হঠাৎ যে কারণে নদীতে বেড়েছে পাঙ্গাস
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, ৫ই নভেম্বর ২০২২
বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী ও বরগুনার বেশ কিছু এলাকার নদীতে হঠাৎ বড় বড় সাইজের পাঙ্গাস মাছ ধরা পড়ছে জেলেদের জালে। গত ছয় দিনে যত পাঙ্গাস ধরা পড়েছে তা সাধারণত দেখা যায় না।
বরিশালের মাছের আড়তদাররা জানান, গত ২৯ অক্টোবর থেকে শুরু করে তিনদিনে প্রায় সাড়ে ৬০০ মণ পাঙ্গাস বরিশালের আড়তগুলোতে এসেছে। যা গত বছর এই সময়ে এর অর্ধেকেরও কম ছিল। সাধারণত শীতের শুরু ও আর শেষের দিকে নদীতে পাঙ্গাস ধরা পড়ে। কিন্তু এতো পাঙ্গাস এভাবে কখনও আসতে দেখেননি তারা। আর ২৯ অক্টোবরই প্রায় তিনশ মণ পাঙ্গাস এসেছে বরিশালের আড়তে।
বাংলাদেশের সাধারণত নদী, বিল বা বন্যার পানি জমে এমন এলাকায় প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে ওঠা পাঙ্গাস পাওয়া যায়। যদিও বাংলাদেশের বাজারে নদীর পাঙ্গাসের তুলনায় চাষ করা পাঙ্গাসই বেশি ও অনেক সস্তা দামে পাওয়া যায়। একটি ১০-১২ কেজি ওজনের নদীর পাঙ্গাস মাছ যেখানে ৮০০-১০০০ টাকার মতো প্রতি কেজিতে বিক্রি হয়। সেখানে চাষের মাছের কেজি ওজনভেদে ১৫০-২৫০ টাকার মতো দরে বিক্রি হয়।
সরকারের হিসেব অনুযায়ী ২০১৫-১৬ সালে নদীর পাঙ্গাস ধরা হয়েছিল ৩৬১ মেট্রিক টন এবং পর ক্রমাগত তা বেড়েছে। ২০২০-২১ সালে ৯২৬ মেট্রিক টন পাঙ্গাস পাওয়া গিয়েছিলো নদীতে।
বরিশাল মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক আনিছুর রহমান তালুকদার বলেন, এই মৌসুমে ওই অঞ্চলে কত পাঙ্গাস ধরা পড়েছে তার পূর্ণাঙ্গ তথ্য এখনও তাদের হাতে আসেনি। বিভিন্ন আড়ত ও মৎস্য অবতরণগুলো থেকে বলা হচ্ছে যে নদীর পাঙ্গাস এবার অনেক ধরা পড়েছে। তবে সংখ্যা বা পরিমাণ জানতে আমাদের আরও সময় লাগবে। দেশের মৎস্য আইন অনুসারে ১২ ইঞ্চির নীচে পাঙ্গাস মাছ ধরা নিষিদ্ধ।
ইলিশ মাছের প্রজনন মৌসুম উপলক্ষে গত ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় দু’মাস নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। দেশে বছরে দুবার এভাবে মাছ ধরা বন্ধ থাকে। ফলে এ সময়ে পাঙ্গাস মাছও অবাধ বিচরণের সুযোগ পায়। ইলিশ মাছ প্রজনন মৌসুমে ধরা বন্ধ করায় ইলিশ যেমন বাড়ছে, তেমনি আবার এর কারণে নদীতে পাঙ্গাসও বাড়ছে। এ কারণে এবার বেশ বড় বড় সাইজের পাঙ্গাস পাচ্ছে জেলেরা।
বরিশালের তেঁতুলিয়া, বিশখালী, আন্ধারমানিক, মেঘনা ও পদ্মা মেঘনার সংযোগস্থলই মূলত দেশীয় পাঙ্গাসের পোনার অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্র। তবে বাঁশের তৈরি চাঁইয়ের মাধ্যমে নির্বিচারে পাঙ্গাসের পোনা ধরাসহ বিভিন্ন কারণে নদী থেকে একসময় এ মাছটিই হারিয়ে যাচ্ছিলো। কারণ নদীতে জেলেরা বড় বড় চাঁই পেতে একধরনের খাবার দিত যাতে অসংখ্য পাঙ্গাসের পোনা আটকা পড়তো।
ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্যাহ বলছেন, কয়েক বছরের চেষ্টায় চাঁই আর বেহুন্দি জালের ব্যবহার পটুয়াখালীতে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ভোলাতেও এগুলো নিয়ে বেশ ভালো কাজ হয়েছে। ফলে ছোটো পাঙ্গাসগুলো নদীতে বড় হবার সুযোগ পাচ্ছে। আবার ইলিশ অভিযানের কারণে প্রচুর ইলিশ পোনা নদীতে বিচরণ করায় পাঙ্গাস পর্যাপ্ত খাবার পাচ্ছে। নদীতে বড় সাইজের এত পাঙ্গাস পাওয়ার ক্ষেত্রে এগুলোই প্রধান ভূমিকা রেখেছে।
সূত্র: বিবিসি
জেবি/ আরএইচ/