‘কলরবের মাহফুজের অজানা কথা’
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭:০২ পূর্বাহ্ন, ১লা অক্টোবর ২০২২
মাহফুজুল আলম, বাংলাদেশের ইসলামী সঙ্গীত জগতের একজন কর্মঠ ও বিপুল শ্রোতা প্রিয় নাশীদ শিল্পী ছিলেন। তিনি একাধারে সাউন্ড ডিজাইনার, গীতিকার এবং শিল্পী ছিলেন। ইসলামী সঙ্গীতের অসংখ্য শ্রুতিমধুর সঙ্গীত তিনি গেয়েছেন এবং সাউন্ড ডিজাইন করেছেন।
বাংলাদেশের সর্বাধিক জনপ্রিয় ইসলামী সঙ্গীত চ্যানেল হলিটিউনে চারশর বেশি গান কম্পোজ করেছেন তরুণ এ শিল্পী। এছাড়া প্রায় দুই শতাধিক গান তিনি নিজেও গেয়েছেন। শ্রোতাদের কাছে মাহফুজুল আলমের সঙ্গীতের আলাদা কদর ছিলো সব সময়। ইসলামি সঙ্গীত নিয়ে কাজ করতেন কলরবে। হঠাৎ কয়েকদিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। ২০২১ সালের ২০ জুলাই সকালে জ্বরের মাত্রা বেশি হলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল আনুমানিক ২৩ বছর।
তার ইন্তেকালে ইসলামী সঙ্গীত জগতের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে বর্তমানে মাহফুজুল আলমের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে তার ছোটভাই মাহবুবুল আলম ইসলামী সঙ্গীত নিয়ে কাজ করছেন। এরমধ্যে মাহফুজের স্মৃতি নিয়ে গাওয়া সঙ্গীত ও ‘আমার ভাই’ বেশ সাড়া ফেলেছে। মাহফুজের মাধ্যমেই ইসলামী সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পা রাখেন তার ভাই।
এই শিল্পী জানালেন তার নাশীদ শিল্পী হয়ে উঠার কথা, কর্মপরিকল্পনার কথা, মাহফুজের স্মৃতি নিয়ে অনেক অজানা তথ্য জানান জাতীয় দৈনিক জনবাণীকে।
তার সঙ্গে একান্ত আলাপ করেছেন জনবানীর রিপোর্টার মুহাম্মদ আলী
জনবাণী: ইসলামী সাংস্কৃতিক অঙ্গনের শুরুটা কিভাবে?
মাহবুবুল আলম: বাবার মৃত্যুর পরে যখন মাহফুজ ভাইয়া প্রিয় বাবা গানটি গেয়েছিলো এর কিছুদিন পরে আমিও বাবার স্মরণে প্রিয় বাবার গানটি কভার করেছিলাম। গানটি রিলিজ হওয়ার পরে ভাইয়া অনেক উৎসাহ দিয়ে বলেছিলো যে তুই যদি আরেকটু সময় ও শ্রম দিস তাহলে আমার মতই হতে পারবি ইনশাআল্লাহ। ভাইয়ার উৎসাহ পেয়ে তখন থেকেই ইচ্ছে ছিলো যে মাঝে মাঝে কিছু গান করবো কিন্তু কোন ভাবেই সময় হচ্ছিলোনা, কিছুদিন গান করা হয়নি হঠাৎ ভাইয়ার আকস্মিক মৃত্যুর পরে ভাইয়ার স্মরণে গানের মাধ্যমে আমার অনুভুতি গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করি এর পর থেকেই সবার অনুরোধে থেকে গেলাম গানের জগতে।
জনবাণী আপনি কোথায় পড়ালেখা করেছেন, বর্তমানে কি করছেন এবং কোথায় থাকেন?
মাহবুবুল আলম : ইসলামাবাদ মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করেছি (২০১৪ সালে )। মাধবদি মহাবিদ্যালয় থেকে ইন্টার পাশ করেছি (২০১৬ সালে )। বর্তমানে বাংলাদেশ ইসলামি ইউনিভার্সিটিতে ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে অনার্স করছি। পাশাপাশি ফার্নিচারের ব্যবসা করছি, সাভারে থাকি।
জনবাণী: আপনার কয়টি নাশীদ রিলিজ হয়েছে, সেগুলোর গীতিকার, সুরকার, কম্পোজার, ডিরেক্টর কারা ছিলো এবং শ্রোতাদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
মাহবুবুল আলম : আমার মোট ৭টি নাশীদ রিলিজ হয়েছে, গীতিকার হোসাইন নুর ভাই, যুবায়ের সিফাত ভাই। সুরকার এইচ আহমাদ। কম্পোজার মাহফুজ ভাই, তানভির হাসান। ডিরেক্টর শাহিন ভাই, তানভির হাসান। আলহামদুলিল্লাহ শ্রোতাদের কাছ থেকে অনেক সারা পেয়েছি যা আমার একটি গানই ১৭ লাখ ভিউ অতিক্রম করেছে।
জনবাণী ফ্যামিলির থেকে কেমন সাপোর্ট পাচ্ছেন?
