Logo

জয়পুরহাটে আলু চাষি ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ২৯৫ কোটি টাকা

profile picture
জেলা প্রতিনিধি
জয়পুরহাট
৬ নভেম্বর, ২০২৫, ১৪:০০
8Shares
জয়পুরহাটে আলু চাষি ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি ২৯৫ কোটি টাকা
ছবি: প্রতিনিধি

জয়পুরহাট সদর উপজেলা পাঁচবিবির ক্ষেতলাল আক্কেলপুর কালাই উপজেলার আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা এবারের মৌসুমে মারাত্মক আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

ভালো দামের আশায় হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু এখন তাদের জন্য দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। বাজারে দাম না বাড়া ও ক্রেতা সংকটের কারণে হিমাগারে জমে থাকা আলু বিক্রি করতে না পেরে ক্ষতির বোঝা বইতে হচ্ছে তাদের।

জয়পুরহাট জেলার ২১টি হিমাগারে সংরক্ষিত প্রায় ৩৪ লাখ হাজার অর্থাৎ ২০ লাখ ৭৮ হাজার বস্তা আলুর কারণে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৯৫ কোটি টাকা।

নভেম্বর-ডিসেম্বরে নতুন মৌসুমে আলু রোপণের সময় ঘনিয়ে এলেও পুরনো আলু এখনও হিমাগারে পড়ে আছে। নিয়ম অনুযায়ী ১৫ নভেম্বর মধ্যে হিমাগার খালি না করলে সংরক্ষণের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু বর্তমান বাজারদরে আলু বিক্রি করলে প্রতি বস্তায় অন্তত ৮৫০ টাকা লোকসান হচ্ছে, ফলে কেউই আলু তুলতে আগ্রহী নন।

বিজ্ঞাপন

উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের সুড়াইল গ্রামের ব্যবসায়ী আব্দুল আলিম আকন্দ ৪ হাজার বস্তা আলু ৬৪ লাখ টাকায় কিনে হিমাগারে সংরক্ষণ করেছিলেন, ভালো দামের আশায়। কিন্তু দামের পতনে বাধ্য হয়ে তিনি সেই আলু বিক্রি করেছেন মাত্র ৪ লাখ ৯৬ হাজার টাকায়। এতে প্রায় ৫৯ লাখ টাকার ক্ষতি গুনতে হচ্ছে তাকে। দীর্ঘদিনের সঞ্চিত পুঁজি হারিয়ে তিনি এখন দিশেহারা।

জয়পুরহাট জেলার প্রতিটি হিমাগারেই চিত্র প্রায় একই। উপজেলার পল্লী কোল্ড স্টোরেজে কৃষক ও ব্যবসায়ী মিলিয়ে ৪৬০ জন আলু সংরক্ষণ করেছিলেন। শুধু এই হিমাগারেই লোকসানের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২০ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, সরকারিভাবে আলু কেনার কোনো উদ্যোগ না থাকায় তারা চরম সংকটে পড়েছেন।

আফিয়া কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার মো: জিয়া জানান, তাদের হিমাগারে দুই লাখ ৬০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষিত ছিল। নিয়ম অনুযায়ী দেড় মাস আগেই এসব আলু হিমাগার থেকে বের করার কথা ছিল, কিন্তু ব্যবসায়ীরা তা করতে পারছেন না। কারণ আলু তুললেই বড় অঙ্কের ক্ষতি নিশ্চিত। তিনবার নোটিশ দেওয়ার পরও কেউ আলু তুলছেন না, ফলে হিমাগারের কর্মীরাও কাজের অভাবে অলস সময় কাটাচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

আলু ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, প্রতিকেজি আলু উৎপাদন থেকে হিমাগারে সংরক্ষণ পর্যন্ত খরচ পড়েছে প্রায় ২৪ থেকে ২৫ টাকা। কিন্তু পাঁচমাস পর এখন হিমাগারে পাইকারিতে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১০ থেকে ১১ টাকায়। এতে প্রতিকেজিতে কৃষকদের ১৩ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে।

তিনি জানান, আলু কিনে হিমাগারে মজুত করা ব্যবসায়ীরাও একইভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

এম ইশরাত কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার আবু রায়হান জানান, সরকার আলুর ন্যূনতম দাম কেজিপ্রতি ২২ টাকা নির্ধারণ করলেও বাজারে সেই দাম কার্যকর হয়নি। প্রশাসনের তৎপরতা না থাকায় দাম ক্রমশ কমছে। বর্তমানে প্রায় ৫৫ শতাংশ আলু এখনও হিমাগারে পড়ে আছে, এতে কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিক সব পক্ষই ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

জেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.এ,কে,এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, এ বছর আলুর বাম্পার ফলনের কারণে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে, তাই দামও কমেছে। সরকার ২২ টাকা কেজি দরে ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণ করেছে এবং স্থানীয় হিমাগারগুলোতে সেই দাম বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। তবে দেশে আলুর মজুত বেশি থাকায় ক্রেতারা বেশি দামে কিনতে আগ্রহী নন।

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বাজারে সরবরাহও বেড়েছে। সরকারিভাবে ২২ টাকা কেজি দরে আলু কেনার বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত হলেও এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। রপ্তানি ও বিকল্প বাজার তৈরির প্রচেষ্টা চলছে, কিন্তু এখনো তেমন কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।

বিজ্ঞাপন

অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গত ৫ সেপ্টেম্বর আক্কেলপুর সফরে এসে ঘোষণা দিয়েছিলেন, সরকারিভাবে আলু কেনা হবে এবং টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, হিমাগার গেটে কেজিপ্রতি ২২ টাকা দরে আলু কেনা ও রপ্তানির ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু প্রায় মাস পেরিয়ে গেলেও সেই আশ্বাস বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে কৃষকেরা এখন গভীর হতাশায় ভুগছেন।

জেবি/এসএ
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD