Logo

মোরেলগঞ্জে লবণাক্ত জমিতে মৎস্য ঘেরের ভেড়িবাঁধে লাউয়ের বাম্পার ফলন

profile picture
উপজেলা প্রতিনিধি
বাগেরহাট
২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ১৯:৪৭
347Shares
মোরেলগঞ্জে লবণাক্ত জমিতে মৎস্য ঘেরের ভেড়িবাঁধে লাউয়ের বাম্পার ফলন
ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে লবণাক্ত জমিতে শস্যভাণ্ডার নামে খ্যাত উর্বর ভূমি মৎস্য ঘেরের ভেড়িবাঁধে পতিত জমিতে লাউ চাষ আগে বসতবাড়ির উঠানে অথবা আশপাশের খোলা জায়গায় মাচা পদ্ধতিতে শুধু পরিবারের খাবারের জন্য করা হতো।

বিজ্ঞাপন

সময়ের ব্যবধানে কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অন্য ফসলের মতো বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে পদ্ধতিতে লাউ চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। লাউ চাষে বীজ বপনের উপযুক্ত সময় হচ্ছে ভাদ্র-আশ্বিন ও কার্তিক মাস। তবে লাউ সারা বছর চাষ করা যায়। কেবল গরম নয়, শীতেও লাউ চাষ করা যায়।

বাগেরহাট কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে ৯ টি উপজেলার মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা, ফকিরহাট, মোল্লাহাট, চিতলমারী, মংলা, রামপাল, বাগেরহাট ও কচুয়ায় ১০ হাজার ৬০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ আবাদ হয়েছে। বাগেরহাটের ৯ টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিজ জমিতে সবজি চাষ করে চাষিরা আশানুরুপ ফলন পেয়েছে। এতে অনেকেই আধুনিক পদ্ধতিতে ভালো জাতের সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সহজ পদ্ধতিতে এ উপজেলার কৃষকরা লাউ চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এতে সময় ও খরচ যেমন কম হয়, তেমনি ফলন ও দাম দুটোই ভালো পাওয়া যায়। লাউ চাষাবাদে গাছের গুণগতমান, উচ্চফলন, বাজারে দাম ভালো পাওযায় চাষিদের মাঝে এখন মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষ বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ কারণে নানা জাতের লাউ চাষ করে অধিক লাভের স্বপ্নে ঝুঁকে পড়েছেন চাষিরা। তাদের ফসল নিয়েও দুর্ভোগ ও দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় না বরং লাউ বিক্রির পূর্ব মুহূর্তে দূর-দূরান্ত থেকে পাইকারি এবং খুচরা ক্রেতারা ভিড় জমান। ফলে ফসল বিক্রি নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হয় না লাউ চাষিদের।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে কৃষকরা এখন লাউ খেতে স্প্রে ও খেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। লাউ চাষিদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, আমরা লাউয়ের চাষাবাদ করে জমি থেকে যেমন আশানুরূপ ফলন পাচ্ছি সেইসঙ্গে বাজারে দামও পেয়ে আসছি ভালো। তবে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে যদি একটু সহযোগিতা পেতাম, তাহলে লাউ চাষ করে আরো বেশি লাভবান হতাম।

উপজেলার চিংড়াখালী ইউনিয়ন এর আবুবকর নামে এক লাউ চাষি জানান, আমরা একটু বাড়তি আয়ের আশায় মাচা পদ্ধতিতে লাউ চাষ শুরু করেছি। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে গাছগুলোর গুণগতমান ঠিক রাখায় প্রতিটি গাছের ডগায় প্রচুর পরিমাণে লাউ ধরেছে। এই পদ্ধতিতে লাউ চাষে রোগবালাই অনেক কম ও ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করছি, দামও ভালো পাব। জেলা কৃষি অফিস এ অঞ্চলকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসাবে গড়ে তোলার জন্য শতশত চাষিদের তাদের পতিত জমি ফেলে না রাখার জন্য নানা ধরনের পরামর্শ প্রদান করে আসছেন।

বিজ্ঞাপন

শুধু তাই নয়, তারা যাতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন, সেজন্য তাদের হাতে-কলমে সবজি চাষের উপর নানা ধরনের প্রশিক্ষণ পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করে আসছেন। যারই অংশ হিসাবে তারা এ অঞ্চলের শতশত চাষিকে স্মল হোল্ডার কম্পিটিটিনেভস প্রজেক্ট (এসএসিপি) এর মাধ্যমে ঘেরের ভেড়িবাঁধে পতিত জমিতে চাষাবাদ শুরু করার পরামর্শ প্রদান করেন। সেই পরামর্শ নিয়ে তারা সবজি চাষের উপর মনোযোগী হন।

মোরেলগঞ্জে উমাজুরি গ্রামের সফল লাউ চাষী শাহজালাল বাবু বলেন, অন্যান্য ফসলের চেয়ে লাউয়ের চাষে লাভ বেশি এবং খরচ কম। জৈব সার ব্যবহার করার কারণে এখানে ফলন ভালো হয়। এ বছর ১০ বিঘা জমিতে লাউ সহ বিভিন জাতের চারা রোপণ করেছিলাম। প্রতি বিঘা জমিতে ৪০০-৫০০ চারা রোপণ করা যায়।

বিজ্ঞাপন

মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর এ উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে শুধুমাত্র ঘেরের ভেড়িবাঁধে মোট ৫৫ শত হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে।

মোরেলগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি শহিদুল হক বাবুল বলেন, কৃষককে সার, বীজ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করে কৃষি বিভাগ। বিভিন্ন সীড কোম্পানি পক্ষ থেকে মাঝে মধ্যে সার ও বীজ দিয়ে গরিব কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

মোরেলগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, মোরেলগঞ্জের মাটি লাউ চাষের জন্য উপযোগী। লাউ একটি প্রিয় সবজি। বছরের সব সময়ে লাউয়ের চাষ করা যায়। উপজেলায় সাড়ে পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে সবজির চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। আর এ পর্যন্ত ৪০০ হেক্টর জমিতে লাউ চাষ করেছে কৃষকরা। তবে এটি চলমান রয়েছে।উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শঙ্কর কুমার মজুমদার বলেন, বাগেরহাট জেলায় সবজি আবাদের উপর অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়েছে। সরকার সময়মত বীজ, সার ও ঋণ প্রবাহ সচল রেখেছেন। যার ফলে এবছর বিভিন্ন সবজি বিশেষ করে শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। এ বছর বাগেরহাটের কয়েকটি উপজেলায় ৯৫ হাজার টন সবজি চাষ ফলন হবে। আমরাও কৃষকদের সব ধরনের কারিগরি সহযোগিতা ও বাজারজাতকরণের পরামর্শ দিয়েছি। যাতে কৃষকরা লাভবান হতে পারে, সেজন্য আমাদের সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

জেবি/এমএল
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD