তিন দিনব্যাপী লালন উৎসব শুরু, ভক্তদের ঢল

কুষ্টিয়ার ছেউড়িয়ায় শুক্রবার (১৭ অক্টোবর), ১ কার্তিক (১৪৩২ বঙ্গাব্দ) থেকে শুরু হয়েছে বহু প্রতীক্ষিত লালন উৎসব ও লালন মেলা। আধ্যাত্মিক সাধক বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৫তম তিরোধান দিবসকে ঘিরে আয়োজিত তিন দিনের উৎসবে দেশের নানা প্রান্ত থেকে ভক্ত, সাধক ও দর্শনার্থীরা ভিড় জমিয়েছেন আখড়াবাড়ি প্রাঙ্গণে।
বিজ্ঞাপন
এবছর লালন উৎসব শুধু কুষ্টিয়ার আখড়াবাড়িতে নয়, এবার জাতীয় পর্যায়ে ঢাকা ও দেশের ৬৪ জেলাতে উদযাপিত হবে এই লালন উৎসব।
লালন একাডেমি ও জেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এ উৎসব চলবে ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত। প্রতিদিন থাকবে ভাবগান, আলোচনা, আলোকসজ্জা, বাউল গানের আসর এবং আখড়ার সাধুদের আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান। লালনের দর্শন, গান ও মানবতার বার্তা ধারণে উন্মুখ মানুষজন গান, ভাবগান, আলোচনা সভা আর আড্ডায় ভরিয়ে তুলবেন মেলার মাঠ।
আজ বিকেল ৪টায় উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। স্বাগত বক্তব্য রাখবেন সংস্কৃতি সচিব মো. মফিদুর রহমান। প্রধান আলোচক হিসেবে থাকবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন লেখক ও গবেষক প্রফেসর গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক।
বিজ্ঞাপন
অন্য বক্তাদের মধ্যে থাকবেন বিশিষ্ট লেখক ফরহাদ মজহার এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আল মামুন। সভাপতিত্ব করবেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক ও লালন একাডেমির সভাপতি আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন। উদ্বোধনী দিনে সদ্যপ্রয়াত লালন সংগীতশিল্পী ফরিদা পারভীনকে স্মরণ করে একটি তথ্যচিত্রও প্রদর্শিত হবে।
দ্বিতীয় দিনের আয়োজনে (১৮ অক্টোবর) প্রধান অতিথি থাকবেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। প্রধান আলোচক থাকবেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রশিদুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাবেক এমপি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমি, অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, বিএনপি নেতা কুতুব উদ্দীন ও প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন সরকার, এনসিপির জান্নাতুল ফেরদৌস টনি এবং গণ অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. রাশেদুজ্জামান।
বিজ্ঞাপন
সমাপনী দিনে (১৯ অক্টোবর) প্রধান অতিথি খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার। মুখ্য আলোচক থাকবেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআর বিভাগের অধ্যাপক মো. খালেদুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন পুলিশের খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি মো. রেজাউল হক, বিজিবি ৪৭ সেক্টরের কর্নেল আহসান হাবীব এবং কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান।
এবার লালন উৎসব ঘিরে নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। জেলা পুলিশ জানিয়েছে, পুরো আখড়া এলাকায় সিসিটিভি নজরদারি ও পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।
বিজ্ঞাপন
একজন আগত দর্শনার্থী বলেন, “লালনের গান শুধু গান না, এটা মানুষের ভেতরের ভালোবাসা জাগায়। প্রতি বছরই এখানে এসে মনটা অন্যরকম শান্তি পায়।”
এবারের লালন উৎসব ঘিরে ছেউড়িয়ার আখড়াবাড়ি যেন নতুন সাজে সেজেছে। লালন মাজার, উন্মুক্ত মঞ্চ আর চারপাশের স্টলগুলোতে ছোঁয়া লেগেছে নান্দনিকতার। মেলার মাঠজুড়ে ঝুলছে রঙিন বাতি, আঁকা হয়েছে দেয়ালজুড়ে লালনের দর্শন ও মানবতার প্রতিচ্ছবি।
মেলায় এবার স্থাপন করা হয়েছে ১২০টি স্টল, যেখানে দেশীয় হস্তশিল্প, বাদ্যযন্ত্র, পোশাক, আর লোকজ খাবারের সমাহার। পুরো আয়োজনটির দায়িত্বে রয়েছে একটি অভিজ্ঞ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট টিম, যারা নকশা থেকে নিরাপত্তা, সবখানেই রেখেছে যত্নের ছাপ।
বিজ্ঞাপন
উন্মুক্ত মঞ্চে রঙের ছোঁয়ায় আনা হয়েছে বৈচিত্র্য; কাঠ ও কাপড়ের মিশ্রণে তৈরি নতুন ব্যাকড্রপে ফুটে উঠেছে বাউল জীবনের রঙ। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা বলয়।
প্রতিবারের মতো এবারও লালন আখড়া চত্বরে মিলিত হবে দেশি-বিদেশি দর্শক, সাধু-বাউল আর ভক্ত-অনুরাগীদের এক অপূর্ব স্রোত।
তিন দিনব্যাপী এ উৎসবে ভাবগানের আসরে অংশ নিচ্ছেন জনপ্রিয় লালনশিল্পী সালমা, অর্পা খন্দকার, বিউটি, উদয়, ক্ষ্যাপা বাচ্চু, সাব্বির কোরাইশীসহ বহু শিল্পী ও সাধক-বাউল। গান, আলো আর ভালোবাসার মেলবন্ধনে ছেউড়িয়া এখন এক অনন্ত উৎসবের নাম।