মেগা প্রকল্পে উপকৃত হবে দক্ষিণ এশিয়া: নৌ প্রতিমন্ত্রী
মো. রুবেল হোসেন
প্রকাশ: ০৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, ১২ই নভেম্বর ২০২২
নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অটুট থাকবে এবং আরও দৃঢ় হবে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছে।
২০১৫ সালে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশে একটি শক্তিশালী অর্থনীতি রয়েছে। গত এক দশকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা সেতু, রেল সংযোগ, পায়রা সমুদ্র বন্দর, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দর, কর্ণফুলী টানেল, বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু প্রকল্প, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনাল-৩ এবং আরও অনেক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। এসব প্রকল্প থেকে শুধু বাংলাদেশই লাভবান হবে না, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া উপকৃত হবে।
প্রতিমন্ত্রী শুক্রবার (১১ নভেম্বর) ভারতের উত্তরপ্রদেশের বারানাসির ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন সেন্টারে “পিএম গতি শক্তি মাল্টিমোডাল ওয়াটারওয়েজ সামিট-২০২২’এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ভারতের বস্ত্র, বাণিজ্য, শিল্প, কনজু্মার্স এফেয়ার্স, খাদ্য ও পাবলিক ডিস্ট্রবিউশন মন্ত্রী পিযুষ গোয়াল ভারতের বন্দর, নৌ ও জলপথ এবং আয়ুষ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সরবানান্দ সনোয়াল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগি আদিত্যনাথ ভারতের বন্দর, নৌ ও জলপথ সচিব ড. সঞ্জীব রঞ্জন, ভারতের ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটির চেয়ারম্যান সঞ্জয় বন্দোপাধ্যায়।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
ভারতের বন্দর, নৌ ও জলপথ এবং আয়ুর্বেদ, ইয়োগা ও ন্যাচারোপ্যাথি, ইউনানী, সিদ্ধাহ, হোমিওপ্যাথি (এ ওয়াই ইউ এস এইচ-আয়ুষ) মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ১১-১২ নভেম্বর ভারতের উত্তরপ্রদেশের ভারানাসিতে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ভারতের বন্দর, নৌ ও জলপথ এবং আয়ুষ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সরবানান্দ সনোয়ালের আমন্ত্রণে প্রতিমন্ত্রী সম্মেলনে অংশ নেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে বিশেষ করে ভারতের সাথে সম্ভাব্য সকল ক্ষেত্রে সংযুক্ত থাকতে চাই। সড়ক, নৌ ও আকাশ পথের মাধ্যমে আমাদের যোগাযোগ আরও শক্তিশালী হবে। আমরা বাংলাদেশ আঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প-১ গ্রহণ করেছি। এর মাধ্যমে আমরা সাব-রিজিওনে একটি নির্বিঘ্নে যোগাযোগ করতে পারব। সে লক্ষ্যে আমরা ট্রান্সশিপমেন্ট, ট্রানজিট এবং সব ধরনের পণ্য ও কার্গোর আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য শুরু করেছি।
১৯৭২ সালে প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট অ্যান্ড ট্রেড (পিআইডব্লিউটিটি) এর অধীনে বাংলাদেশ-ভারত নৌপথে বাণিজ্য শুরু হয়েছিল । পিআইডব্লিউটিটি’র অধীন ১০টি রুট চালু রয়েছে; যার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক ব্যবসা-বাণিজ্য সমৃদ্ধ হয়। ভবিষ্যতে বাণিজ্যের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য আমাদের নদী পথগুলোকে আরও কাজে লাগানোর অপেক্ষায় আছি। আমাদের দেশে অধিকাংশ এলাকায় রেলপথ রয়েছে। ভারতে বিশ্বের দীর্ঘতম রেলপথ রয়েছে। আমরা আমাদের সকল উৎস থেকে বেনিফিট পেতে চাই এবং সেজন্য দক্ষ এবং টেকসই যোগাযোগের পথ প্রশস্ত করতে চাই।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদানের কথা তিনি কৃতঞ্জচিত্তে স্মরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে আমাদের দেশের শরণার্থীদের সাহায্য ও সহযোগিতার জন্য ভারতের জনগণের প্রতি কৃতঞ্জতা জানান। তিনি ৩০ লাখ বাঙালি শহীদ ও ভারতের সৈনিকদের সর্বোচ্চ ত্যাগের কথা স্বীকার করেন।
বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান ভারতের ইনল্যান্ড ওয়াটারওয়েজ অথরিটির চেয়ারম্যান সঞ্জয় বন্দোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি ১২ নভেম্বর সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ ফোকাস অন রিজিওনাল কানেক্টিভিটি’ বিষয়ক বিশেষ অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন।
উল্লেখ্য, ভারত সরকার বিভিন্ন অংশীজনের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে “পিএম গতি শক্তি মাল্টিমোডাল ওয়াটারওয়েজ সামিট এর আয়োজন করেছে। সম্মেলনে ভারতের রেল, সড়ক, জলপথ, বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা, ভেসেলে অপারেটর, ই-কমার্স, ওয়্যারহাউজ কোম্পনি, কার্গো কোম্পানি, বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ অংশগ্রহণ করছেন।
বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার ক্ষেত্রকে সম্প্রসারিত করতে এ সম্মেলন সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও বিশেষ করে নৌপথ খাতে দু’দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি ও জোরদারের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ ও ভারতের চমৎকার অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক রয়েছে। নৌপথ ইকোসিস্টেমে সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর উল্লেখযোগ্য সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই এই প্লাটফর্মের সুবিধা নিতে এবং নৌপথ সেক্টরে তার সম্ভাবনা দেখাতে বাংলাদেশকে স্বাগত জানানো হয়েছে।