Logo

গেট বন্ধ থাকায় বের হতে পারেননি, অভিযোগ স্বজনদের

profile picture
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৪ অক্টোবর, ২০২৫, ২০:০৬
2Shares
গেট বন্ধ থাকায় বের হতে পারেননি, অভিযোগ স্বজনদের
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে গেছে একটি গার্মেন্টস কারখানা ও পাশের কেমিক্যাল গোডাউন। এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, নিখোঁজ রয়েছেন আরও অনেকে। ভস্মীভূত ভবনের সামনে স্বজনদের আহাজারি, চারদিকে কান্নার শব্দে এক করুণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে গোটা এলাকায়।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, ভবনটি ঘিরে রেখেছেন সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। নিরাপত্তার কারণে কাউকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। চারপাশে উৎসুক জনতার ভিড়, আর স্বজনদের উৎকণ্ঠা চেপে রাখা দায়। বিকেল ৫টার দিকে ভবনের ভেতরে সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে দেখা যায়, এতে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে উপস্থিত জনতার মধ্যে। অনেকেই ধারণা করেন, হয়তো আরও মরদেহ উদ্ধার হয়েছে।

এই গার্মেন্টসেই কাজ করতেন ২০ বছর বয়সী রবিউল্লাহ। সকাল থেকে তার কোনো খোঁজ মিলছে না। ছেলের খোঁজে ছুটছেন মা। একবার সেনাবাহিনীর কাছে, আবার ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের কাছে।

কণ্ঠ কাঁপা অবস্থায় তিনি বলেন, “ছেলেটা আমার বেঁচে আছে তো?” তারপর চোখ মুছে তাকিয়ে থাকেন আগুনে পোড়া ভবনের দিকে।

বিজ্ঞাপন

রবিউল্লার বড় ভাই হাবিবুল্লাহ জানান, “আমার ভাই এই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করতেন। আগুন লাগার পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। যার কাছে যাচ্ছি কেউ কিছু বলতে পারছে না। সকালে আগুন লাগার পর নিচের গেট বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। তাই ৩য় ও ৪র্থ তলা থেকে কেউ বের হতে পারেনি। ওই দুই ফ্লোরে প্রায় ১০০ জন ছিলেন।”

তার এই অভিযোগের সঙ্গে মিল পেয়েছেন আরও অনেক শ্রমিকের স্বজন। তারা দাবি করেন, আগুন লাগার সময় ভেতরে অনেক শ্রমিক আটকা পড়েছিলেন। কেউ কেউ কাচ ভেঙে প্রাণে বাঁচলেও, বেশিরভাগই আর বের হতে পারেননি।

বিজ্ঞাপন

ঘটনাস্থলে থাকা নিপা নামে এক নারী জানান, তার বোনের ছেলে রবিন কারখানার তিন তলায় কাজ করতেন। তিনি বলেন, “আগুন লাগার পর থেকে ওর কোনো খবর নেই। বারবার ফোন দিয়েছি, কোনো সাড়া পাইনি। এখন জানি না, ও বেঁচে আছে কি না।”

একইভাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভাগনি মাহিরার ছবি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মো. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমার ভাগনি মাহিরা তিন তলায় কাজ করতেন। আগুন লাগার পর থেকে ওর কোনো খবর নেই। চারদিকে খুঁজেছি, হাসপাতালেও খোঁজ নিয়েছি, কোথাও পাইনি।”

বিজ্ঞাপন

অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, “এখন পর্যন্ত আমরা ৯ জনের মরদেহ পেয়েছি। ধারণা করছি, কেমিক্যাল গোডাউনে আগুনের সময় যে বিস্ফোরণ হয়, সেখান থেকে নিঃসৃত বিষাক্ত গ্যাসেই তাদের মৃত্যু হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ভবনটি এখনো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং ভেতরে আগুন জ্বলছে। কেমিক্যাল পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় না হওয়া পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান স্থগিত রয়েছে। সবাইকে অনুরোধ করব, অন্তত ৩০০ গজ দূরে নিরাপদে থাকুন। ভেতরে কেউ থাকলে কেমিক্যাল নিষ্ক্রিয় করার পর সার্চিং শুরু করা হবে।”

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আগুনের উৎস এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি এবং উদ্ধার কাজও পুরোপুরি শেষ হয়নি। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জেবি/এএস
Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD