গুম ও নির্যাতন মামলায় ট্রাইব্যুনালে হাজির ১০ সেনা কর্মকর্তা

টানা ১৬ বছরের শাসনামলে টিএফআই সেলে সংঘটিত গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় সেনাবাহিনীর ১০ কর্মকর্তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে। মামলার মোট আসামি ১৭ জন, যার মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সাবেক সরকারি কর্মকর্তা পলাতক রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা ২৩ মিনিটে ঢাকার সেনানিবাসের বিশেষ কারাগার থেকে ‘বাংলাদেশ জেল-প্রিজন ভ্যান’ লেখা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে করে ১০ সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
১০ সেনা কর্মকর্তা হলেন— ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক, র্যাব), ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, কর্নেল কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), কর্নেল মো. মশিউর রহমান (সাবেক পরিচালক, র্যাব গোয়েন্দা শাখা), লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
বিজ্ঞাপন
এ মামলার পলাতক আসামির তালিকায় রয়েছেন— সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন এবং র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ।
আজ বেলা ১১টার পর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ মামলার অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি শুরু করবে। প্রসিকিউশনের যুক্তি তুলে ধরার পর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা বক্তব্য দেবেন। পলাতক আসামিদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নেবেন।
সেনা কর্মকর্তাদের হাজিরাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট ও ট্রাইব্যুনাল এলাকাজুড়ে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা। মূল ফটক ও আশপাশে পুলিশ, সেনা সদস্য, র্যাব, বিজিবি ও এপিবিএন মোতায়েন থাকে। সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সদস্যদের তৎপরতাও ছিল চোখে পড়ার মতো।
বিজ্ঞাপন
২৩ নভেম্বর শুনানির তারিখ ৩ ডিসেম্বর ঠিক করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিন ১০ কর্মকর্তাকে সশরীরে হাজির করা হয়; যদিও তাদের আইনজীবীরা ভার্চুয়াল হাজিরার আবেদন করেছিলেন।
ট্রাইব্যুনাল স্পষ্ট জানায়— “আইন সবার জন্য সমান।”
বিজ্ঞাপন
গুমের এ মামলায় পলাতক শেখ হাসিনার পক্ষে লড়তে আগ্রহ প্রকাশ করলেও পরে মৌখিকভাবে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেন আইনজীবী জেডআই খান পান্না। ২২ অক্টোবর প্রথমবার সেনা হেফাজতে থাকা ১০ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয় এবং গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
পলাতক আসামিদের হাজিরার জন্য জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। উপস্থিত না হওয়ায় নিয়োগ দেওয়া হয় স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী। ৮ অক্টোবর প্রসিকিউশন চার্জশিট দাখিল করলে ট্রাইব্যুনাল তা আমলে নিয়ে সবার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
গুরুতর অভিযোগে দীর্ঘমেয়াদী তদন্তের পর আনুষ্ঠানিক বিচারিক প্রক্রিয়া নতুন গতি পেয়েছে। আজকের শুনানির পর মামলার অগ্রগতি নিয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত দেবে ট্রাইব্যুনাল।








