হাসিনার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি দিয়েছেন আসিফ মাহমুদ

রাজধানীর চানখারপুলে গত বছরের ৫ আগস্ট ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর জবানবন্দি দিয়েছেন স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বিজ্ঞাপন
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে তিনি জানান, ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক হিসেবে তিনি আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। আন্দোলনের সময় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে আন্দোলন প্রত্যাহারের চাপ এবং প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছিলেন বলেও দাবি করেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ বলেন, “চানখারপুলে আমার সামনেই দুজনকে পুলিশের গুলিতে নিহত হতে দেখি। পরে জানতে পারি, সেদিন সেখানে ছয়জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ চাইনিজ রাইফেল ও শর্টগান ব্যবহার করেছিল। ওইদিন দুপুর দেড়টার দিকে খবর পাই, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন।”
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, “২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান পর্যন্ত সরকারের নিপীড়নের ধারাবাহিকতা চলছিল। আমাদের ডিবি কার্যালয়ে আটক করে বলা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে আমাদের আনা হয়েছে। আন্দোলন না থামালে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়েছিল।”
এই হত্যাকাণ্ডে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সদস্যদের দায়ী করেন আসিফ মাহমুদ।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসিফ মাহমুদের অবশিষ্ট জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আগামী ১৬ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ নির্ধারণ করেন।
বিজ্ঞাপন
প্রসিকিউশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামীমসহ অন্যরা। আসামিপক্ষের আইনজীবীরাও ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ওই হত্যাকাণ্ডে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গত ১৪ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে। এর মধ্যে চারজন পলাতক এবং চারজন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মামলা সাম্প্রতিক সময়ে দায়ের হওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের সবচেয়ে আলোচিত মামলাগুলোর একটি, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে নতুন অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে।