ভোলায় শীত মৌসুমের প্রথমে শুরু হয়েছে অতিথি পাখি নিধন!


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:২৮ অপরাহ্ন, ২২শে নভেম্বর ২০২২


ভোলায় শীত মৌসুমের প্রথমে শুরু হয়েছে অতিথি পাখি নিধন!
ছবি: জনবাণী

প্রতিবছরে সময় হলে অতিথি পাখিরা আমাদের দেশে চলে আসে। আবার কোন একটা সময় তাদের প্রয়োজন মিটিয়েই চলে যায় তাদের নিজের গন্তব্যে। অতিথি পাখিরা আমাদের দেশের প্রকৃতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশের পাশাপাশি আমাদের বন্য জাতীয় সম্পদ। আর এই সম্পদ রক্ষা করা আমাদের সকলের একান্ত দায়িত্ব।  কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত হলেও সত্য, ভোলায় শীত মৌসুমের প্রথমেই শুরু হয়েছে বিষ টোপে অতিথি পাখি নিধনের মহোৎসব। রাতের আঁধারে কিংবা দিনের বেলায় কিছু অসাধু চোরাশিকারী ফাঁদ পেতে এসব অতিথি পাখি শিকার করছে। 


২১ নভেম্বর (সোমবার) সকাল ১১টার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলার দৌলতখান উপজেলার জাহাঙ্গীর মিয়ারঘাট থেকে বস্তাবন্দি ৩০টি অতিথি পাখি উদ্ধার করেছেন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ও প্রাণী সম্পদ অধিদফতর। তবে এসময় কাউকে আটক করা যায়নি।


পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও’র) আদেশে বিষ দিয়ে অতিথি পাখি নিধনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য মৃত দুইটি হাঁস নমুনা হিসাবে প্রাণী সম্পদ অধিদফতরে প্রেরণ করা হয়।


এরপর স্থানীয় প্রতিনিধি প্যানেল মেয়র আমেনা খাতুন ও প্রাণী সম্পদের প্রতিনিধি জাফরসহ স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে দৌলতখানের বন বিভাগের বিট অফিসারের নিকট জব্দকৃত ২৮টি পরিযায়ী অতিথি পাখি ধ্বংসের জন্য বিট অফিসারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।


ভোলার মেঘনার চারদিকে জলরাশি। সুদূর হিমালয়, সাইবেরিয়াসহ শীতপ্রধান অঞ্চল থেকে হাজার হাজার মাইল পারি দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আমাদের দেশে এসেছে। শীতের উষ্ণ রোদেলা আলোতে ঝলমল করছে পানি। ভেসে আসছে কিচিরমিচির শব্দ। চরের কাছাকাছি যেতেই চোখে পড়ে বিভিন্ন রংঙ্গের পারিযায়ী অতিথি পাখি। একদল ডানা মেলে মুক্ত আকাশে উড়ছে। আর একদল চরের পানিতে ডুব দিয়ে খাবার খাচ্ছে। কেউ সাঁতার কাটছে। নয়ন জুড়ানো এক অপরূপ মনোমুগ্ধ দৃশ্য। যা দেখে চোখ ও মন জুড়িয়ে যায়। শিকারি বিষ প্রয়োগে ভাসতে থাকে অসংখ্য মৃত পাখি।


ভোলার দৌলতখানসহ মেঘনা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে চোখে পড়ে এ দৃশ্য। সামান্য টাকার লোভে বিষাক্ত টোপ দিয়ে পাখি শিকার করতে গিয়ে মারা পড়ছে শতশত পাখি। পরে জবাই করা জোড়া প্রতি বিক্রি হচ্ছে ৭শ থেকে ৮শ টাকায়। এভাবে নির্বিচারে পাখি শিকার করার ফলে পাখিদের আগমন যেমন কমে যাচ্ছে, তেমনি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসম্য। প্রাণনাশ ক্যান্সের হুমকিতে পরছে মানবকুল। সৌন্দর্য্য হারাচ্ছে মনমুগ্ধকর চরগুলো।


এছাড়া অতিথি পাখি শিকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় শিকারীদের দৌরাত্ম আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।


১৯৭৪ সালে বন্যপ্রাণী রক্ষা আইন ও ২০১২ সালে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে বলা হয়েছে পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক বছর জেল ও এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে অপরাধীর দুই বছরের জেল ও দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।


উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহফুজুল হাসনাইন জানান, শীতের শুরুতে একটি অসাধু চক্র বিষ দিয়ে নদীতে চিংড়ি মাছ এবং অতিথি পাখি শিকারের জন্য তৎপর হয়েছে এমন গোপন সংবাদের ভিতিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তবে বিষ দিয়ে নিধনকৃত চিংড়ি মাছ না পাওয়া গেলেও, বিষ দিয়ে নিধনকৃত অতিথি পাখি পাওয়া যায়। কিন্তু চক্রটি দ্রুতগামী নৌকাসহ ছিটকে পরে।


তিনি এ বিষয়ে বন অধিদফতর, প্রাণী সম্পদ এবং উপজেলা প্রসাশনের সহযোগী কামনা করেন এবং খুব দ্রুত এই চক্রটিকে যৌথ অভিযানের মাধ্যমে আটক করার আশ্বাস দেন।


ভোলা বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সহযোগীতায় আমরা এই অতিথি পাখি উদ্ধার করি। যাঁরা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আরএক্স/