চিনির বাজারে আগুন!
নিজস্ব প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯:১৭ অপরাহ্ন, ২২শে অক্টোবর ২০২২
চাল-আটাসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম যখন অস্থির হয়ে উঠেছে দেশের চিনির বাজারে অস্থিরতা বাড়লো । সাধারণত প্রতিবছর রোজার মাসে চিনির দাম বাড়লেও এবার বাড়ল অফ সিজনে। কারণ রোজার বাইরে সারা বছর চিনির চাহিদা তেমন বাড়ে না, তেমনি দামও বাড়ে না। অথচ গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দেশের বাজারে প্রতিকেজি চিনি ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
যা স্মরণকালের সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সরকার দাম ঠিক করে দেওয়ার পরও তিন থেকে চার দিনের ভেতরে চিনির দাম ফের কেজিপ্রতি ১৫-২০ টাকা বাড়ায় ক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (২২ অক্টোবর) চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে সকাল থেকে বিশেষ অভিযানে নামছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
রাজধানীর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলেন, তিন থেকে চার দিন আগে চিনি ৯৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। সেটা এখন ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। বস্তা প্রতি চিনির দাম এক হাজার ৫০ টাকা বেড়েছে।
মিরপুরের শেওড়াপাড়ার খুচরা চিনি বিক্রেতা মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, তিনদিন আগেও ৫০ কেজির চিনির বস্তা কিনেছি ৪২৫০ টাকায়, সেটা আজ ৫৩০০ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। অর্থাৎ বস্তাপ্রতি ১০৫০ টাকা বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ১০৬ টাকা করে কিনে ১১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এ অস্বাভাবিক বাজারে পণ্য কিনতেও ভয় লাগে। বাজার দর কমে গেলে লসে বিক্রি করতে হবে। তবে এর আগে কখনো চিনির দাম ১০০ টাকার বেশি ওঠেনি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে চলতি মাসের শুরুতে খুচরা বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হয় ৮৪ টাকা করে। স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে সরকার গত ৬ অক্টোবর কেজিতে দাম ছয় টাকা বাড়িয়ে দেয়। এতে খোলা চিনির দাম হয় ৯০ টাকা। যা বর্তমানে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দাম বাড়িয়ে নির্দিষ্ট করার পরও কেজিপ্রতি চিনির দর ২০ টাকা বেড়ে যাওয়ায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। বাজারে সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এ ব্যাপারে বাসাবো এলাকার বাসিন্দা রিদয় সাহেব জনবাণীকে বলেন, এক সপ্তাহ না যেতেই চিনির দাম কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়ে যাওয়াটা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছিনা। সরকার দু’সপ্তাহ আগেই ৬ টাকা দাম বাড়িয়ে দেওয়ার পর মনে করেছিলাম চিনির দাম আর বাড়বে না। অথচ আজ কেজিতে ২০ টাকা বেড়েছে। সরকারের নজরদারির অভাবে এমনটি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাজার নিয়ে সরকারের কোনো মনিটরিং নেই। মনিটরিংয়ের অভাবে ভোক্তারা ক্ষতির মধ্যে পড়ছেন। ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষায় মনিটরিংয়ের কোনো বিকল্প নেই।
হঠাৎ চিনির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে চায়ের দোকানে। দোকানিরা এক কাপ চা ৫ থেকে ৬ টাকা বিক্রি করলেও চিনির দাম বাড়ায় সেটি ৮ থেকে ১০ টাকার বিক্রি করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে চা বিক্রেতা আরিফ বলেন, ৫০-৬০ টাকার চিনি ১১০টাকা হয়েছে। শুধু তাই নয় দুধ, পাতা ও গ্যাসের দামও বেড়েছে। সুতরাং প্রতিকাপ চায়ের দাম বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।
তবে চিনির দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তাদের স্বার্থের কথা চিন্তা করে শনিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। বিশেষ করে চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান-মিল ও পাইকারী বাজারে এসব অভিযান পরিচালনা করা হবে। অভিযানে নেতৃত্ব দেবে ভোক্তা অধিদপ্তরের একাধিক টিম।
আরএক্স/