টানা কর্মবিরতিতে পাঁচ দিন স্থবির সাত কলেজ, বন্ধ কার্যক্রম

নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ও ক্লাস শুরুর নির্দেশনার প্রতিবাদে টানা তিন দিনের কর্মবিরতিতে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম কার্যত থমকে গেছে।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার কর্মসূচির তৃতীয় দিন। সামনে দু’দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় মোট পাঁচ দিন ক্লাস, পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কাজ পুরোপুরি বন্ধ থাকছে। রবিবার থেকেই নতুন কর্মসূচি ঘোষণার ইঙ্গিত দিয়েছেন শিক্ষকরা।
গত মঙ্গলবার থেকে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠনের প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভর্তি নিশ্চায়ন ও ক্লাস শুরুর নির্দেশনাকে ‘আইনসঙ্গত নয়’ উল্লেখ করে আন্দোলনে নেমেছেন বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকরা। ফলে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, তিতুমীর কলেজসহ সাত কলেজের ক্যাম্পাসে একাডেমিক কার্যক্রম একেবারে স্থবির হয়ে পড়েছে। শ্রেণিকক্ষগুলো তালাবদ্ধ, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম।
বিজ্ঞাপন
প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী আবীর হাসান বলেন, নোটিশে ভর্তির কথা বলা হলেও কাউন্টারে গিয়ে জানানো হচ্ছে সব কাজ বন্ধ। কিছুই নিশ্চিত নয়।
ইডেন কলেজের লুৎফুন্নেছা লতিফা বলেন, বিভাগে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না, কাগজপত্র কোথায় জমা দেব— বুঝতে পারছি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন নেই, অথচ ভর্তি-শিক্ষা শুরু
বিজ্ঞাপন
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতারা বলছেন, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাদেশ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয় আইনি ভাবে প্রতিষ্ঠিতই হয়নি। তবুও ভর্তি পরীক্ষা, নিশ্চায়ন ও ক্লাসের নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে— যা ‘বেআইনি ও অযৌক্তিক’।
বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের এক শিক্ষিকা প্রশ্ন তোলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ই নেই, অথচ বলা হচ্ছে ক্লাস নিন। তাহলে আমরা কী— কলেজ শিক্ষক, নাকি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক?
ঢাকা কলেজের একজন শিক্ষক বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বলছে তারা এসব শিক্ষার্থীকে নেয়নি, আবার নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ও নেই। তাহলে এই শিক্ষার্থীদের পরিচয় কী? আর কোন আইনে আমরা ক্লাস নেব?
বিজ্ঞাপন
সাত কলেজে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের প্রায় ১,২০০ শিক্ষক আছেন।
স্বাতন্ত্র্য রক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মাহফিল আরা বেগম বলেন, শিক্ষকদের আইনগত অবস্থান অনিশ্চিত। শিক্ষার্থীর পরিচয় পরিষ্কার নয়। এসব সমাধান ছাড়া ক্লাস শুরুর নির্দেশনা অসংগত।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সাত কলেজকে একীভূত করে ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ গঠনের নীতিগত সিদ্ধান্ত হলেও শিক্ষকরা বলছেন, এতে তাদের মূল উদ্বেগের কোনও সমাধান আসে না। বরং ১৭–২০ নভেম্বরের মধ্যে ভর্তি নিশ্চায়ন এবং ২৩ নভেম্বর থেকে ক্লাস শুরুর নির্দেশনাই নতুন করে আইনি জটিলতা তৈরি করছে।
বিজ্ঞাপন
ঢাকা কলেজের এক শিক্ষক বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে ভর্তির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এখন আমরা কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি, অধিভুক্তিও বাতিল। তাহলে ভর্তি করাবে কে? শিক্ষকরা তো বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় নন।
বাঙলা কলেজের এক শিক্ষক আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতি দেখানো হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।
বিজ্ঞাপন
২০১৭ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাবির অধিভুক্তিতে যাওয়া, চলতি বছরের শুরুতে তা বাতিল করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাব— সব মিলিয়ে সাত কলেজে দীর্ঘদিন ধরেই অচলাবস্থা বিরাজ করছে। কাঠামো, মডেল বা আইনগত অবস্থান নির্ধারিত না থাকায় ভর্তি ও ক্লাসের নির্দেশনা শিক্ষক-শিক্ষার্থী উভয়ের মধ্যেই অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী মারিয়া হক শৈলী বলেন, এটা জটিল বিষয় নয়। নীতিগত স্পষ্টতা না থাকায় মাসের পর মাস অস্থিরতা চলছে।
বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির নেতৃত্ব জানিয়েছে, কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি প্রত্যাহারের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি ও পরিধি বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
বিজ্ঞাপন
এদিকে শিক্ষার্থীরা উদ্বেগে— ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ, ক্লাস কখন শুরু হবে কেউ জানে না। টালমাটাল পরিস্থিতি সামাল দিতে শিক্ষকরা স্পষ্ট কাঠামো ও আইনি ভিত্তি পরিষ্কার করার জন্য সরকারের কাছে জরুরি সমাধানের দাবি জানিয়েছেন।