মাহবুবুল আলম : আলহামদুলিল্লাহ ফ্যামিলির সবাই সব দিক থেকে অনেক সাপোর্ট করছে। ইনশাআল্লাহ অতি শীঘ্রই আমার কণ্ঠে প্রবাসী ভাইদের নিয়ে একটি নতুন নাশিদ আসছে।
জনবাণী: মাহফুজের মৃত্যু কিভাবে হয়েছিলো সংক্ষিপ্ত ভাবে একটু বলুন...
মাহবুবুল আলম : প্রায় একসপ্তাহ জ্বরে আক্রান্ত ছিলো, হসপিটালে নিয়ে গেলে ডাক্তার জানায় ভাইয়ার ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে, পাশাপাশি ডায়াবেটিস ছিলো যেটা ভাইয়া আগে জানতেন না। যার দরুন রক্তের প্লাটিনাম কমে গিয়েছিলো, যেদিন আমরা এসব জানতে পারি সেদিন বরপা ইউএস বাংলা হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার সময় ভাইয়া এম্বুলেন্সে কালেমা পরতেছিলো আর বলতেছিলো ভাইয়াকে আইসিইউতে নিতে। তখন আইসিইউতে নিয়ে যাওয়ার ১০মিনিট পরেই ভাইয়া মারা যায়।
জনবাণী : মাহফুজকে নিয়ে বিশেষ কোন স্মৃতি মনে আছে?
মাহবুবুল আলম : ছোট বেলা থেকেই দুইভাই দুই বন্ধুর মত ছিলাম। ভাইয়ার সাথে কাটানো প্রতিটি সময়ই স্মৃতি হয়ে আছে, এখন গান করতেছি তাই বেশি মনে পরে প্রিয় বাবা গানের রেকর্ডের সময়ের কথা।
জনবাণী : আপনারা ভাইবোন কতজন, এবং এদেরমধ্যে আপনি কততম?
মাহবুবুল আলম : আমরা ৪ ভাই ২ বোন, ভাই বোনের মধ্যে আমি ৫ নাম্বার।
জনবাণী : বর্তমান সমাজে অপসংস্কৃতি রুখতে ইসলামী সাংস্কৃতির প্রয়োজনীয়তা কতটুকু মনে করেন?
মাহবুবুল আলম : বর্তমানে সমাজে অপসংস্কৃতি রুখতে ইসলামী সংস্কৃতির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সমাজে যত অপসংস্কৃতি ছড়িয়ে পরেছে তা যখন আমরা ইসলামিক গানের মাধ্যমে তুলে ধরি এবং তা থেকে পরিত্রানের উপায় সম্পর্কে আমরা বলি, যেহেতু তা সুরে সুরে তুলে ধরা হয় তা মানুষের বিবেককে জাগিয়ে তুলে।
জনবাণী : মাহফুজকে নিয়ে কিছু বলুন?
মাহবুবুল আলম : আমি মনে করি ইসলামিক অঙ্গনে মাহফুজ ভাইয়ার অবদান অনেক, তার মনকাড়া সুর যেমন মানুষকে আকৃষ্ট করেছে তেমনিভাবে তার কোমল আচরনের জন্য সবার মনে জায়গা করে নিতে পেরেছে। আমাদের ফ্যামিলিতেও বাবা মায়ের পরে মাহফুজ ভাইয়ার অবদান সব থেকে বেশি। মাহফুজ ভাইয়া শুধু যে পরিবারের সবার জন্য ঝাপিয়ে পরতেন তা নয় বরং তিনি যে কারো বিপদে তার সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করতেন।
জনবাণী : আপনার ভক্তদের নিয়ে কিছু বলেন?
মাহবুবুল আলম : তারা আমার পাশে যেভাবে থাকছে সেভাবেই যেন আমার সাথে সবসময় থাকে এবং তাদের কাছে আমি দোয়া চাই যেন সবসময় তাদের মনের মত নাশীদ উপহার দিতে পারি, এবং মাহফুজ ভাইয়ার জন্য সবার দোয়া চাই।
জনবাণী : আপনার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
মাহবুবুল আলম : আমি আমার কাজগুলোকে সারা বিশ্বে তুলে ধরতে চাই, এবং ইসলামি সংস্কৃতিকে সবার মাঝে তুলে ধরে আরো সামনে এগিয়ে নিতে চাই।
জেবি/ আরএইচ/