মালিক, শ্রমিক ও চালকদের কোটি কোটি টাকা লোকসান, মানবেতর জীবন যাপন

চট্টগ্রাম মহানগরীতে দীর্ঘ ৭ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে অটো টেম্পুর রেজিস্ট্রেশন ও পারমিট, যার কারণে প্রায় কয়েক হাজারেরও বেশি অটো টেম্পু বিভিন্ন গ্যারেজে অচল পড়ে রয়েছে। এতে গাড়ির মালিকরা ভয়াবহ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন এবং সামাজিকভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
বিজ্ঞাপন
পাশাপাশি, অনেক অটো টেম্পুর অবস্থাও শোচনীয় হয়ে উঠছে। যদি এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে, তাহলে এগুলো দ্রুত স্ক্র্যাপ হয়ে যাবে, যা গাড়ির মালিক, শ্রমিক এবং চালকদের জন্য আরো বড় সমস্যার সৃষ্টি করবে।
নগরীর কোতোয়ালী এলাকার মোহাম্মদ নজরুল নামের এক গাড়ি ব্যবসায়ী এই বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, "আওয়ামীলীগ সরকারের কিছু অযোগ্য নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে নতুন অটো টেম্পুর রেজিষ্ট্রেশন ও পারমিট দেওয়ার কাজ দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। এর ফলে পুরাতন গাড়ির দাম বেড়ে গেছে, এবং অটো টেম্পু চালকদেরও অতিরিক্ত 'দৈনিক জমা' দিতে হচ্ছে। এতে চালকদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে, আর যাত্রীদেরও অতিরিক্ত ভাড়া এবং গাড়ির সংকটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।"
আরও পড়ুন: ‘জীবন-জীবিকা রক্ষায় নদ-নদী বাঁচাতে হবে’
বিজ্ঞাপন
মালিকদের মতে, এটি তাদের জন্য মহাবিপর্যয় হতে পারে, কারণ কোটি কোটি টাকা খরচ করে কিনে রাখা এই গাড়িগুলো এখন অনেকে আর ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণও করতে পারছেন না।
আরেকজন অটো টেম্পু মালিক মোহাম্মদ নাঈম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, "আমরা বেশ কয়েক বছর ধরে রেজিষ্ট্রেশন ও পারমিটের জন্য আবেদন করেছি, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। গাড়ি চালাতে পারছি না, আবার গ্যারেজে রাখলেও প্রতিদিন গাড়ির অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে। আমাদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে, আর ব্যাংক লোনের কিস্তি মেটানো দুঃসাধ্য হয়ে উঠেছে।"
তিনি আরও জানান, নগরীতে অপরিকল্পিত ভাবে অটো টেম্পু চলাচলের জন্য লাইন/রোড তৈরি করার কারণে যাত্রীদেরও অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। এখনও নগরীর অনেক রাস্তায় অটো টেম্পু চলাচল না করার কারণে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ভিন্ন পরিবহন ব্যবহার করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এই পরিস্থিতি যদি দ্রুত সমাধান না হয়, তবে নগরীজুড়ে যাত্রীদের ভোগান্তি আরো বাড়বে। নতুন করে অটো টেম্পুর রেজিস্ট্রেশন ও পারমিট দেওয়া হলে যাত্রীদের জন্য সুবিধা হবে এবং অনেক বেকার যুবকের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয় গ্যারেজ মালিকরা জানিয়েছেন, অনেক অটো টেম্পু মালিকের গাড়ি গুলো রাস্তায় চলাচল না করায় এবং গ্যারেজে পড়ে থাকায় গাড়িগুলোর অনেক যন্ত্রাংশ এখন শোচনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে। এসব অটো টেম্পুগুলো মেরামতের খরচ বেড়েছে। আর যেহেতু মালিকরা গাড়ি চালাতে পারছেন না, তারা আর্থিকভাবে আরও বিপাকে পড়েছেন। বিশেষত, চট্টগ্রামের মত বড় শহরের জন্য অটো টেম্পু এক গুরুত্বপূর্ণ গণপরিবহন ব্যবস্থা হলেও বর্তমানে তারা সংকটের মুখে রয়েছে।
মালিক-শ্রমিকরা এ ব্যাপারে বিআরটিএ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ারিং), চট্টগ্রাম মেট্রো আরটিসির সদস্য সচিব এবং সিএমপির পুলিশ কমিশনারের কাছে একাধিকবার আবেদন করেছেন, কিন্তু এই বিষয়ে এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। দ্রুত সময়ের মধ্যে রেজিষ্ট্রেশন ও পারমিট কার্যক্রম পুনরায় চালু না হলে, তাদের পক্ষে আর ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। এর ফলে, শুধু মালিকরা নয়, চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণও গণ-পরিবহন সংকটের শিকার হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
এই বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বা পরিবহন বিভাগের কোনও বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি, তবে আশা করা যাচ্ছে, খুব শিগগিরই সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দ্রুত এই সংকটের সমাধান না হলে, নগরীতে অবৈধ যানবাহনের কারণে যানজট আরও তীব্র হতে পারে এবং জনগণের যাতায়াতে বাধা সৃষ্টি হবে। সেক্ষেত্রে সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং অটো টেম্পুর রেজিস্ট্রেশন ও পারমিট কার্যক্রম পুনরায় শুরু করা।এছাড়া, গ্যারেজে পড়ে থাকা গাড়িগুলোর রক্ষণাবেক্ষনের জন্য সরকারি অনুদান বা সহায়তা প্রদান করা যেতে পারে, যাতে মালিকদের ক্ষতি কিছুটা হলেও কমানো যায়।
যাত্রীদের ভোগান্তি ও ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে দ্রুত সমাধান প্রত্যাশা স্থানীয় জনগণ এবং অটো টেম্পু মালিকরা আশা করছেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যাতে নগরীজুড়ে যাত্রীদের ভোগান্তি লাঘব হবে এবং সাধারণ মানুষসহ অটো টেম্পু মালিক-শ্রমিক ও চালকরা তাদের ক্ষতির সম্মুখীন না হন।