পাইলট হওয়ার স্বপ্ন কেড়ে নিল জুলাই আন্দোলন

সাত বছর বয়সী বাসিত খান মুসা, সে এক সময় পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন, এখন হুইলচেয়ারে বসে জীবন কাটাচ্ছেন। ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়, ১৯ জুলাই রাজধানীর রামপুরায় পুলিশের ছোড়া গুলিতে মাথায় আঘাত পান মুসা। একই ঘটনায় আহত হন তার দাদি মায়া ইসলাম, তিনি পরবর্তীতে প্রাণ হারান।
বিজ্ঞাপন
ঘটনার পর মুসার জীবন পুরোপুরি বদলে গেছে। বর্তমানে সে স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে বা খাবার খেতে পারে না। তার ডানপাশ প্যারালাইজড, মাথার একপাশে খুলি নেই এবং কৃত্রিম স্কাল্প বসানো হয়েছে। নড়াচড়া করতে পারে না এবং হাঁটাচলাও করতে পারছে না। তার চিকিৎসা সিঙ্গাপুরে শুরু হলেও এখনো চলমান।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ হুইলচেয়ারে বসানো মুসার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। মুসার হুইলচেয়ারের দুই পাশে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। সত্তরোত্তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন মুসার বাবা মোস্তাফিজুর রহমান।
বিজ্ঞাপন
সাক্ষ্যগ্রহণের সময় মুসা হুইলচেয়ার থেকে সোফায় শোয়ানো হয় এবং এনজি টিউবের মাধ্যমে তরল খাবার খাওয়ানো হয়।
মুসার বাবা বলেন, ‘আমার একটাই ছেলে। তার স্বপ্ন ছিল প্লেন চালানো। কিন্তু পুলিশের গুলিতে সব ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন তার কথা বলা বা স্বাভাবিক খাবার খাওয়া সম্ভব নয়।’
মোস্তাফিজুর রহমান আদালতে জানান, ১৯ জুলাই মুসার মাথায় গুলি লাগে। তিনি ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন। তিনি বলেন, ‘আমার মা নিহত হয়েছেন, ছেলেটার উন্নত চিকিৎসা যেন হয় এবং যারা দায়ী তাদের কঠোর শাস্তি হোক।’
বিজ্ঞাপন
প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম বলেন, ‘সাক্ষীর মাধ্যমে উঠে এসেছে, ১৯ জুলাই সহ পরবর্তী কয়েকদিন ঢাকা শহরে আন্দোলন চলাকালীন পুলিশ ও সরকারের বাহিনী কীভাবে নির্বিচারে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে। মুসা ও তার মায়ের এই ঘটনা মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ হিসেবে আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে।’
এই মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণের পর পুলিশ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জেরা করেন। মামলার চার পলাতক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। আদালত এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে।
বিজ্ঞাপন
মুসার স্বপ্ন ভেঙে গেলেও তার পরিবার আশা করছে, উন্নত চিকিৎসা ও আইনের মাধ্যমে ন্যায় বিচার নিশ্চিত হবে।








