার্টিফাইড বলার বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD