হারিয়ে যাচ্ছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী বাঁশ ও বেত শিল্প
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন, ৩১শে অক্টোবর ২০২২
অতীতে একটা সময় ছিল ঘর-গৃহস্থালির প্রায় সব কাজ করতে ব্যবহার করা হতো বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র। সময়ের বিবর্তনে এখন আর খুব একটা চোখে পড়ে না বাঁশ আর বেতের এ মূল্যবান জিনিসপত্র । আগে বাজারে গেলেই চোখে পড়ত বাঁশ ও বেত শিল্পের অনেক রকম জিনিস পত্র।
বাঁশ আর বেতকেই জীবিকার প্রধান বাহক হিসাবে যারা আঁকড়ে রেখেছেন তার বর্তমান ভাল নেই। জীবন জীবিকার তাগিদে বাপ-দাদার এই পেশাকে ধরে রেখেছে এখনও কিছু সংখ্যক পরিবার। তবে অনেকেই এ পেশা ছেড়ে এখন অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছেন।
এলাকায় এক সময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থলি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেঁত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করতো। বাসা-বাড়ি, অফিস-আদালত সবখানেই ব্যবহার করা হতো বাঁশ ও বেতের তৈরি আসবাবপত্র। বর্তমানে সল্প দামে হাতের নাগালে প্লাস্টিক সামগ্রী পাওয়ায় বেঁত ও বাঁশ শিল্পের চাহিদা আর নেই বললেই চলে। আবার দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে এ শিল্পের কাঁচামাল বাঁশ ও বেঁত। আবার আগের মতো বাড়ীর আশে পাশে বাঁশ ও বেঁত গাছ রাখছে না কেউ। অনেকে বাঁশ ও বেঁত গাছ কেটে বিভিন্ন চাষাবাদসহ ঘর-বাড়ী তৈরী করছে। ফলে বাজারগুলো দখল করেছে প্লাাস্টিক, এলুম্যানিয়াম, স্টিলসহ বিভিন্ন দ্রব্য। তাই যেখানে সেখানে দেখা যায় না আর বাঁশ ও বেত ঝাঁড়।
তবে এখনো গ্রামীণ উৎসব ও মেলাগুলোতে বাঁশ ও বেতের তৈরী খোল, চাটাই, খোলুই, ধামা, টোনা, পালল্টা, মোড়া,দোলনা, বুক সেল্ফ কদাচিৎ চোখে পড়ে। তবে যতই দিন যাচ্ছে ততই কমে যাচ্ছে এই হস্তশিল্পের চাহিদা।
কেন্দুয়ার চিরাং বাজারে বাঁশ-বেত শিল্প বিক্রি করতে আসা সুশীল চন্দ্র রায় ও মজনু মিয়া বলেন, বেতের কাজে এখন দুর্দিন, আমরা সহ হাতে গোনা কিছু সংখ্যক পরিবার বেতশিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছেন। অনেকে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় গেলেও, পূর্বপুরুষের হাতেখড়ি এই পেশাকে কিছুতেই ছাড়তে পারেননি তারা। বাপ দাদার এ পেশার প্রতি মায়া,সে মায়া কাটিয়ে অন্য কিছু করতেও পারিনা।
প্রতিদিন তাদের তৈরি কিছু পণ্য কেন্দুয়া পৌরসভা, চিরাংবাজার,রোয়াইল বাজার,রামপুর বাজার,বৈখেরহাটি বাজার সহ গ্রাম-গঞ্জে নিয়ে ফেরি করলে, কিছু সৌখিন মানুষ আছে তাদের পণ্য কিনেন। বেলা শেষে যা বিক্রি হয় তা দিয়ে তাদের জীবন-জীবিকা চলে। গ্রামীণ জনপদের জনপ্রিয় এ পন্য আর পেশাকে সুরক্ষার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাই সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। এতে কারো ঐতিহ্যবাহী এই বেতশিল্প ও শিল্প সংশ্লিষ্ট মানুষজন ফিরে পাবে হৃত গৌরব এবং সমৃদ্ধ জীবন।
আরএক্স/