চবিতে মদ তৈরির গোপন কারখানা, আটক ২

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) জীববিজ্ঞান অনুষদের পেছনে অবস্থিত গ্রীনহাউস এলাকার একটি নির্জন টিনঘরে দীর্ঘদিন ধরে চালানো গোপন বাংলা মদ তৈরির কারখানা উন্মোচন হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রক্টরিয়াল বডি সোমবার (১ ডিসেম্বর) রাত ১২টা ২০ মিনিটে অভিযান চালিয়ে কারখানার মূলহোতা সুমন চাকমা ও তার সহযোগী এক নারীকে আটক করে।
অভিযানটি পরিচালিত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ কাননের নেতৃত্বে আর এতে চবি পুলিশ ফাঁড়ির ইনস্পেক্টর মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে পুলিশ দল সহযোগিতা করে।
বিজ্ঞাপন
অভিযান শেষে থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নানা আলামত জব্দ করে এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন এবং অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে সুমন চাকমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাকে আদালতে পাঠায়।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লিজ নেওয়া বখতিয়ার ফকিরের জমিতে প্রায় ১৫ বছর ধরে বসবাস করে আসছিলেন সুমন চাকমা। টিনের ওই বাড়ির পেছনের দীর্ঘ বারান্দাজুড়ে তিনি গোপনে মদ উৎপাদন করতেন।
মদ তৈরির সরঞ্জাম লুকাতে বাড়িটির গোয়ালঘর ও পেছনের অংশ ব্যবহার করা হতো। আটক নারীর পরিচয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সুমন চাকমা জানান, তিনি তার স্ত্রী নন, যা তদন্তকারী দলের সন্দেহ আরও বাড়িয়ে তোলে।
বিজ্ঞাপন
সহকারী প্রক্টর নুরুল হামিদ কানন জানান, জীববিজ্ঞান অনুষদসংলগ্ন পুকুরপাড়ে বাইরের লোকজনের ঘনঘন আনাগোনা এবং কয়েকজন শিক্ষার্থীর নিয়মিত অবস্থান নিরাপত্তাকর্মীদের নজরে আসে।
সন্দেহজনক এসব গতিবিধির পরিপ্রেক্ষিতে কয়েক সপ্তাহ ধরে গোপন নজরদারি চালানো হয়। নির্ভুল তথ্য নিশ্চিত করার পর রাতের অভিযান পরিচালিত হয়।
বিজ্ঞাপন
অভিযানে প্রায় ৪০ লিটার সদ্য প্রস্তুত বাংলা মদ, পাঁচ লিটারের একটি ধাতব হাঁড়ি, উৎপাদনের কাঁচামাল, বিভিন্ন বোতল, এবং মদ বিক্রির হিসাব-খাতা উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া বাড়ির বিভিন্ন স্থানে পাওয়া যায় বন্যপ্রাণী শিকারের দেশীয় বন্দুক ও ধারালো অস্ত্রের অংশবিশেষ।
বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা সূত্রে জানা যায়, সুমন চাকমা নিয়মিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জঙ্গল এলাকায় বন্য শুকর, হরিণ, বন্য মুরগিসহ বিভিন্ন প্রাণী শিকার করতেন এবং তাদের মাংস বিক্রি করতেন।
বিজ্ঞাপন
এমনকি অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী নিয়মিত তার কাছ থেকে মদ কিনতেন। গ্রীনহাউস এলাকা হওয়ায় দিনের বেলায় তেমন লোকসমাগম না থাকায় চুপিসারে মদ বিক্রি ও সরবরাহ করা সহজ ছিল বলে ধারণা করছে প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, লিজকৃত জমিতে অবৈধ মদ উৎপাদন ও বন্যপ্রাণী শিকারের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় জমির লিজ বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পাশাপাশি অনুমতিহীনভাবে গাছ কাটার দায়ে লিজগ্রহীতাকেও জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
চবি প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বজায় রাখা ও অবৈধ কার্যক্রম নির্মূলের জন্য চলমান নজরদারি আরও জোরদার করা হবে। গ্রীনহাউসের আড়ালে বহুদিন ধরে চলা অবৈধ মদের কারখানা উন্মোচনকে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্জন হিসেবে বিবেচনা করছেন।








